স্বামী বাকপ্রতিবন্ধী, তাই কাজে নিতে চাননা কেউ। কখনও কাজ মেলে কখনও মেলে না। বেলী আক্তারের সংসারে তাই অভাব। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়। এই অভাবের সংসারে নববর্ষের ভোরে তার ঘরে আলো হয়ে এসেছে এক নতুন মুখ। ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন তিনি। আনন্দের এই সময়ও বেলীর দুশ্চিন্তা! স্বামী সোহেল রানা কাজের সন্ধানে তখন অনেক দূরে, সিলেটে। অন্যদিকে, গত সোমবার মারা গেছেন বেলীর মা।

সোমবার ভোর ৫টায় ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ছেলে সন্তান জন্ম দেন বেলী। হাসপাতালে তখন চিকিৎসক ছিলেন না। আয়াদের চেষ্টায় তার নরমাল ডেলিভারি হয়।

২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে সোহেল ও বেলীর বিয়ে হয়। সোহেলের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কিসমত চামেশ্বরী গ্রামে। আর বেলীর বাড়ি একই উপজেলার রাজগাঁও গ্রামে। 

রোববার রাত ২ টার দিকে বেলীর প্রসব ব্যথা ওঠে। দ্রুত তাকে ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নেন স্বজনরা। স্বজনরা জানান, হাসপাতালে তখন চিকিৎসক ছিলেন না। আয়াদের চেষ্টায় তার নরমাল ডেলিভারি হয়। এটি তার প্রথম সন্তান। 

‘সোহেল রানা কথা বলতে পারে না। অভাবের কারণে টাকার জন্য দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ান তিনি। এমনকি প্রথম সন্তানের বাবা হয়েও স্ত্রী-সন্তানের পাশে থাকার সৌভাগ্য হয়নি তার। কাজের খোঁজে সিলেটে আছেন তিনি। তবে অন্যের মোবাইলে ভিডিও কলে তার ছেলে সন্তানের মুখ দেখে অনেক খুশি হয়েছেন। খুশিতে কান্না করে ফেলেছে সোহেল, বলেন সোহেলের ছোটভাই মিন্টু।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেলীর মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। গম্ভীর হয়ে রয়েছেন। মুখে হাসি নেই। শারীরের অবস্থাও তেমন ভালো না।

বেলী জানান, এই সময় স্বামী পাশে না থাকায় খারাপ লাগছে। তাছাড়া কয়েকদিন আগে তার মা মারা গেছেন। কষ্ট লাগছে, নাতির মুখ তিনি দেখে যেতে পারলেন না।

বেলী বলেন, 'কিছু খেতে মন চাইলেও টাকার অভাবে খেতে পারিনি। দুই বেলা ভাতই ঠিকমতো জোটে না!'

তবে বাচ্চাকে অভাব বুঝতে দেবেন না বলে জানান তিনি। বেলী বলেন, 'ছেলেকে পড়ালেখা করাব, ডাক্তার বানাবো। আমার অভাবের সংসারে সেই এখন আলো।’

সোহেল রানার বাবা খাদেমুল ইসলাম বলেন, 'জন্মের পর থেকে সোহেল কথা বলতে পারে না। সংসারে অভাব থাকায় ছোট থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করত। এলাকায় কাজ না থাকলে অন্য জেলায় যেত।'

তিনি বলেন, 'বছরের প্রথম দিনে নাতিকে কোলে নিয়ে আনন্দ লাগছে। সোহেল ভিডিও কলে ছেলেকে দেখেছে। বাড়িতে থাকলে অনেক খুশি হতো।' 

নাতির জন্য সবার কাছে দোয়া চান সোহেলের মা সালেহা বেগম। 

বেলীর দাদী ফাতেমা বেওয়া বলেন, ‘চার ভাই-বোনের মধ্যে বেলী সবার ছোট। আমার নাতনির ছেলে হওয়ায় আমরা খুব খুশি। কয়েকদিন আগে বেলীর মা মারা যাওয়ায় আমি এখন তার বাড়িতে আছি। তাদের দেখাশুনা করছি।’

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রকিবুল আলম চয়ন জানান, সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বেলী আক্তার ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'বাংলা বছরের প্রথম দিন সন্তানের মা হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। মা-সন্তান সুস্থ্ রয়েছে।'

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঠ ক রগ ও ঠ ক রগ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’

এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।    

আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা। 

আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।    

আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।

অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।

আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।

এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।

এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।

বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।

লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • অর্ধশত বছরের চামড়ার মোকাম রাজারহাট
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সোর্স ইকবালের ডাকাতি