ঐক্য-অনৈক্যের রাজনীতি ও ক্ষমতার ভারসাম্য
Published: 21st, April 2025 GMT
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সর্বাত্মক প্রতিরোধে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শীর্ষ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে সম্মুখসারিতে না থাকলেও গত দেড় দশকে সরকারের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের অবদান নিঃসন্দেহে প্রণিধানযোগ্য; দীর্ঘ আন্দোলনে ত্যাগ-তিতিক্ষা ও নিপীড়নের অভিজ্ঞতায় বিরোধী দলগুলো পরস্পরের মিত্র হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে গণঅভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ছাত্রনেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল এনসিপি কম সময়ের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে হাজির হয়েছে। নির্বাচন ও সংবিধান প্রশ্নে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলো যার যার অবস্থান স্পষ্ট করতে শুরু করেছে। আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়েই শুধু নয়; দেশের শাসন কাঠামো সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও প্রবণতা সুস্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দু’দফা বৈঠকে নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের প্রধান সুপারিশগুলোর বিষয়ে সরাসরি আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। সমকাল জানাচ্ছে, ‘সাধারণ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন, সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন ও গণভোট এবং জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি গঠনে শক্ত আপত্তি আছে বিএনপির। তারা এ বিষয়ে কোনো আপসও করবে না (২০.
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির মতের সরাসরি বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করেছে এনসিপি। তাদের বিবেচনায় বর্তমান ক্ষমতা কাঠামো এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক। শেখ হাসিনা সরকারের ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠার এটি অন্যতম কারণ। মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচন দিলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। মৌলিক সংস্কার বলতে এনসিপি সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রস্তাবগুলোই সামনে নিয়ে এসেছে।
২.
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে সরকার আবারও জানিয়েছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে সংস্কার কমিটির প্রস্তাবিত প্রধান কোনো সংস্কার প্রস্তাবনাতেই তারা একমত নন। বোঝাই যাচ্ছে, ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রশ্নে বিএনপি রাজি নয়; বরং আইন ও শৃঙ্খলাজনিত কিছু নিয়মতান্ত্রিক সংস্কারের পরপরই নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী। লক্ষণীয়, নবগঠিত এনসিপি ছাড়া পুরোনো রাজনৈতিক দলের প্রায় সবাই ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরিতে মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে উচ্চকিত নয়। ন্যূনতম সংস্কার শেষে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির ব্যাপারে ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী দল, শীর্ষ বাম দলগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে শুরু করেছে বিএনপি। এ ব্যাপারে সব দলের মধ্যে ঐকমত্য তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
৩.
স্পষ্টতই সংস্কারের প্রশ্নে বিএনপি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করতে চাইছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন হলে বিএনপির জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি বলেই তাদের এই ভূমিকা। অন্যদিকে প্রস্তাবিত প্রধান সংস্কারগুলোর লক্ষ্য ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে একব্যক্তিকেন্দ্রিকতা থেকে দূরে রাখা। এই চেক অ্যান্ড ব্যালান্স বিএনপির পছন্দ হচ্ছে না। তাহলে কি আমরা বলতে পারি– বিএনপি আগের শাসন পদ্ধতির কোনো গুণগত পরিবর্তন চাইছে না? চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনা কর্তৃত্ববাদের অবসান। ক্ষমতার ভারসাম্য না আনলে তা আদৌ সম্ভবপর নয়।
লক্ষণীয় আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মৌলিক সংস্কার বা ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে সকল রাজনৈতিক দল সরব না হলেও আওয়ামী লীগ প্রশ্নে সকলে উচ্চকিত এবং তাদের পুনর্বাসনের তীব্র বিরোধী। এটি একদিক থেকে যথার্থ বটে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব যে দম্ভ ও অগণতান্ত্রিক আচরণ দেখিয়েছেন, তার খেসারত দিতে হয়েছে জাতিকে বহু প্রাণের বিনিময়ে। এর জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আসতে হবে; তার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া সঠিক হবে? ২০০১ ও ২০০৮ সালের সর্বশেষ স্বীকৃত দুই নির্বাচনে মোটামুটি ৪০ শতাংশ করে ভোট পেয়ে যথাক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে বিজয়ী হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করলেও তাদের কর্মী-ভোটার সংখ্যা এখনও প্রচুর। এদের সবাই অপরাধের সঙ্গে জড়িতও নন। কাজেই তাদেরকে নির্বাচনের বাইরে রাখা সংগত হবে না। এই বাস্তবতার পরও সব কয়টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাইছে নিশ্চিতভাবে এই বিবেচনায়– ভোটের বাজারে আওয়ামী ভোটের ভাগ গোলায় তোলার জন্য।
এই চিন্তা ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরির সংস্কার প্রস্তাবনার বিরুদ্ধাচারের মতোই এক প্রকারের কূটচাল। দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দল দুটির একটি নির্বাচনে অনুপস্থিত থাকলে ফলাফল একদিকে অতি ঝুঁকে যাবার আশঙ্কা থাকে। এই যুক্তি উত্থাপন করলেই তাঁকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা না দিয়ে শান্তভাবে ভেবে দেখা যেতে পারে। আওয়ামী লীগ যে দেশকে নরক করে তুলেছিল, জাতিই তা নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে জানিয়ে দিক। তার জন্য দলটিকে নির্বাচনে আসতে দিতে হবে। অপরাধী নেতৃত্বকে বিচারের হাতে ছেড়ে দিয়েই নির্বাচনে আসতে হবে আওয়ামী লীগকে।
আর বিএনপি? জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে যেমন বোঝা যাচ্ছে, ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরিতে বিএনপি প্রস্তুত নয় এখনও। সে ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে চাপ তৈরি করা যেতে পারে। পাল্টা যুক্তি আসতে পারে, সরকার বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে কিনা? মানতেই হবে, বর্তমান সরকার এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় এসেছে। সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত করে রাষ্ট্রের সকল স্তম্ভ তার উপাসনায় ব্যস্ত থাকে– এই চিরপুরাতন রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে এ দেশের মানুষের মুক্তি প্রয়োজন। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মূল প্রেরণা তা-ই। আর এ জন্য অনিবার্য ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজন মৌলিক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
বিএনপি স্পষ্টভাবেই জানাচ্ছে, নির্বাচিত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কারকাজ করবে। তারা এটি বলছে, কারণ অধিকাংশ রাজনীতিবিদের ধারণা, গণতন্ত্র মানে শুধুই নির্বাচন। না, সুষ্ঠু নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়; একটি ধাপ মাত্র। মানুষের সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করবার জন্য শাসন কাঠামোকে গণতান্ত্রিক করে গড়ে তোলা জরুরি। এই কাজ দুই/চার মাসে নিশ্চিত হবে না। যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোতে পূর্ণ গণতন্ত্রায়ন ঘটাতে শত বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। আমাদের দেশেও অবশ্যই সময় লাগবে; তবে প্রযুক্তি ও পূর্বজদের অভিজ্ঞতার কল্যাণে আজ আর শত বছর প্রয়োজন হবে না। প্রয়োজন ন্যায়বোধ ও নীতি চর্চার। আইন সবার জন্যই প্রযোজ্য; ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে পারলে তা প্রত্যেকের জন্যই প্রয়োজনীয় ও বিবেচ্য হয়ে উঠবে। আর এটি যত দ্রুত সম্ভবপর হয়ে উঠবে, জাতির জন্য ততই তা হবে যথার্থ ও উপকারী।
মাহবুব আজীজ: উপসম্পাদক, সমকাল; সাহিত্যিক
mahbubaziz01@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত গণঅভ য ত থ ন প রস ত ব ব এনপ র ত র জন র জন য আওয় ম সরক র এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তি মীমাংসা না করে সংবিধান সংস্কারের দিকে না এগোতে অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের ৫৩ ব্যক্তি। এতে দেশ দীর্ঘস্থায়ী সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে মতৈক্য না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে আলোচনা চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান রেখেছেন তাঁরা।
গত সপ্তাহে ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে তাদের সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলার মধ্যে আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান এই নাগরিকেরা।
জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরের পর এই সনদ বাস্তবায়নে সুপারিশ গত ২৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেয় ঐকমত্য কমিশন। এর পর থেকে বিভিন্ন দলের আপত্তির বিষয়গুলো সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে না থাকা নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছে, আবার গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই সনদে সই করেনি।
অনৈক্য থাকলে সংকট
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব থেকে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনৈক্য স্পষ্ট হওয়ার বিষয়টি নজরে আসার কথা জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।
এই প্রেক্ষাপটে তাঁরা বলেন, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে একদল মানুষের ঐকান্তিক চেষ্টার ফল বহুল আলোচিত এই জুলাই সনদ। সে জন্য তাঁরা ধন্যবাদপ্রাপ্য। তবে এ সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন করে অনৈক্যের সুর বেজে উঠেছে। জাতীয় ঐক্যকে প্রাধান্য দিয়ে সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ঐকমত্যে পৌঁছানো পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম চলমান থাকা জরুরি।
৫৩ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়, তাঁরা মনে করেন সংবিধান যেকোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এবং সম্মিলনের প্রতীক। সংবিধান ও সংসদের কার্যক্রম, মর্যাদা অটুট রাখতে ঐক্যের বিকল্প নেই। ঐকমত্য কমিশন ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দেওয়ার ফলে এ ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তির মীমাংসা না করে তাড়াহুড়া করে সংবিধানে সংস্কার আনলে অনৈক্য দীর্ঘস্থায়ী হবে ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর সংকট দেখা দিতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে ঐক্য না থাকলে ‘ফ্যাসিস্ট’ শক্তির ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে বলে হুঁশিয়ার করে বিবৃতিদাতারা বলেন, যার ফলে সনদ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নির্ধারিত গণভোট বা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনও ব্যর্থ হতে পারে।
দুই বছর বা যৌক্তিক সময়
গত ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ সুপারিশ হস্তান্তরের পরদিন গতকাল শুক্রবার শেষ হয়েছে। তার এক দিন পরই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বানে ৫৩ নাগরিকের বিবৃতি এল।
বিবৃতিতে বলা হয়, অন্যান্য দেশের সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একাধিক বছরব্যাপী আলাপ চলতে দেখা যায়। বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া সমীচীন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সব বিষয়ে সব দল একমত হবে, এমনটা আশা করা অযৌক্তিক। সে ক্ষেত্রে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদে এবং সংসদের বাইরে এসব আপত্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া জরুরি। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছালে তা সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন তাদের দেওয়া ২৭০ দিনের (৯ মাস) সময়সীমা বাড়িয়ে দুই বছর বা যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করতে পারে।
ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংস্কার আদেশের যে খসড়া দিয়েছে, সেখানে ২৭০ দিনের মধ্যে প্রস্তাব পাসের কথা বলা হয়েছে। বিকল্প সুপারিশে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে তা সংসদ তথা সংবিধান সংস্কার পরিষদ পাস না করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।
ঐকমত্য কমিশনকে কাজ চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি এতে নতুন করে লেখক, চিন্তক, অধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য অংশীজনকে সংযুক্ত করার প্রস্তাব রাখেন বিবৃতিদাতারা।
তাঁরা বলেন, অরাজনৈতিক অংশের অংশগ্রহণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিভেদ কমিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
বিবৃতি দিয়েছেন যাঁরা
গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন সালাহ উদ্দিন শুভ্র, তাতে অন্যরা সম্মতি জানিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। বিবৃতিদাতারা হলেন কবি কাজল শাহনেওয়াজ, শিক্ষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর রাজী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার ও আমিরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তফা নাজমুল মনসুর তমাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল ফজল, আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ, লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব; কবি, লেখক ও সংগঠক নাহিদ হাসান, গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবুল কালাম আল আজাদ, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, নৃবিজ্ঞানী সায়েমা খাতুন, কথাসাহিত্যিক গাজী তানজিয়া, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, প্রকাশক সাঈদ বারী ও মাহাবুবুর রহমান, কবি মৃদুল মাহবুব, সংগীতশিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অমল আকাশ, কবি ও সংগঠক চিনু কবির, প্রকাশক সাঈদ বারী, কবি ও অনুবাদক জামাল ভাস্কর, সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম সাব্বির, আইনজীবী মমিনুর রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংগীতশিল্পী ইমামুল বাকের এপোলো, সাংবাদিক অনি আতিকুর রহমান, কবি ও সাংবাদিক পলিয়ার ওয়াহিদ, কথাসাহিত্যিক রাসেল রায়হান, কবি সানাউল্লাহ সাগর, কবি ও সংগঠক এনামুল হক পলাশ, রাজনৈতিক কর্মী শাকিলা খাতুন, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল মজিদ অন্তর, গবেষক তানভীর আহমেদ, কবি সোয়েব মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরী, চলচ্চিত্র গবেষক হারুন-অর-রশিদ, কবি ও কথাসাহিত্যিক তছলিমা শাহনুর, কবি মাসুম মুনওয়ার, লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী আরিফ রহমান, কবি ও কথাসাহিত্যিক জব্বার আল নাঈম, মানবাধিকারকর্মী ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য রাফসান আহমেদ, থিয়েটার কর্মী আশরাফুল ইসলাম, কবি ও সম্পাদক সাজ্জাদ বিপ্লব, কথাসাহিত্যিক পিন্টু রহমান, জুলাই যোদ্ধা রকিব লিখন, চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহনেওয়াজ আরেফিন, কবি ও কথাসাহিত্যিক শাদমান শাহিদ, কবি ও কথাসাহিত্যিক আফসানা জাকিয়া, কবি ও অধিকারকর্মী শামীম রেজা এবং কবি ও অধিকারকর্মী ফুয়াদ সাকী।