মাগুরার শিশুটি ধর্ষণের পর মৃত্যুর এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে দেখছিলাম। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি, সেটা হলো দীর্ঘসূত্রতা। একটি মামলার নিষ্পত্তি হতে হতে অনেক সময় একটি প্রজন্মই পার হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ যখন আদালতের দরজায় যেতে চান, তখন তিনি ন্যায়বিচারের আশায় যান।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন—সময়, টাকা আর ধৈর্য তিনটাকেই হার মানাতে হয়। তখন মানুষ শুধু হতাশই হন না, বিশ্বাস হারান পুরো ব্যবস্থার ওপর।

তবে আজকের দিনে এসে আমরা আর একা নই। আমাদের পাশে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), যেটি ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বিচারব্যবস্থার এই দীর্ঘসূত্রতা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। ব্যাপারটা এমন না যে এআই এসে বিচারকের জায়গা নিয়ে নেবে—বরং, এআই বিচারকের কাজে সহায়ক হতে পারে, আর আগে থেকে যে প্রক্রিয়াগুলো অতি ধীরগতির ছিল, সেগুলোকেই গতি দিতে পারে।

যেমন ধরা যাক, একটা মামলা ফাইল করার প্রক্রিয়ায় কী কী দরকার—নথি তৈরি, আগের রায় খুঁজে আনা, আইনি ধারা অনুসন্ধান, ডেটা অর্গানাইজ করা ইত্যাদি। এই কাজগুলো করতে একজন আইনজীবী বা সহকারী অনেক সময় ব্যয় করে। কিন্তু এআই টুল দিয়ে এসব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায়। এর ফলে কাগজপত্র ঠিকঠাক জমা পড়ে, ভুল কম হয়, এবং বিচারক সরাসরি মূল বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারেন।

যদি এআই বা অন্য ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে সিস্টেমটা একটু গুছিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে মানুষকে দিনের পর দিন কোর্টে ঘুরে বেড়াতে হবে না, মামলার নথি হারিয়ে যাবে না, কিংবা বছরের পর বছর শুনানির তারিখ পিছিয়ে যাবে না। মানুষ তখন অন্তত বুঝতে পারবেন—তাঁর কণ্ঠস্বর কেউ শুনছে, বিচারব্যবস্থাটা তাঁর পাশে আছে।

এ ছাড়া এআই দিয়ে অগ্রাধিকার নির্ধারণও করা যায়—মানে কোন মামলা আগে শুনানি দরকার, কোনটা অপেক্ষা করতে পারে, বা কোনটা জরুরি। এআই আগের রায় বিশ্লেষণ করে বলতেও পারে, একটি মামলার নিষ্পত্তিতে সাধারণত কত সময় লাগে। এতে মামলা ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর হয়, মানুষও একটা ধারণা পান, তাঁর মামলা কত দূর এগোল। এই জিনিসগুলোর প্রায় সবকিছুই অনলাইনে দেখছেন উন্নত দেশগুলোর মানুষ।

এভাবে শুরুতেই যদি এআই বা অন্য ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে সিস্টেমটা একটু গুছিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে মানুষকে দিনের পর দিন কোর্টে ঘুরে বেড়াতে হবে না, মামলার নথি হারিয়ে যাবে না, কিংবা বছরের পর বছর শুনানির তারিখ পিছিয়ে যাবে না। মানুষ তখন অন্তত বুঝতে পারবেন—তাঁর কণ্ঠস্বর কেউ শুনছে, বিচারব্যবস্থাটা তাঁর পাশে আছে।

মাগুরার শিশুটির মৃত্যুর খবরে সাত দিনের যে একটা টাইমলাইন ছিল, সেটাও হারাত না। আমাদের জন্য এ ধরনের জিনিসগুলো খুবই কষ্ট দেয়। সরকারের ইচ্ছে আছে, কিন্তু টুলের অভাবে সরকারকে অকারণে গালি খেতে হচ্ছে।

সুতরাং বিচারব্যবস্থার এই অকারণ দেরি, এই হাহাকার আমরা চাইলে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে অনেকটাই কমিয়ে ফেলতে পারি। দরকার শুধু ইচ্ছা, নেতৃত্ব, আর সিস্টেমের সঙ্গে প্রযুক্তির একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা। তাহলেই মানুষ বলবে—‘বিচার পেতে এত দিন লাগত, এখন তো তাড়াতাড়ি হচ্ছে!’ এবং এই প্রযুক্তির শীর্ষে থেকে এগুলো আমাদের ‘সলভ’ করতে হবে। আমাদের স্পর্শ করতে পারতে হবে প্রতিটি মানুষের জীবন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করি বলে সরকার চাইলে এই জায়গায় সহায়তা দিতে রাজি আছি। জীবনের শুরুতে সামরিক বাহিনীতে ঢুকেই আমরা একটা জিনিস শিখেছিলাম, জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড।

রকিবুল হাসান টেলিকম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় মানবিক রাষ্ট্র বইয়ের লেখক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত ব যবস থ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি। 

৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে। 

আরো পড়ুন:

দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে

সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা

২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা। 

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী। 

উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” 

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।” 

চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়। 

মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ