গাড়ি দুর্ঘটনায় ৯ বছর আগে মারা গেছেন প্রেমিক। প্রেমিকের প্রায় ছয় লাখ ইউয়ান ঋণ শোধ করেছেন এক চীনা নারী। দেখভাল করছেন প্রয়াত প্রেমিকের অসহায় মা–বাবাকে।

ভালোবাসার এই অনন্য নজির স্থাপন করে অনলাইনে প্রশংসায় ভাসছেন ৩৪ বছরের ওয়াং তিং। তিনি চীনের মধ্যাঞ্চলের হুনান প্রদেশের বাসিন্দা। তাঁর প্রয়াত প্রেমিকের নাম জাং জি।

২০১৬ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান জাং। তার আগে কয়েক বছর একসঙ্গে ছিলেন ওয়াং ও জাং।

জাং একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর ওয়াং জানতে পারেন, জাংয়ের কর্মচারীদের বেতন পাওনা আছে, তিনি যেসব পণ্য কিনেছেন, সেগুলোর দামও পরিশোধ করা বাকি এবং জাং তাঁর বন্ধুদের কাছ থেকেও ঋণ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে জাংয়ের ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ইউয়ান (৮২ হাজার মার্কিন ডলার)।

ওয়াং বলেন, চীনা বিশ্বাস অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তাঁর সব ঋণ বাতিল হয়ে যায়। এমনকি তিনি যখন তাঁর প্রয়াত প্রেমিকের রেখে যাওয়া ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ নেন, তখন তাঁর চারপাশের অনেকে তাঁকে এটা না করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কিন্তু ওয়াং তাঁর মৃত প্রেমিকের ঋণ পরিশোধ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। কারণ, জাংয়ের মা–বাবার পক্ষে ছেলের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না। বয়স্ক এই দম্পতির বার্ষিক আয় মাত্র ৫০ হাজার ইউয়ান।

ওয়াং বলেন, ‘যদি আমি ঋণ পরিশোধ না করি, তবে ওই সব মানুষ কীভাবে তাদের সন্তানদের এবং বয়স্কদের দেখভাল করবে! আমাকে জাংয়ের জীবনের গল্প সুন্দরভাবে শেষ করতেই হতো।’

কারণ, ওয়াং চাননি তাঁর মৃত প্রেমিককে মানুষ একজন অসৎ মানুষ হিসেবে মনে রাখুক।

এ জন্য ওয়াং প্রথমেই তাঁর জমানো দুই লাখ ইউয়ান ব্যয় করেন। ঋণ পরিশোধ করতে ওয়াং তাঁর বন্ধুদের থেকে আরও ৬০ হাজার ইউয়ান ধার করেন। এমনকি নিজের আয় বৃদ্ধি করতে তিনি অন্যান্য প্রদেশেও কাজ করা শুরু করেন।

শুধু ঋণ পরিশোধই নয়; বরং ওয়াং তাঁর প্রয়াত প্রেমিকের মা–বাবা ও একজন চাচার দেখভালও করতে থাকেন।

জাংয়ের মৃত্যুর পর তাঁর মা সন্তানের শোকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে সুস্থ করতে ওয়াং প্রতিবছর বয়স্ক ওই নারীকে বেড়াতে নিয়ে যান। জাংয়ের বাবার হৃদ্‌রোগের চিকিৎসার খরচও বহন করেন ওয়াং। জাংয়ের এক চাচারও খোঁজ রাখেন ওয়াং, বছরে কয়েকবার তাঁর বাড়িতে যান। জাংয়ের এই চাচার একমাত্র ছেলে মানসিক রোগে ভুগছেন।

২০২০ সালে ওয়াং বিয়ে করেছেন। বিয়েতে সাবেক প্রেমিকের মা–বাবাকে দাওয়াত করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, ‘আপনারা সব সময় আমার মা–বাবা হয়ে থাকবেন। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে থাকবেন। আমার ছয়জন মা–বাবা হবে।’

ওয়াংয়ের উদারতা ও দায়িত্ববোধের এই গল্প অনলাইনে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। একজন লিখেছেন, ‘তিনি একজন বিশ্বস্ত ও নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। নিশ্চয়ই তাঁর সাবেক প্রেমিকের মা–বাবা ছেলের মৃত্যুর আগে ওয়াংয়ের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেছেন।’

আরেকজন লিখেছেন, ‘তাঁর স্বামীর সৌভাগ্য যে এমন একজনকে বিয়ে করতে পেরেছেন।’

যদিও কেউ কেউ ওয়াংকে ‘প্রেমকাতর’ বলে কটাক্ষ করেছেন। তবে ওয়াংয়ের উদারতা তাতে খাটো হয়ে যায় না।

ওয়াং গত মাসেই এক শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার ইউয়ান দান করেছেন।

ওয়াং এখন দুটি কোম্পানির মালিক। একটি খাবার উৎপাদন করে এবং অন্যটি পর্যটন ব্যবসা। কেউ কেউ বলেছেন, অন্যের প্রতি দয়ালু হওয়ার পুরস্কার হিসেবে ওয়াং তাঁর ব্যবসায় সাফল্য পাচ্ছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন ইউয় ন

এছাড়াও পড়ুন:

তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া

পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান। শনিবার (১ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন ঘোষিত চূড়ান্ত ফলে দেখা যায়, বুধবারের নির্বাচনে তিনি ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। খবর বিবিসির। 

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভাব এবং ব্যাপক অস্থিরতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন ঘিরে দেশটিতে গত কয়েক দিনে সহিংসতায় কয়েক শ’ মানুষ নিহত ও বহু আহত হয়েছে। দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে নিহতের সঠিক সংখ্যা যাচাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

সরকার সহিংসতার মাত্রা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অস্থিরতা দমনে দেশজুড়ে কারফিউও বাড়ানো হয়েছে।

ক্ষমতাসীন চামা চা মাপিন্দুজি (সিসিএম) দলের প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসানের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভোটের আগে ভিন্নমত পোষণকারী ও বিরোধীদের ওপর কঠোর দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। প্রধান দুই বিরোধী দলকেই নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয়নি।

ফলে নির্বাচনের পরই বৃহত্তম নগরী দার-এস-সালাম ও অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবারও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। অস্থিরতা বন্ধ করার জন্য সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা সামিয়ার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে এবং অসংখ্য গাড়ি, পেট্রোল স্টেশন এবং থানায় আগুন দেয়। 

বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেশিরভাগ তরুণ বিক্ষোভকারীরা, যারা নির্বাচনকে অন্যায্য বলে সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, সরকার প্রধান বিরোধী নেতাদের দমন করে গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করছে। প্রধান দুই বিরোধী নেতার মধ্যে একজন কারাগারে রয়েছেন এবং অন্যজনকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী চাদেমা দলের একজন মুখপাত্র শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে তানজানিয়ার একটি কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, কমপক্ষে ৫০০ জন মারা যাওয়ার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কম্বো থাবিত এই সহিংসতাকে ‘এখানে-সেখানে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরাপত্তা বাহিনী খুব দ্রুত ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করেছে।”

প্রধান দুই বিরোধী দলীয় নেতার মধ্যে চাদেমা দলের টুন্ডু লিসুকে নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রদোহের অভিযোগ আটক করা হয়, যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এসিটি-ওয়াজালেনডো দলের নেতা লুহাগা এমপিনাকে আইনি কৌশল খাটিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।

১৬টি প্রান্তিক দল, যাদের কারোরই ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন ছিল না, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

সামিয়ার ক্ষমতাসীন দল সিসিএম, দেশটির রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে কখনও কোনো নির্বাচনে সিসিএম হারেনি।

নির্বাচনের আগে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিরোধী ব্যক্তিত্বদের জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের নিন্দা জানিয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলির মৃত্যুর পর ২০২১ সালে তানজানিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সামিয়া ক্ষমতায় আসেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কৃষি বিবর্তনের গল্প বলে যে জাদুঘর
  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
  • ব্রেন ক্যানসারের যে ৭টি লক্ষণ আমরা সাধারণ ভেবে এড়িয়ে যাই
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া