ছোঁয়াচে রোগের হাসপাতালে কেন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
Published: 19th, April 2025 GMT
যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগের সংক্রমণ-ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে ৬০ বছর আগে শহর থেকে কিছুটা দূরে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে স্থাপন করা হয় ১০০ শয্যার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। তখন সেখানে জনবসতি ছিল কম, প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল নিরিবিলি। ২৮ দশমিক ২৯ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল এলাকায় ছিল পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, ছিল পুকুর, গাছগাছালি। পরে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি), ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনো (আইএইচটি)। এতে করে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আয়তন সংকুচিত হয়েছে, নিরিবিলি পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, জনসম্পৃক্ততা বাড়ায় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সেবা ও চিকিৎসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তার ওপর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জায়গায় স্থাপিত হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। বক্ষব্যাধি হাসপাতাল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তলাবিশিষ্ট ভবনে স্থানান্তর করার কথা। ২০১৮ সালে হাসপাতালের সমস্ত স্থাপনাসহ খালি জমি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তর করা হয়। এতে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সেবা ও চিকিৎসা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসম্পৃক্ত স্থানে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যক্ষ্মা রোগীদের জন্য উন্মুক্ত পরিবেশ বাধ্যতামূলক।
এ ব্যাপারে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক তত্ত্বাবধায়ক ডা.
বর্তমানে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের অধীনে আছে মাত্র সাত একর জমি। খালি জায়গা আছে ৯ একর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৬০ বছরে বারবার সংকুচিত হয়েছে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পরিধি। ফলে যক্ষ্মা রোগীর যে পরিবেশে চিকিৎসা পাওয়ার কথা সেটা পাবেন না বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালে সাধারণ যক্ষ্মা, এমবিআর যক্ষ্মা, প্রিএক্সডিআর যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জানা যায়, ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জায়গায় চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ১০ তলা ভবন তৈরির কথা রয়েছে। বর্তমানে স্থাপিত তিনতলা ভবনে চলছে মেডিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালে আন্তঃবিভাগ প্রায় প্রতিদিন রোগীতে ভর্তি থাকে। ভবনের নিচতলায় পুরুষ ও দ্বিতীয় তলায় নারী রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৩৫ জন যক্ষ্মা রোগী ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্য জনবল কর্মরত রয়েছেন।
যক্ষ্মা রোগীদের কফ পরীক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালে রয়েছে জিন এক্সপার্ট নামের কফ পরীক্ষার আধুনিক মেশিন। হাসপাতালে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ও অডিও মেট্রিক মেশিনও রয়েছে।
২০২৪ সালে ৫৮৯ জন, ২০২৩ সালে ৭২০ জন, ২০২২ সালে ৫৯৫ জন যক্ষ্মা রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এসব রোগী এমডিআর ও এক্সডিআরে আক্রান্ত। তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের দূর-দূরান্ত থেকেও রোগীরা এ হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন।
জানা যায়, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল স্থানান্তর করা হবে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তলা বিশিষ্ট ভবনে। হাসপাতাল স্থানান্তর নিয়ে যক্ষ্মা রোগীর অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ। আর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জনসম্পৃক্ত স্থানে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যক্ষা রোগীদের জন্য উন্মুক্ত পরিবেশ বাধ্যতামূলক। তাই যক্ষ্মা রোগী ও তাদের স্বজনদের দাবি করছে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যেন অন্য কোন স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়।
বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক এবং ব্যক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. দিদারুল আলম বলেন, ‘যেসব রোগী ছয় মাসেও চিকিৎসায় ভালো হয় না, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। যক্ষ্মা শতভাগ নিরাময়যোগ্য রোগ। এই রোগীদের চিকিৎসা নিরিবিলি ও জনসম্পৃক্ত নয় এমন হাসপাতালে হওয়া দরকার।
এদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসা। প্রায় ৬০ বছর আগে নির্মিত হাসপাতাল ভবন ৭ বছর আগে ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করে গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসা সেবা। গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটির বিভিন্ন অবকাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লেও নতুন স্থাপনা নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ভূমিকম্প হলে স্থাপনা ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জনসম প ক ত র জন য পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচন করবেন মির্জা আব্বাস
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তালিকা প্রকাশ করেন।
আরো পড়ুন:
যে আসন থেকে লড়বেন তারেক রহমান
২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, ৩টি আসনে লড়বেন খালেদা জিয়া
এর আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে দলীয় প্রার্থীদের প্রাথমিক নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
এ সময় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভ্যাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা গণতান্ত্রিক নির্বাচন পেতে যাচ্ছি। সেই নির্বাচন প্রায় ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব আসনে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে, সেটি বিএনপি সমন্বয় করে নেবে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দিনাজপুর-৩ থেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসন থেকেও লড়বেন তিনি।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ