পটুয়াখালীর দুমকীতে ৮০০ ফুটের একটি গ্রামীণ সড়ক ও মসজিদের মাঠে মাটি ফেলার কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নে সম্প্রতি এই কাজ শুরু হয়। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের এই কাজটি শেষ হওয়ার কথা আগামী জুনে। এরই মধ্যে দুটি কাজেই অনিয়মের তথ্য জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সরেজমিনও এসবের সত্যতা মিলেছে। 
জানা গেছে, মুরাদিয়া পঞ্চায়েতের বাজার থেকে আজাহার মৃধার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ও পাশের আলেপ খাঁ বাড়ির জামে মসজিদ মাঠ ভরাটের ওই প্রকল্পে বরাদ্দ হয় আট টন গম। এলাকাবাসীর ভাষ্য, দুটি কাজেই নিয়ম লঙ্ঘন করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কাবিখা প্রকল্পের আওতায় লোকবল দিয়ে মাটি কেটে রাস্তার কাজ করার শর্ত থাকলেও সেখানে মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে। দ্বিতীয় শর্তটি ছিল, রাস্তার দুই পাশে চার ফুট করে শোল্ডার রাখা, যাতে ভেঙে না যায়। কিন্তু পাশে শোল্ডার না রেখে মাটি কাটায় সামান্য বৃষ্টিতেই ওই রাস্তা ধসে পড়তে পারে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রকল্পের রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ৮০০ ফুট, চওড়া ১২ ফুট। এটি ২ ফুট উঁচু করে মাটি ভরাট করার কথা। বুধবার পর্যন্ত ৬০০ ফুটের মতো রাস্তায় মাটি ভরাট করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পুরুত্ব ও প্রশস্ততার নির্দেশনাও মানা হয়নি। এমনকি আলেপ খাঁ বাড়ির জামে মসজিদের মাঠটি অনেক আগেই বালু দিয়ে ভরাট করেছে মসজিদ কমিটি। এ প্রকল্পের আওতায় সেখানে কোনো মাটিই ফেলা হয়নি। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়। এর সিপিসি হন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ফোরকান। সাধারণ সম্পাদক করা হয় রাজিবুর রহমান ইমুকে। এ ছাড়া মোতালেব রাঢ়ী, শাহানাজ বেগম ও রেজাউল করিম এ কমিটির সদস্য।
রেজাউল করিমের ভাষ্য, তাঁকে যে কমিটির সদস্য করা হয়েছে, তা-ই জানেন না। সই দিতেও পারেন না তিনি, টিপসই দেন। অথচ কমিটির তালিকায় তাঁর নামে অন্য কারও সই দেওয়া।
অপর সদস্য মোতালেব রাঢ়ীর অভিযোগ, সই জাল করে তাঁকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তিনি জানতেনও না বিষয়টি। তাঁর স্মার্টকার্ড রয়েছে, অথচ পুরোনো এনআইডির কপি সত্যায়িত করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফোরকান কমিটির সঙ্গে জমা দিয়েছেন। ১৫ এপ্রিল এ বিষয়ে ইউএনও বরাবর লিখিত দিয়েছেন। 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রকল্পের সিপিসি মোস্তাফিজুর রহমান ফোরকান সরকারি টাকা লোপাট করছেন। বারেক রাঢ়ী, খালেক মৃধা, নাসির মৃধা, ফারুক রাঢ়ীসহ কয়েকজনের ভাষ্য, জনগণের সুবিধার্থে সরকার রাস্তার কাজে টাকা ব্যয় করে। যেভাবে রাস্তার কাজ হয়েছে, এতে উপকারের চেয়ে দুর্ভোগ বাড়বে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাটি পাশে ধসে পড়তে পারে।
প্রকল্পে আলেপ খাঁ বাড়ির জামে মসজিদের মাঠ ভরাটের কথা আছে। অথচ মসজিদ কমিটির  সভাপতি আবদুর রহিম খাঁ বলেন, কমিটির অর্থায়নে দুই মাস আগে ড্রেজার দিয়ে মাঠ ভরাট করা হয়েছে। তারা সরকারি অনুদান পাননি। তবে ইউপি সদস্য (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) হাফিজুর রহমান ফোরকান ১০ হাজার টাকা দানের আশ্বাস দিয়েছেন। রাস্তার কাজের বিল পেলেই ওই টাকা দেবেন বলে তাঁকে (রহিম খাঁ) জানিয়েছেন।
হাফিজুর রহমান ফোরকানের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি, পরে কল করবে’ বলে সংযোগ কেটে দেন। এ বিষয়ে পিআইও মোহাম্মদ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এসব অনিয়মই যে নিয়ম– তা বোঝানোর চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে ৭ মিনিট ২৯ সেকেন্ড, ৮ মিনিট ৪১ সেকেন্ড ও ১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের তিনটি অডিও রেকর্ড আছে। একটি রেকর্ডে তাঁকে বলতে শোনা গেছে, ‘আপনি যদি বলেন কাগজে-কলমে যে এস্টিমেট আছে, সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে– তাহলে তো তার জায়গাজমি বিক্রি করে কাজ করতে হবে।’ এই অডিওতে তাঁর অন্য পাশে ছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য মো.

ফিরোজ হোসেন (রেজা মেম্বার) ও উপজেলা জামায়াতের রাজনৈতিক সম্পাদক মাওলানা আবুল খায়ের। যদিও তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি। 
পিআইও মোহাম্মদ আলীর ভাষ্য, কাজ শেষ হওয়ার পর ওই প্রকল্প পরিদর্শনে যাননি। এখনও চার টন গম ছাড় করা হয়নি। অনিয়ম পাওয়া গেলে তা আটকে দেবেন। 
দুমকী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুজর মো. ইজাজুল হক বলেন, অভিযোগ পেয়েই তিনি প্যানেল চেয়ারম্যানকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকেছেন। কাজে অনিয়ম হলে তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র এল ক ব স র সদস য কম ট র মসজ দ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ