সায়েন্স ফিকশন কিংবা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে এক সময় দেখা মিলত মস্তিষ্কের ব্যবচ্ছেদ। মানব মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কয়েকটি টিস্যু বা নিউরন ওলট-পালট করে তাদের কবজা করে নিত কাহিনির নায়ক কিংবা খলনায়করা। এই পুরো বিষয়ের অবতারণা হয়েছিল ব্রেইন ম্যাপিং বা মানব মস্তিষ্কের মানচিত্রকে কেন্দ্র করে।

বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের সময়ে এসে নিজেদের দীর্ঘ পরিশ্রম ও গবেষণায় কল্পনার এ বিষয়কে এবার সত্যি করে দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। একটি ইঁদুরের মস্তিষ্কের ধূলিকণার সমান অংশ ব্যবহার করে তৈরি করা হলো এক ত্রিমাত্রিক মানচিত্র। যে মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে নিউরনগুলো কীভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত এবং কীভাবে তারা কাজ করে। খবর সিএনএনের

মাত্র এক ঘনমিলিমিটার মস্তিষ্কের টিস্যুতে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন ৮৪ হাজার নিউরন এবং ৫০ কোটির বেশি সংযোগ বা সিন্যাপ্স। এই অংশে নিউরনের তারের জাল প্রায় ৫ দশমিক ৪ কিলোমিটার লম্বা, যা নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের দৈর্ঘ্যের চেয়েও বড়।

২২টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ১৫০ জন বিজ্ঞানী মিলে এই বিশাল কাজটি করতে সময় লেগেছে প্রায় ১০ বছর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালেন ইনস্টিটিউট ফর ব্রেইন সায়েন্স, বেলর কলেজ অব মেডিসিন এবং প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে প্রকল্পটি।

প্রথমে গবেষকরা একটি জীবন্ত ইঁদুরকে একটি ছোট ট্রেডমিলে দৌড়াতে দেন এবং তাকে সিনেমার ছোট ছোট ক্লিপ ও ঝুঁকিপূর্ণ খেলাধুলার ভিডিও দেখান। তখন ইঁদুরটির মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করছে, তা রেকর্ড করা হয়। এর পর ইঁদুরকে অচেতন করে তার মস্তিষ্কের অংশকে ২৮ হাজার পাতলা স্লাইসে কেটে ছবিগুলো তোলা হয়। পরে সেই ছবিগুলো কম্পিউটারের সাহায্যে জোড়া লাগিয়ে তৈরি হয় পুরো মানচিত্র।

এ গবেষণায় মোট ১ দশমিক ৬ পেটাবাইট তথ্য পাওয়া গেছে। ২২ বছর ধরে একটানা এইচডি ভিডিও চালানোর সমান এ তথ্য। বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করেছেন এসব তথ্য। 

পুরো ইঁদুরের মস্তিষ্কের মানচিত্র তৈরি করতে আরও কয়েক বছর লাগবে। মানুষের মস্তিষ্কের পূর্ণ ম্যাপ তৈরি করা এখনও অনেক কঠিন হলেও এ আবিষ্কার সেই লক্ষ্যপানে এক বিশাল পদক্ষেপ।

গবেষকরা বলছেন, এই মানচিত্র ভবিষ্যতে আলঝেইমার, পারকিনসন, অটিজমসহ জটিল মস্তিষ্কজনিত নানা রোগ বুঝতে ও নতুনভাবে গবেষণা করতে সাহায্য করবে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পরমাণু কর্মকাণ্ডে বৈশ্বিক বাধ্যবাধকতা মানছে না: আইএইএ

ইরান ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পরমাণু কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বৈশ্বিক বাধ্যবাধকতা মানছে না বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)।

সংস্থাটির গভর্নর বোর্ডে আজ বৃহস্পতিবার গৃহীত একটি প্রস্তাবে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। এই অভিযোগ ভবিষ্যতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপনের পথ খুলে দিতে পারে।

গত সপ্তাহে আইএইএ ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি সংস্থাটির গভর্নর বোর্ডে আজকের সিদ্ধান্তের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল, ইরান আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা করছে না। তারা কিছু এলাকায় গোপনে পারমাণবিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে তদন্তের আওতায় থাকা কিছু এলাকায় এমন কিছু পারমাণবিক উপকরণ রেখেছে, যার বিষয়ে তারা তথ্য দেয়নি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি আইএইএর বৈঠকের আগে ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে প্রস্তাবটি সমর্থন না করার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এতে তাঁরা বড় ভুল করবেন এবং ইরান এর ‘জবাব’ দেবে।

আইএইএর প্রতিবেদন এবং গভর্নর বোর্ডের এমন প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে নতুন পারমাণবিক চুক্তির লক্ষ্যে চলমান আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

আরও পড়ুননিরাপত্তাঝুঁকিতে ইরাকের দূতাবাস থেকে কর্মীদের আংশিকভাবে সরাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র১১ ঘণ্টা আগে

তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। এমন এক সময়ে আইএইএর গভর্নর বোর্ডে প্রস্তাবটি গৃহীত হলো, যার মাত্র এক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের কিছু নাগরিককে মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশের নাগরিকদের অঞ্চলটি ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে।

তবে ইরান জোর দিয়ে বলেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ এবং তারা কখনো পরমাণু অস্ত্র তৈরি বা অর্জনের চেষ্টা করবে না।

২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করেছিল ইরান। এই চুক্তির আনুষ্ঠানিক নাম জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ)। ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নজরদারি করার জন্য এই চুক্তি করা হয়েছিল, যাতে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে।

আরও পড়ুন‘শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম’ থেকে বঞ্চিত হলে পারমাণবিক চুক্তি নয়: ইরান০৪ জুন ২০২৫

চুক্তি করার বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তি থেকে একতরফা বের হয়ে যায়। তাঁর মতে, এই চুক্তি ইরানের পরমাণু বোমা তৈরির পথ বন্ধে যথেষ্ট নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে চুক্তিটি একধরনের বাতিল হয়ে যায়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে চুক্তিটি নবায়নের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন, কিন্তু সফল হননি।

আইএইএর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ মে পর্যন্ত ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ৪০৮ দশমিক ৬ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত করেছে, যা অস্ত্র তৈরির পর্যায়ের কাছাকাছি এবং প্রায় ৯টি পারমাণবিক বোমা বানানোর জন্য যথেষ্ট। পরমাণু অস্ত্র নেই—এমন যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত নজিরবিহীন ঘটনা। ফেব্রুয়ারির সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এই মজুতের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে ১৩৩ দশমিক ৮ কেজিতে পৌঁছেছে।

আরও পড়ুনইরানের উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়ামের মজুত ৪০৮ কেজি, যা নজিরবিহীন: আইএইএ৩১ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে কতো টাকা পেলো দ. আফ্রিকা?
  • প্রবাসীর ভবন উদ্ধোধন করতে এলেন সৌদি নাগরিক
  • প্রথমবার বিগ ব্যাশে বাবর আজম
  • ইরান ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পরমাণু কর্মকাণ্ডে বৈশ্বিক বাধ্যবাধকতা মানছে না: আইএইএ
  • সিনেমায় ফারিণ-সাবিলার শুভ সূচনা 
  • সিনেমায় ফারিণ-সাবিলার দারুণ সূচনা