ফেসবুকে অপপ্রচার চলছিল চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষকে নিয়ে। নিরাপত্তা চেয়ে সন্ধ্যায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। মধ্যরাতে মানিকগঞ্জের গড়পাড়া গ্রামে তাঁর বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

মানবেন্দ্র জানান, দু-তিন দিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে অপপ্রচার চলছিল। এসব কথাবার্তাকে তিনি হুমকি বলে মনে করছিলেন। এ জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় জিডি করেন। মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা তাঁর বাড়িতে আগুন দেয়। তিনি অন্য একটি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। অন্যদের চিৎকারে জেগে ওঠেন। স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, ধান ভাঙানোর মেশিনসহ শিল্পকর্ম পুড়ে গেছে।

জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল হামিদ মিয়া জানান, ভোর ৪টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে যান। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যায়নি।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ জানান, শিল্পী মানবেন্দ্র মামলা করেছেন।

ফেসবুকে অপপ্রচার

ফেসবুকে ‘বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ’, ‘মুজিববাদ’সহ আওয়ামী লীগের নামসংবলিত কয়েকটি পেজে প্রকাশ করা হয়, ‘শেখ হাসিনার বিকৃত মুখাবয়ব তৈরির দায়িত্ব নিয়েছেন মানবেন্দ্র ঘোষ। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জের গড়পাড়ায়।’ আইনজীবী নিঝুম মজুমদার তাঁর ফেসবুকে এটি শেয়ার করেন।

পরে মানবেন্দ্র ফেসবুকে লেখেন, ‘এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপনে বাঘের মোটিফ ছাড়া অন্য কোনো কাজে আমি নিয়োজিত ছিলাম না।’

পরিদর্শন ও তদন্ত

গতকাল বুধবার দুপুরে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পরিদর্শন করেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড.

মানোয়ার হোসেন মোল্লা, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সদস্যরা, জেলা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।

জেলা প্রশাসক মানোয়ার বলেন, ‘এ ঘটনায় ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম আবেদীন কায়সার সমকালকে বলেন, ‘বিএনপি মনে করে, এই অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বাড়ির পাশে এই চিত্রশিল্পীর বাড়ি।’

বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দেবে সরকার

চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িটি পুনর্নির্মাণ করে দেবে সরকার। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে। পরে রাত পৌনে ৮টায় জানানো হয়, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিন্দা-সমাবেশ

ভাস্কর মানবেন্দ্রর বাড়িতে আগুন দেওয়ায় নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

গতকাল বিকেলে প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সমাবেশে সংগঠনের আহ্বায়ক আবদুল কাদের দুটি দাবি জানান। তিনি  বলেন, শিল্পী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। জড়িতদের বিচার করতে হবে।

(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ফ সব ক সদস য ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল কিশোরী, সাপের কামড়ে মৃত্যু

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় সাপের কামড়ে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের সরেঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের সদস্যরা জানান, রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ওই কিশোরীকে একটি বিষধর সাপ ছোবল দেয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় তার।

নিহত কিশোরীর নাম নাঈমা আকতার (১৩)। সে আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের সরেঙ্গা গ্রামের বক্সি মিয়াজিবাড়ির মোহাম্মদ হাসানের মেয়ে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে মা ও ছোট বোনের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল নাঈমা। রাত তিনটার দিকে সাপের ছোবলে তার ঘুম ভাঙে। বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানালে তাকে উদ্ধার করে রাতেই আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। তবে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নাঈমাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানতে চাইলে নাঈমার চাচা কফিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন বলেন, ‘সাপে কামড় দিয়েছে জানার পর আমরা নাঈমাকে হাসপাতালে নিয়েছিলাম। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি।’

আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাপে কামড় দেওয়া এক কিশোরীকে হাসপাতালে আনা হয়ছিল। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ