গতকাল রোববার ছিল ৩০ চৈত্র। বাংলা ১৪৩১ সনের শেষ দিন। বছরের শেষ দিনকে বিদায় জানাতে এ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘চৈত্রসংক্রান্তি’ উৎসব। বর্ষবিদায়ে ছিল গান, নাচ, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজন।
আজ সোমবার পয়লা বৈশাখ। বাংলা নতুন বছর ১৪৩২ সনের প্রথম দিন। বাংলা পুরোনো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরের আগমন উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও চৈত্রসংক্রান্তির মধ্য দিয়ে চারুকলা অনুষদের তিন দিনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে মুখোশ, কাগজের ঘূর্ণি, রঙিন কাগজ, তালপাতা, বাঁশসহ নানা গ্রামীণ উপকরণ দিয়ে বকুলতলা সাজানো হয়। পূর্বনির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা দেরিতে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বকুলতলায় চৈত্রসংক্রান্তি অনুষ্ঠান শুরু হয়।
চারুকলার শিক্ষার্থী আরিবা, সিন্দিত, শর্মীর সমবেত কণ্ঠে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো/ তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক’ গান দিয়ে শুরু হয় এ আয়োজন।
এরপর ‘বাজেরে বাজে ঢোল আর ঢাক/এলো রে পহেলা বৈশাখ’ গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করেন জয়া, আঁচল ও গল্প। চারুকলার শিক্ষার্থী সুপ্রিয় কুমার ঘোষ আবৃত্তি করেন ‘বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও/ ক্ষমা করো আজিকার মতো/ পুরাতন বরষের সাথে/ পুরাতন অপরাধ যত’। বকুলতলায় এভাবে চলতে থাকে একের পর গান, কবিতা, নাচ। আর এই আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়টির চারুকলা অনুষদের বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে চারুকলার বৈশাখ উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক এ এ এম কাওসার হাসান বলেন, এবারের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা উদ্যাপনের জন্য ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চারুকলা অনুষদের খণ্ডকালীন শিক্ষক জাকিয়া আহমেদ ও মেরাজি আশা।
চারুকলা অনুষদের তথ্য অনুযায়ী, তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন আজ সোমবার সকাল ৯টায় শুরু হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। তৃতীয় দিন আগামীকাল মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ত রস ক র ন ত অন ষ ঠ ন চ র কল বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।