মায়ার টানে শিল্পী পাগল হাসানকে খোঁজেন তাঁর বন্ধুরা
Published: 18th, April 2025 GMT
‘জীবন খাতায় প্রেম কলঙ্কের দাগ দাগাইয়া/ ছাড়িয়া যাইওনারে বন্ধু মায়া লাগাইয়া...’— এই গানের মতোই মায়ায়-যতনে এখনো পাগল হাসানকে আগলে রেখেছেন তাঁর বন্ধুরা। দিন, মাস শেষে আজ এক বছর হলো। সুনামগঞ্জের তরুণ সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান এই ধরায় নেই। কিন্তু তাঁর গান, তাঁর কথা ভোলেননি তাঁর বন্ধু ও সুহৃদেরা।
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো সংগীতশিল্পী পাগল হাসানকে পুরো বছরই তাঁর গানে, কথায়, নানা আয়োজনে মনে রেখেছেন তাঁর বন্ধুরা। জেলা শিল্পকলা একাডেমি অকাল প্রয়াত শিল্পীর নামে একাডেমি চত্বরের এক জায়গায় উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করে সেটির নাম দিয়েছে ‘পাগল হাসান কুঞ্জ’। সম্প্রতি এখানে পাগল হাসান স্মরণে তাঁর গানের আয়োজন করা হয়।
এই কুঞ্জেই আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় পাগল হাসান স্মরণানুষ্ঠান করবে জেলা প্রশাসন। আজ ১৮ এপ্রিল পাগল হাসানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছর জেলার ছাতক উপজেলা শহরের সুরমা সেতু এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। শুধু সুনামগঞ্জ শহরে নয়, ছাতক উপজেলায় তাঁর বাড়িতে মিলাদ, দোয়াসহ নানা আয়োজন রয়েছে। যে স্থানে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, সেই ‘পাগল হাসান চত্বর’-এ আগামীকাল শনিবার পাগল হাসান স্মরণোৎসব করবে স্মৃতি পরিষদ।
মাত্র ৩৩ বছরের জীবন পাগল হাসানের। এই জীবনে মরমি ভাবধারার বেশ কিছু গান লিখে, নিজে সেইসব গানের সুর করে নিজেই গেয়েছেন। তাঁর গানগুলো মায়াভরা। তাঁর গায়কীতে ছিল ভিন্নতা, যেন বুকের গহিনে যতনে থাকা দুঃখকষ্ট ঝরত কথায়, সুরে।
পাগল হাসানের গান ও সুরে দুঃখ ও বিষাদ ফুটে উঠেছে। ছোটবেলায় তিনি বাবাকে হারান। চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতে জীবনের এতটা পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। ‘মনের দুঃখ’ না মিটলেও একটু বৈষয়িক সুখ যখন উঁকি দিচ্ছিল, ঠিক তখন পথেই থেমে গেল তাঁর ‘ভাব জীবনের রেলগাড়ির ইঞ্জিন’।
দুঃখের মধ্যে সহজিয়া জীবন ছিল পাগল হাসানের। ভেতরে দুঃখ চেপে বাইরে লাজুক হাসিতে সবাইকে ভুলিয়ে রাখতেন। যাঁরা তাঁর কাছে ছিলেন, পাশে থাকতেন পাগল হাসানের মৃত্যুর পর তাঁকে যেন কাছের মানুষজনই নতুন করে আবার চিনেছেন। তাঁর জন্য কেঁদেছেন অনেকে। অথচ এই সাদাসিধে তরুণ সবার কাছে, সবার মাঝে থেকেই যেন ছিলেন অচেনা। আর এখন, বিষয়টা যেন তাঁর গানের কথার মতোই ‘মানুষ মইরা গেলে কদর বাইড়া যায়, বাঁইচা থাকতে নিকৃষ্ট কয়, মরলে শ্রেষ্ঠ পদক পায়.
‘পাগল হাসান’ নামেই নিজের পরিচয় দিতেন। গানে গানে বলতেন নিজের দুঃখের কথা, ‘নদীর বুকে চান্দে খেলায়/ জলের বুকে মিন/ পাগল হাসানের বুকেতে দুঃখ সীমাহীন...।’ শিমুলতলা সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার একটি গ্রাম। এই গ্রামের কৃষক দিলোয়ার হোসেন ওরফে দিলশাদ ও আমিনা বেগমের একমাত্র ছেলে এই হাসান। তাঁদের আরও তিন মেয়ে আছেন। হাসান তৃতীয়। বাবা দিলশাদ মারা যান, তখন হাসানের বয়স পাঁচ। এরপর আমিনা বেগম ছেলেমেয়েদের নিয়ে অকূল দরিয়ায় ভাসেন। সন্তানদের বড় করতে, দুবেলা দুমুঠো ভাতের জোগাড় করতে নিজে শ্রমিকের কাজ করেছেন। সংসারের টানাপোড়েনে হাসানকেও নানা জায়গায় কাজ করতে হয়েছে। মা চেষ্টা করে তাঁদের কিছু লেখাপড়া করান। একপর্যায়ে হাসান সরকারি টেকনিক্যাল স্কুলে অফিস সহায়কের চাকরি নেন।
আরও পড়ুনগান গেয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় শিল্পী পাগল হাসান নিহত১৮ এপ্রিল ২০২৪সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি অকাল প্রয়াত শিল্পীর নামে একাডেমি চত্বরের এক জায়গায় উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করে সেটির নাম দিয়েছে ‘পাগল হাসান কুঞ্জ’উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ দ র ঘটন এক ড ম র বন ধ
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত