বেলীর অভাবের ঘরে আলো হয়ে এলো ফুটফুটে ছেলে
Published: 14th, April 2025 GMT
স্বামী বাকপ্রতিবন্ধী, তাই কাজে নিতে চাননা কেউ। কখনও কাজ মেলে কখনও মেলে না। বেলী আক্তারের সংসারে তাই অভাব। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়। এই অভাবের সংসারে নববর্ষের ভোরে তার ঘরে আলো হয়ে এসেছে এক নতুন মুখ। ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন তিনি। আনন্দের এই সময়ও বেলীর দুশ্চিন্তা! স্বামী সোহেল রানা কাজের সন্ধানে তখন অনেক দূরে, সিলেটে। অন্যদিকে, গত সোমবার মারা গেছেন বেলীর মা।
সোমবার ভোর ৫টায় ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ছেলে সন্তান জন্ম দেন বেলী। হাসপাতালে তখন চিকিৎসক ছিলেন না। আয়াদের চেষ্টায় তার নরমাল ডেলিভারি হয়।
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে সোহেল ও বেলীর বিয়ে হয়। সোহেলের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কিসমত চামেশ্বরী গ্রামে। আর বেলীর বাড়ি একই উপজেলার রাজগাঁও গ্রামে।
রোববার রাত ২ টার দিকে বেলীর প্রসব ব্যথা ওঠে। দ্রুত তাকে ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নেন স্বজনরা। স্বজনরা জানান, হাসপাতালে তখন চিকিৎসক ছিলেন না। আয়াদের চেষ্টায় তার নরমাল ডেলিভারি হয়। এটি তার প্রথম সন্তান।
‘সোহেল রানা কথা বলতে পারে না। অভাবের কারণে টাকার জন্য দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ান তিনি। এমনকি প্রথম সন্তানের বাবা হয়েও স্ত্রী-সন্তানের পাশে থাকার সৌভাগ্য হয়নি তার। কাজের খোঁজে সিলেটে আছেন তিনি। তবে অন্যের মোবাইলে ভিডিও কলে তার ছেলে সন্তানের মুখ দেখে অনেক খুশি হয়েছেন। খুশিতে কান্না করে ফেলেছে সোহেল, বলেন সোহেলের ছোটভাই মিন্টু।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেলীর মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। গম্ভীর হয়ে রয়েছেন। মুখে হাসি নেই। শারীরের অবস্থাও তেমন ভালো না।
বেলী জানান, এই সময় স্বামী পাশে না থাকায় খারাপ লাগছে। তাছাড়া কয়েকদিন আগে তার মা মারা গেছেন। কষ্ট লাগছে, নাতির মুখ তিনি দেখে যেতে পারলেন না।
বেলী বলেন, 'কিছু খেতে মন চাইলেও টাকার অভাবে খেতে পারিনি। দুই বেলা ভাতই ঠিকমতো জোটে না!'
তবে বাচ্চাকে অভাব বুঝতে দেবেন না বলে জানান তিনি। বেলী বলেন, 'ছেলেকে পড়ালেখা করাব, ডাক্তার বানাবো। আমার অভাবের সংসারে সেই এখন আলো।’
সোহেল রানার বাবা খাদেমুল ইসলাম বলেন, 'জন্মের পর থেকে সোহেল কথা বলতে পারে না। সংসারে অভাব থাকায় ছোট থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করত। এলাকায় কাজ না থাকলে অন্য জেলায় যেত।'
তিনি বলেন, 'বছরের প্রথম দিনে নাতিকে কোলে নিয়ে আনন্দ লাগছে। সোহেল ভিডিও কলে ছেলেকে দেখেছে। বাড়িতে থাকলে অনেক খুশি হতো।'
নাতির জন্য সবার কাছে দোয়া চান সোহেলের মা সালেহা বেগম।
বেলীর দাদী ফাতেমা বেওয়া বলেন, ‘চার ভাই-বোনের মধ্যে বেলী সবার ছোট। আমার নাতনির ছেলে হওয়ায় আমরা খুব খুশি। কয়েকদিন আগে বেলীর মা মারা যাওয়ায় আমি এখন তার বাড়িতে আছি। তাদের দেখাশুনা করছি।’
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রকিবুল আলম চয়ন জানান, সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বেলী আক্তার ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'বাংলা বছরের প্রথম দিন সন্তানের মা হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। মা-সন্তান সুস্থ্ রয়েছে।'
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঠ ক রগ ও ঠ ক রগ প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
আজ শ্রাবণের ১৬ তারিখ। প্রকৃতির নিয়মে এ মাসে বৃষ্টি বেশি ঝরে। আজও ঢাকার আকাশ মেঘলা। বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ঝুম বৃষ্টি কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। তবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রয়েছে ভূমিধসের ঝুঁকি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অতিভারী বৃষ্টির কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ বাস, রিকশা ও সাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী ও সমুদ্রবন্দর এলাকায় অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শনিবারও সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অধিকাংশ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগে অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রবিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার ৬৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা/ইভা