‘জীবন খাতায় প্রেম কলঙ্কের দাগ দাগাইয়া/ ছাড়িয়া যাইওনারে বন্ধু মায়া লাগাইয়া...’— এই গানের মতোই মায়ায়-যতনে এখনো পাগল হাসানকে আগলে রেখেছেন তাঁর বন্ধুরা। দিন, মাস শেষে আজ এক বছর হলো। সুনামগঞ্জের তরুণ সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান এই ধরায় নেই। কিন্তু তাঁর গান, তাঁর কথা ভোলেননি তাঁর বন্ধু ও সুহৃদেরা।

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো সংগীতশিল্পী পাগল হাসানকে পুরো বছরই তাঁর গানে, কথায়, নানা আয়োজনে মনে রেখেছেন তাঁর বন্ধুরা। জেলা শিল্পকলা একাডেমি অকাল প্রয়াত শিল্পীর নামে একাডেমি চত্বরের এক জায়গায় উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করে সেটির নাম দিয়েছে ‘পাগল হাসান কুঞ্জ’। সম্প্রতি এখানে পাগল হাসান স্মরণে তাঁর গানের আয়োজন করা হয়।

এই কুঞ্জেই আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় পাগল হাসান স্মরণানুষ্ঠান করবে জেলা প্রশাসন। আজ ১৮ এপ্রিল পাগল হাসানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছর জেলার ছাতক উপজেলা শহরের সুরমা সেতু এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। শুধু সুনামগঞ্জ শহরে নয়, ছাতক উপজেলায় তাঁর বাড়িতে মিলাদ, দোয়াসহ নানা আয়োজন রয়েছে। যে স্থানে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, সেই ‘পাগল হাসান চত্বর’-এ আগামীকাল শনিবার পাগল হাসান স্মরণোৎসব করবে স্মৃতি পরিষদ।

মাত্র ৩৩ বছরের জীবন পাগল হাসানের। এই জীবনে মরমি ভাবধারার বেশ কিছু গান লিখে, নিজে সেইসব গানের সুর করে নিজেই গেয়েছেন। তাঁর গানগুলো মায়াভরা। তাঁর গায়কীতে ছিল ভিন্নতা, যেন বুকের গহিনে যতনে থাকা দুঃখকষ্ট ঝরত কথায়, সুরে।
পাগল হাসানের গান ও সুরে দুঃখ ও বিষাদ ফুটে উঠেছে। ছোটবেলায় তিনি বাবাকে হারান। চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতে জীবনের এতটা পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। ‘মনের দুঃখ’ না মিটলেও একটু বৈষয়িক সুখ যখন উঁকি দিচ্ছিল, ঠিক তখন পথেই থেমে গেল তাঁর ‘ভাব জীবনের রেলগাড়ির ইঞ্জিন’।

দুঃখের মধ্যে সহজিয়া জীবন ছিল পাগল হাসানের। ভেতরে দুঃখ চেপে বাইরে লাজুক হাসিতে সবাইকে ভুলিয়ে রাখতেন। যাঁরা তাঁর কাছে ছিলেন, পাশে থাকতেন পাগল হাসানের মৃত্যুর পর তাঁকে যেন কাছের মানুষজনই নতুন করে আবার চিনেছেন। তাঁর জন্য কেঁদেছেন অনেকে। অথচ এই সাদাসিধে তরুণ সবার কাছে, সবার মাঝে থেকেই যেন ছিলেন অচেনা। আর এখন, বিষয়টা যেন তাঁর গানের কথার মতোই ‘মানুষ মইরা গেলে কদর বাইড়া যায়, বাঁইচা থাকতে নিকৃষ্ট কয়, মরলে শ্রেষ্ঠ পদক পায়.

..।’

‘পাগল হাসান’ নামেই নিজের পরিচয় দিতেন। গানে গানে বলতেন নিজের দুঃখের কথা, ‘নদীর বুকে চান্দে খেলায়/ জলের বুকে মিন/ পাগল হাসানের বুকেতে দুঃখ সীমাহীন...।’ শিমুলতলা সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার একটি গ্রাম। এই গ্রামের কৃষক দিলোয়ার হোসেন ওরফে দিলশাদ ও আমিনা বেগমের একমাত্র ছেলে এই হাসান। তাঁদের আরও তিন মেয়ে আছেন। হাসান তৃতীয়। বাবা দিলশাদ মারা যান, তখন হাসানের বয়স পাঁচ। এরপর আমিনা বেগম ছেলেমেয়েদের নিয়ে অকূল দরিয়ায় ভাসেন। সন্তানদের বড় করতে, দুবেলা দুমুঠো ভাতের জোগাড় করতে নিজে শ্রমিকের কাজ করেছেন। সংসারের টানাপোড়েনে হাসানকেও নানা জায়গায় কাজ করতে হয়েছে। মা চেষ্টা করে তাঁদের কিছু লেখাপড়া করান। একপর্যায়ে হাসান সরকারি টেকনিক্যাল স্কুলে অফিস সহায়কের চাকরি নেন।

আরও পড়ুনগান গেয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় শিল্পী পাগল হাসান নিহত১৮ এপ্রিল ২০২৪সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি অকাল প্রয়াত শিল্পীর নামে একাডেমি চত্বরের এক জায়গায় উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করে সেটির নাম দিয়েছে ‘পাগল হাসান কুঞ্জ’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ দ র ঘটন এক ড ম র বন ধ

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মাইলস্টোন ছাত্রীর মৃত্যু

রাজধানীর আফতাবনগর এলাকায় বাসার ছাদ থেকে পড়ে মাইলস্টোন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী তানহা (১৪) মারা গেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে বৃষ্টিতে ভিজতে ছাদে উঠেছিল সে।  

তানহার বোন তাবাসসুম বলেন, বৃষ্টিতে ভেজার সময় হঠাৎ ছাদ থেকে পড়ে যায় তানহা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তানহা পাবনা সদর উপজেলার আব্দুস সালামের মেয়ে। আফতাবনগর পাসপোর্ট অফিসের পাশে পরিবারের সঙ্গে থাকত সে।

এদিকে একই দিন দুপুরে গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চ পার্কের পুকুরে গোসল করতে নেমে ডুবে মারা যায় ইয়াসিন ওরফে নিরব (১৫)। তার বন্ধু জুবায়ের আহমেদ জানায়, দুপুর আড়াইটার দিকে কয়েকজনের সঙ্গে গোসল করতে নামে নিবর। এ সময় পানিতে ডুবে গেলে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সে সৈয়দপুরের মৃত এনায়েত হোসেনের ছেলে। গুলিস্তানে ফুটপাতে সে ঘড়ি বিক্রি করত।

ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক জানান, দু’জনের লাশ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। দুই ঘটনায় আলাদা থানায় অপমৃত্যুর মামলা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ