১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে সরকার
Published: 13th, April 2025 GMT
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনুমোদন পাওয়া ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।
আজ রোববার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান। তিনি জানান, বাতিল হওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে পাঁচটি সরকারি ও পাঁচটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল।
আশিক চৌধুরী বলেন, আজ প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বেজার গভর্নিং বোর্ডের সভায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ১০টিকে চূড়ান্তভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাতিল হওয়া সরকারি পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হলো কক্সবাজারের সোনাদিয়া ইকোট্যুরিজম পার্ক, বাগেরহাটের সুন্দরবন ট্যুরিজম পার্ক, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল, গাজীপুরের শ্রীপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
আর বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বিজিএমইএ পোশাকশিল্প পার্ক, সুনামগঞ্জের ছাতক অর্থনৈতিক অঞ্চল, বাগেরহাটের ফমকম অর্থনৈতিক অঞ্চল, ঢাকা জেলার সিটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। তবে এক দশকের বেশি সময়ে কয়েকটি বেসরকারি অঞ্চল ছাড়া সফল কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।
এমন বাস্তবতায় অন্তর্বর্তী সরকার এসে অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় গত জানুয়ারি মাসে বেজার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের বদলে আপাতত পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার স্বল্পমেয়াদি ও সময় নির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ওই সময় জানান, এই পাঁচ অর্থনৈতিক অঞ্চল সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে সবার মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। তাতে দুই বছরের মধ্যে ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৩৩টি শিল্পকারখানা নির্মাণ, ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এবং প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আশিক চৌধুরী আগে জানিয়েছিলেন, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি একেবারে বাদ দেওয়া হচ্ছে না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে তা থাকবে। কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন বাতিলও হতে পারে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ বেজার গভর্নিং বোর্ডের সভায় ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিলের ঘোষণা এল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।