মানুষের হাতে গড়া দুই হাজার বছরের পুরোনো এক নিদর্শন। তবে কারা এটি নির্মাণ করেছিল, তা আজও এক রহস্য। এ ব্যাপারে কোনো লিখিত নথি নেই। প্রাচীন এই নিদর্শনটি এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এটিকে আবারও জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এর নাম দ্য অক্টাগন। এখানে মাটির ঢিবি রয়েছে, পুরো স্থানটি মাটির বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা।

উন্মুক্ত করার পর জায়গাটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ব্র্যান্ডন উইথরো। সে অভিজ্ঞতা নিয়ে বিবিসিতে একটি নিবন্ধ লিখেছেন তিনি।

উইথরো লিখেছেন, একজন গাইডের সাহায্য নিয়ে তিনি এবং আরও বেশ কয়েকজন পর্যটক ওই স্থানটি পরিদর্শনে যান। তাঁরা যখন ঘাসে ছেয়ে থাকা একটি মাটির ঢিবির ওপর দিয়ে হাঁটছিলেন, তখন শরতে ঝরে পড়া পাতাগুলো তাঁদের পায়ের নিচে পড়ে শব্দ করছিল। এরপর তাঁরা একটি বৃত্তাকার জায়গার প্রবেশপথে পৌঁছান। মাটির দেয়ালের বেষ্টনী দিয়ে বৃত্তাকারটি তৈরি করা হয়েছে।

হোপওয়েল সেরেমোনিয়াল আর্থওয়ার্কসের অংশ এটি। হোপওয়েল সেরেমোনিয়াল আর্থওয়ার্কস হলো মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলীয় ওহাইওজুড়ে বিস্তৃত হাতে তৈরি টিলার একটি বিশাল নেটওয়ার্ক।

দ্য অক্টাগন তৈরি হয়েছে দুই হাজার বছর আগে। সম্ভবত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষেরা শত শত মাইল দূর থেকে মাটির প্রাচীর বেষ্টিত স্থান দ্য অক্টাগনে আসতেন। আচার-অনুষ্ঠান ও উপাসনার অংশ হিসেবে তাঁরা সেখানে নিয়মিত জমায়েত করতেন।

সাংবাদিক ব্র্যান্ডন উইথরোর গাইডের নাম ছিল ব্র্যাড লেপার। তিনি ওহাইও হিস্ট্রি কানেকশনস ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ প্রোগ্রামের (ওএইচসি) প্রত্নতাত্ত্বিক। বৃত্তাকার স্থানটিকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ওই স্থানটিতে কোনো ধরনের শুদ্ধিকরণের জায়গা ছিল। উইথরো তখন ভেতরে তাকিয়ে দেখেন, সেখানে নিখুঁতভাবে সাজানো সবুজে ঘেরা একটি লন দেখা যাচ্ছে।

১৯১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অক্টাগনকে গলফ কোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তবে এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রাচীন ও রহস্যময় এ স্থানটিকে আবারও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

ওহাইওতে প্রাগৈতিহাসিক এসব মাটির কাজগুলো এখন হোপওয়েল কালচার হিসেবে পরিচিত। হোপওয়েল কালচার হলো নেটিভ আমেরিকান সমাজের একটি নেটওয়ার্ক, যা খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১০০ বছর থেকে ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মন্টানা এবং মেক্সিকো উপসাগরের মতো দূরের জায়গাগুলো থেকে একত্র হয়েছিল। হোপওয়েল কালচার একাধিক বাণিজ্য রুট দিয়ে সংযুক্ত ছিল। ওহাইওতে তাদের হাতে তৈরি মাটির ঢিবি দিয়ে ঘেরা স্থানগুলোর আকৃতি বিভিন্ন রকমের। এর কোনোটি বৃত্তাকার, কোনোটি বর্গাকার আবার কোনোটি অষ্টভুজ আকৃতির। এগুলো অনেকটাই একটি অপরটির সঙ্গে যুক্ত। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সবে এখন এই প্রকৌশল বিস্ময় সম্পর্কে বুঝতে শুরু করেছেন।

আশ্চর্যজনকভাবে গাণিতিক ও জটিল জ্যোতির্বিদ্যাকে ব্যবহার করে নির্মিত নিদর্শনগুলো বিশ্বের বৃহত্তম জ্যামিতিক আকৃতির মাটির কাজের নিদর্শন। এগুলো দুর্গ বা প্রতিরক্ষামূলক কাঠামো হিসেবে নির্মিত হয়নি।

২০২৩ সালে হোপওয়েলের আটটি মাটির দেয়াল বেষ্টিত এলাকাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। এর মধ্যে আছে—ওহাইওর নিউআর্কে অবস্থিত দ্য অক্টাগন ও দ্য গ্রেট সার্কেল, ওহাইওর ফোর্ট অ্যানসিয়েন্ট। অপর পাঁচটি জায়গা হোপওয়েল কালচার ন্যাশনাল হিস্টোরিক্যাল পার্কের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো হলো—মাউন্ড সিটি, হোপটন আর্থওয়ার্কস, হাই ব্যাংক ওয়ার্কস, হোপওয়েল মাউন্ড গ্রুপ এবং সিপ আর্থওয়ার্কস।

লেপারের ভাষ্যমতে, দ্য অক্টাগন এবং দ্য গ্রেট সার্কেল একসময় সাড়ে চার বর্গমাইল বিস্তৃত একটি বৃহত্তর ও একক হোপওয়েল কমপ্লেক্স ছিল। এগুলো মাটির ঢিবির দেয়ালে ঘেরা কয়েকটি রাস্তা দিয়ে সংযুক্ত ছিল। গ্রেট সার্কেলে হোপওয়েল সেরেমোনিয়াল আর্থওয়ার্কের জাদুঘরটি অবস্থিত। গ্রেট সার্কেলের ব্যাস ১ হাজার ২০০ ফুট। এর দেয়াল ১৪ ফুট উঁচু।

দ্য অক্টাগন এবং দ্য গ্রেট সার্কেল একসময় সাড়ে চার বর্গমাইল বিস্তৃত একটি বৃহত্তর ও একক হোপওয়েল কমপ্লেক্স ছিল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ নট

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি। 

৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে। 

আরো পড়ুন:

দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে

সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা

২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা। 

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী। 

উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” 

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।” 

চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়। 

মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ