দুই বছর আগে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলীর খালপাড় এলাকায় যৌতুকের জন্য গরম তেল ঢেলে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী মিজান সরদারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মুন্সি মো. মশিয়ার রহমানের আদালত এ রায় দেন। দণ্ডের পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

রায় ঘোষণার আগে মিজান সরদারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর এরশাদ আলম (জর্জ)।

জানা গেছে, মিজান সরদারের সাথে ১০ বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মিম আক্তার রুপা। তাদের একটি পুত্র সন্তান এবং কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে মিজান যৌতুকের জন্য রুপাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতো। রুপার বাবা জাহাঙ্গীর আলম মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে মিজানকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনে দেন এবং সাত লাখ টাকা দিয়ে একটি দোকানও করে দেন। এরপর সে আরো যৌতুক দাবি করে। তবে রুপা তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মিজান রুপার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বাড়িয়ে দেয়। তবে ভিকটিম দুই সন্তানের কথা চিন্তা করে তা সহ্য করে।

২০২৩ সালেন ৬ মে রাত ১০টার দিকে মিজান কেরানীগঞ্জের কদমতলীর খালপাড় এলাকার বাসায় রুপাকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। রুপা যৌতুক দিতর অপরাগতা প্রকাশ করলে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রুপা দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ৩টার দিকে মিজান সয়াবিন তেল গরম করে এনে রুপার শরীরে ঢেলে দেয়। এতে তার শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়। তার দুই সন্তানও কিছুটা দগ্ধ হয়। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ২৫ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রুপা।

এ ঘটনায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে রুপার বাবা জাহাঙ্গীর আলম ৯ মে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন। রুপা মারা যাওয়ার পর মামলাটি যৌতুকের জন্য হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

মামলাটি তদন্ত করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর শরজিৎ কুমার ঘোষ ওই বছরের ৩১ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে আদালত চার্জশিটভূক্ত ১৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

ঢাকা/মামুন/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ত ক র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কেরানিগঞ্জে ৩ জনকে হত্যার পর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড, খুনি গ্রেপ্তার

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডার মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল আসামি মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুলকে ঢাকার কদমতলী থানাধীন জুরাইন রেললাইন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

হত্যার শিকার তিন জন হলেন- নুপুর (২৫), বিথী আক্তার (২৪) ও তার শিশু পুত্র রাফসান (৪)। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন কেরানীগঞ্জ সার্কেল জাহাঙ্গীর আলম। 

সংবাদ সম্মেলনে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি জানান, গত ২৫ এপ্রিল রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগরে মাকসুদা গার্ডেন সিটির সামনে থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় নুপুরের মস্তক ও হাত-পা বিহীন দেহের খণ্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ২৭ এপ্রিল হাসনাবাদ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পোস্তগোলা ব্রিজের পূর্ব দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীর সংলগ্ন ভাসমান অবস্থায় মৃতদের তিনটি খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়। খণ্ডিত অংশের মধ্যে ছিল একটি পা ও দুইটি উরু। 

পরে ঘটনাস্থলের পাশের একটি সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সহিত সরাসরি জড়িত মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুলকে রাজধানীর জুরাইন রেললাইন এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। 

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন যে, নিহত বিথী আক্তার তার কারখানায় চাকরি করতো। চাকরির সুবাদে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তার সাথে ২০১৭ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।

বিষয়টি তার আগের স্ত্রী রুমা জানতে পারলে সে পুনরায় বিথী আক্তারের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে। এতে বিথী আক্তার রুবেল নামে অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করে। ওই ঘরে তার রাফসান নামে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। ঘাতক মহিউদ্দিন হাওলাদার শিমুল পরে জানতে পেরে আবারো বিথী আক্তারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং তাকে বিয়ে না করেই স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে মীরেরবাগ এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তার সাথে সংসার করতে থাকেন। 

মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুল তার প্রথম স্ত্রী রুমাসহ রাজধানীর কদমতলী থানার জুরাইনে একটি বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে। এই ঘটনাটি পরে তার প্রথম স্ত্রী আবার জানতে পেরে তার সাথে বিভিন্ন সময় ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এদিকে বিথী আক্তার মহিউদ্দিন হাওলাদার শিমুলকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।

এ অবস্থায় গত ২৫ এপ্রিল সকালে মহিউদ্দিন হাওলাদার শিমুল বিথী আক্তারের বাসায় চলে যায়। এসময় তার সাথে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে মহিউদ্দিন হাওলাদার শিমুল গামছা দিয়ে বিথী আক্তারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার ঘটনাটি দেখে ফেলায় বিথীর শিশু সন্তান রাফসানকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সে। 

এসব ঘটনা দেখে ফেলে ওই ফ্ল্যাটের সাবলেটে ভাড়া থাকা নুপুর চিৎকার করলে তাকেও গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সে। পরে মৃতদেহগুলো বাথরুমে নিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে বিভিন্ন প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সে। রাফসানের ছয় টুকরা লাশ বস্তা বন্দি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বেয়ারা এলাকায় একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়। 

নুপুরের খণ্ডবিখণ্ড লাশ রাতে মাকসুদা গার্ডেন সিটির সামনে ফেলে দেয়। বিথীর খণ্ডবিখণ্ড লাশ বস্তা বন্দী করে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় ব্রিজের উপর থেকে নদীতে ফেলে দেয়। পরে স্বাভাবিক অবস্থায় সে তার জুরাইনের বাসায় চলে যায়। 

তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রোববার রাতে শিশু পুত্র রাফসানের খণ্ডিত লাশ পেয়ারা পূর্ব পাড়া জৈনক মিন্টু মিয়ার জমির ঝোপঝাড়ের মধ্য থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে বিথী আক্তার ও নুপুরের মস্তক এখনো উদ্ধার করা যায়নি। 

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাজাহারুল ইসলাম।

ঢাকা/শিপন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেরানিগঞ্জে ৩ জনকে হত্যার পর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড, খুনি গ্রেপ্তার