মাগুরার শিশু ধর্ষণ: বিচারব্যবস্থাকে যেভাবে বদলে দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
Published: 19th, April 2025 GMT
মাগুরার শিশুটি ধর্ষণের পর মৃত্যুর এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে দেখছিলাম। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি, সেটা হলো দীর্ঘসূত্রতা। একটি মামলার নিষ্পত্তি হতে হতে অনেক সময় একটি প্রজন্মই পার হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ যখন আদালতের দরজায় যেতে চান, তখন তিনি ন্যায়বিচারের আশায় যান।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন—সময়, টাকা আর ধৈর্য তিনটাকেই হার মানাতে হয়। তখন মানুষ শুধু হতাশই হন না, বিশ্বাস হারান পুরো ব্যবস্থার ওপর।
তবে আজকের দিনে এসে আমরা আর একা নই। আমাদের পাশে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), যেটি ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বিচারব্যবস্থার এই দীর্ঘসূত্রতা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। ব্যাপারটা এমন না যে এআই এসে বিচারকের জায়গা নিয়ে নেবে—বরং, এআই বিচারকের কাজে সহায়ক হতে পারে, আর আগে থেকে যে প্রক্রিয়াগুলো অতি ধীরগতির ছিল, সেগুলোকেই গতি দিতে পারে।
যেমন ধরা যাক, একটা মামলা ফাইল করার প্রক্রিয়ায় কী কী দরকার—নথি তৈরি, আগের রায় খুঁজে আনা, আইনি ধারা অনুসন্ধান, ডেটা অর্গানাইজ করা ইত্যাদি। এই কাজগুলো করতে একজন আইনজীবী বা সহকারী অনেক সময় ব্যয় করে। কিন্তু এআই টুল দিয়ে এসব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায়। এর ফলে কাগজপত্র ঠিকঠাক জমা পড়ে, ভুল কম হয়, এবং বিচারক সরাসরি মূল বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারেন।
যদি এআই বা অন্য ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে সিস্টেমটা একটু গুছিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে মানুষকে দিনের পর দিন কোর্টে ঘুরে বেড়াতে হবে না, মামলার নথি হারিয়ে যাবে না, কিংবা বছরের পর বছর শুনানির তারিখ পিছিয়ে যাবে না। মানুষ তখন অন্তত বুঝতে পারবেন—তাঁর কণ্ঠস্বর কেউ শুনছে, বিচারব্যবস্থাটা তাঁর পাশে আছে।এ ছাড়া এআই দিয়ে অগ্রাধিকার নির্ধারণও করা যায়—মানে কোন মামলা আগে শুনানি দরকার, কোনটা অপেক্ষা করতে পারে, বা কোনটা জরুরি। এআই আগের রায় বিশ্লেষণ করে বলতেও পারে, একটি মামলার নিষ্পত্তিতে সাধারণত কত সময় লাগে। এতে মামলা ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর হয়, মানুষও একটা ধারণা পান, তাঁর মামলা কত দূর এগোল। এই জিনিসগুলোর প্রায় সবকিছুই অনলাইনে দেখছেন উন্নত দেশগুলোর মানুষ।
এভাবে শুরুতেই যদি এআই বা অন্য ডিজিটাল টুল ব্যবহার করে সিস্টেমটা একটু গুছিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে মানুষকে দিনের পর দিন কোর্টে ঘুরে বেড়াতে হবে না, মামলার নথি হারিয়ে যাবে না, কিংবা বছরের পর বছর শুনানির তারিখ পিছিয়ে যাবে না। মানুষ তখন অন্তত বুঝতে পারবেন—তাঁর কণ্ঠস্বর কেউ শুনছে, বিচারব্যবস্থাটা তাঁর পাশে আছে।
মাগুরার শিশুটির মৃত্যুর খবরে সাত দিনের যে একটা টাইমলাইন ছিল, সেটাও হারাত না। আমাদের জন্য এ ধরনের জিনিসগুলো খুবই কষ্ট দেয়। সরকারের ইচ্ছে আছে, কিন্তু টুলের অভাবে সরকারকে অকারণে গালি খেতে হচ্ছে।
সুতরাং বিচারব্যবস্থার এই অকারণ দেরি, এই হাহাকার আমরা চাইলে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে অনেকটাই কমিয়ে ফেলতে পারি। দরকার শুধু ইচ্ছা, নেতৃত্ব, আর সিস্টেমের সঙ্গে প্রযুক্তির একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা। তাহলেই মানুষ বলবে—‘বিচার পেতে এত দিন লাগত, এখন তো তাড়াতাড়ি হচ্ছে!’ এবং এই প্রযুক্তির শীর্ষে থেকে এগুলো আমাদের ‘সলভ’ করতে হবে। আমাদের স্পর্শ করতে পারতে হবে প্রতিটি মানুষের জীবন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করি বলে সরকার চাইলে এই জায়গায় সহায়তা দিতে রাজি আছি। জীবনের শুরুতে সামরিক বাহিনীতে ঢুকেই আমরা একটা জিনিস শিখেছিলাম, জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড।
রকিবুল হাসান টেলিকম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় মানবিক রাষ্ট্র বইয়ের লেখক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত ব যবস থ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।
আরো পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা
সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ
এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী