অনলাইনে পিডিএফ ফাইল কনভার্ট করা থেকে সাবধান
Published: 16th, April 2025 GMT
স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে কনভার্টার না থাকলেও অনলাইনে সহজেই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে থাকা ‘ফ্রি অনলাইন কনভার্টার’ ব্যবহার করে বিনা মূল্যে পিডিএফ ফাইল কনভার্ট করা যায়। আর তাই ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক কাজে অনলাইনে পিডিএফ ফাইল ওয়ার্ড বা অন্যান্য ফরম্যাটে রূপান্তর করেন অনেকেই। ব্যবহারকারীদের এ আগ্রহ কাজে লাগিয়ে ভুয়া পিডিএফ কনভার্টার ওয়েবসাইট বানিয়ে হ্যাকাররা ম্যালওয়্যার ছড়াচ্ছে বলে সতর্ক করেছে সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্লাউডসেক।
ক্লাউডসেকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইবার হামলার জন্য পরিচিত কনভার্টার সাইট পিডিএফক্যান্ডি ডটকম-এর নামের সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন ওয়েবসাইট তৈরি করেছে হ্যাকাররা। ওয়েবসাইটগুলোর লোগো, নকশা ও ইন্টারফেস পিডিএফক্যান্ডি ডটকম-এর মতো হওয়ায় অনেকেই না বুঝে পিডিএফ ফাইল কনভার্ট করতে চান। পিডিএফ ফাইল আপলোড করলে ওয়েবসাইটগুলোতে নকল ‘লোডিং’ অ্যানিমেশন দেখা যায়। মনে হয় যেন ফাইলটি সত্যিই রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় আছে। এরপর একটি ক্যাপচা যাচাইকরণের ধাপ থাকে, যা ওয়েবসাইটটিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। এসব ধাপ পার হওয়ার পর ব্যবহারকারীদের একটি ‘পাওয়ারশেল’ কমান্ড দিতে বলা হয়। এই কমান্ড দিলেই স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্ষতিকর ম্যালওয়্যারযুক্ত ‘অ্যাডোবি ডট জিপ’ ফাইল ডাউনলোড হয়ে যায়।
ক্ষতিকর ম্যালওয়্যারটি স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে প্রবেশ করেই ব্রাউজারে সংরক্ষিত পাসওয়ার্ড, ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট এবং অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য চুরি করতে থাকে। এ বিষয়ে ক্লাউডসেক জানিয়েছে, ভুয়া এসব ওয়েবসাইটের কয়েকটি ইতিমধ্যে অনলাইন থেকে মুছে ফেলা হলেও গত মাসে এ ধরনের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ছয় হাজারের বেশিবার ভিজিট রেকর্ড করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতারণার কৌশলটি এখনো চালু রয়েছে এবং প্রতিদিনই নতুন নতুন ব্যবহারকারী প্রতারিত হচ্ছেন।
সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের তথ্যমতে, ফাইল রূপান্তরের জন্য কোনো অনলাইন সেবা ব্যবহারের আগে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের ঠিকানা ভালোভাবে যাচাই করা জরুরি। এ ছাড়া সন্দেহজনক বা অপরিচিত সাইটে ফাইল আপলোড করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো ওয়েবসাইটে যদি কমান্ড চালুর মতো অস্বাভাবিক নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহলে সেটি এড়িয়ে চলতে হবে। অনিচ্ছাকৃতভাবে আক্রান্ত হলে দ্রুত যন্ত্রের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি সব পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইনে জুয়া বন্ধে হচ্ছে নতুন সাইবার সুরক্ষা আইন
কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন সাইবার সুরক্ষা আইন পাস হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। গতকাল রোববার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনটি পাস হবে বলে আশা করি। এই আইনে সাইবার স্পেসে জুয়া কিংবা অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন পাস হওয়ার পরে আমরা জুয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত কোম্পানিকে শাস্তি দেওয়া এবং বেটিং সাইটগুলো নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেব ইনশা আল্লাহ।’
বেশ কিছুদিন ধরে বিকাশ, রকেটসহ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অনলাইন জুয়া, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ই–কমার্স এমএলএমের নাম করে অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠায় বেটিং সাইটগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত এমএফএস কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ বিষয়ে ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমরা মোবাইল ব্যাংকিংসহ ফাইন্যান্সিয়াল অর্গানাইজেশনগুলোকে আগাম সতর্কতা জানিয়ে রাখি। কেননা সাইবার জুয়া কোম্পানিগুলো মোবাইল ব্যাংকিংসহ ব্যাংক, ফাইন্যান্সিয়াল হাউস কিংবা পেমেন্ট গেটওয়ে, এমএফএস/পিএসও/পিএসপি ইত্যাদির সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড। মাসের পর মাস নির্দিষ্ট কিছু পুলের মোবাইল ফাইনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ইরেগুলার, একমুখী এবং অস্বাভাবিক ট্রাঞ্জেকশন হচ্ছে। একটা পুল অফ নম্বরে টাকা যাচ্ছে, সেটা নির্দিষ্ট নম্বরে গিয়ে ক্যাশ আউট হয়ে বাইরে পাচার হচ্ছে, আপনি দেখেও না দেখার ভান করে বলবেন, আমি জড়িত নই! এটা হবে না। সুতরাং অবৈধ জুয়ায় জড়িত সবাই সাবধান।’
আরও পড়ুননিষিদ্ধ অনলাইন জুয়া চলছেই, তরুণ–তরুণীরা আসক্ত১৬ এপ্রিল ২০২৫গত ২৭ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনে ‘বেআইনি অনলাইন ক্যাসিনোতে তিন মাসে রংপুর শীর্ষে, রাজশাহীর অবস্থান দ্বিতীয়’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সেখানে গুগলের তথ্য অনুসারে, রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি মানুষ এই ক্যাসিনোর একাধিক সাইট গুগলে খুঁজেছেন। সারা দেশের তুলনায় এখানকার সার্চের হার সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগ থেকে, যার স্কোর ১০০-এর মধ্যে ১০০। রাজশাহী বিভাগ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, যার স্কোর ১০০-এর মধ্যে ৪৬। এরপর চট্টগ্রাম (৪১) এবং খুলনা ও বরিশাল (৩৬)।
গত ১৬ এপ্রিল প্রথম আলো অনলাইনে ‘নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়া চলছেই, তরুণ-তরুণীরা আসক্ত’ শিরোনামে আরও একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি যে কিওয়ার্ড গুগলে সার্চ হয়ে থাকে, সেটি হচ্ছে জেটবাজ ডটকম। এই সাইটে প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে ৭৬ লাখ বারের মতো সার্চ করা হয়। জেটবাজ জুয়ার সাইট প্রথম স্থানে রয়েছে। এরপর দ্বিতীয় জুয়ার স্থানে অবস্থান করছে জয়া৯ ডটকম, এই সাইট বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে সার্চ হয় ৫৮ লাখের মতো। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ক্রিকেস ডটটিভি। এই সাইটের নামে ৩৬ লাখ বার সার্চ হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনবেআইনি অনলাইন ক্যাসিনোতে তিন মাসে রংপুর শীর্ষে, রাজশাহীর অবস্থান দ্বিতীয়২৭ মার্চ ২০২৫বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক জুয়া সাইটের কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে যে ওয়েবসাইটগুলো বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে বাংলাদেশ থেকে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে এমসিবাংলাদেশ ডটওআরজি, ক্রিকায়া ডটআইও, ক্রিকায়া ডটবেস্ট, দারাজপ্লে ডটভিআইপি, জেরেমিথ ডটকম, ক্রেজিটাইম৮৮ ডটঅ্যাপ, সিএসওয়েলকাম ডটকম, বাংলাবেট ডটনেট, বাবু৮৮বিডিটি ডটকম, ১উইনবাংলাদেশ ডটকম, বাবো৮৮ ডটকম, বিকে৩৩ ডটনেট, এল৪৪৪ ডটওআরজি, স্লটএম৭৭ ডটকম, জয়া৯৯ ডটকম, ৭৭৭জয়া ডটনেট, টিকে৯৯৯ ডটওআরজি, ধোনি৮৮ ডটকম, বাবু৮৮এইচ ডটকম, বিগটাকা ডটকম, বাবু৮৮এফ ডটকম, খেলা৮৮ ডটঅনলাইন, নগদ৮৮ ডটকম, মোস্টপ্লে ডটভিআইপি, ফ্যানসিউইন ডটকম, গ্লোরিক্যাসিনো ডটকম, নগদ৮৮ ডটপ্রো, জেডব্লিউ ডটক্যাসিনো, ক্যাসিনো ডটওআরজি/বিএন-বিডি, উইন-বিডিটি ডটকম/বিএ, বাংলাবেটস ডটকম, জিটাউইন ডটকম ইত্যাদি।
বিকাশ ও নগদের মতো প্রতিষ্ঠানে জুয়ার টাকা লেনদেনের ব্যাপারে কি পদক্ষপ নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তারা প্রথম আলোকে বলেন,‘অনলাইন জুয়াসহ যেকোনো প্রতারণার ব্যাপারে আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুনসাকিব–বুবলী–পিয়াসহ তারকাদের অনলাইন জুয়ার অবাধ প্রচারণা০৮ এপ্রিল ২০২৫