ফেসবুকে ব্যস্ত থাকায় স্ত্রীকে খুন, আদালতে স্বামীর জবানবন্দি
Published: 9th, April 2025 GMT
মানিকগঞ্জে বিউটি গোস্বামী (৩৮) নামের এক গৃহবধূ তাঁর স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে গ্রেপ্তার অলোক রঞ্জন গোস্বামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, সন্তানদের সময় না দিয়ে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তিনি স্ত্রীকে গলা চেপে হত্যা করেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত শুক্রবার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের এগারোশ্রী এলাকায় মিতরা–বরুন্ডি সড়কের পাশের একটি বাঁশঝাড় থেকে বিউটি গোস্বামীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর স্বামী অলোক রঞ্জন গোস্বামী রাজধানী ঢাকার উত্তরায় একটি বায়িং হাউসে চাকরি করতেন। দুই শিশুসন্তান নিয়ে সপরিবার তাঁরা ঢাকার উত্তরায় থাকতেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তরা গ্রামে।
অলোক রঞ্জন জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী বিউটি অধিকাংশ সময় ফেসবুক, অনলাইন ব্যবসা ও লাইভ ভিডিও করে সময় কাটাতেন। এ কারণে দুই সন্তানকেও সময় দিতেন না। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহের কারণে তিন বছর ধরে তাঁরা আলাদা ঘরে ঘুমাতেন। ২ এপ্রিল তাঁদের মধ্যে আবারও ঝগড়া হয়। ওই দিন বিউটি রান্না করতে গেলে পেছন থেকে তাঁর মুখ ও গলা চেপে ধরেন অলোক। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে মেঝেতে পড়ে বিউটির মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে কার্টনে লাশটি ভরে রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন। পরদিন সন্ধ্যায় গ্রামের আত্মীয়স্বজনদের ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তির সহায়তায় একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করেন। এরপর উত্তরার বাসা থেকে এক সহযোগীকে নিয়ে মানিকগঞ্জের এগারোশ্রী এলাকায় কার্টনবন্দী লাশটি একটি বাঁশঝাড়ে ফেলে দেন।
এ ঘটনায় গত শনিবার অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন বিউটির বাবা। গত রোববার সকালে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকা থেকে অলোককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল দুপুরে তাঁকে মানিকগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ বলেন, আদালতের নির্দেশে অলোককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় তাঁর সহযোগী পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।