বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় কৃষিপণ্য বেচাকেনার টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল ও বিএনপির পাঁচ নেতা-কর্মীকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের মানিকদীপা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে তাঁদের ছেড়ে দিয়েছে।

অভিযুক্ত যুবদল নেতার নাম শাহাদৎ হোসেন (৪২)। তিনি আড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এবং আড়িয়া বাজারের ইজারাদার। আড়িয়া বাজার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মানিকদীপা গ্রামে কৃষিপণ্য কেনাবেচা করায় সেখানে গিয়ে টোল দাবি করলে মারধরের ঘটনা ঘটে। আহত অন্যরা হলেন আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও বিএনপির কর্মী মুরাদ কোরাইশী, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য শহিদুল ইসলাম, বিএনপির কর্মী আনোয়ার হোসেন ও যুবদল নেতা শাহাদতের ছোট ভাই আল আমিন।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াদুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে মানিকদীপা গ্রামে ইজারাদার শাহাদৎ হোসেন ও তাঁর কয়েকজন সহযোগীকে আটকে রেখে স্থানীয় লোকজন মারধর করছেন—এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় ও মামলা না হওয়ায় কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উন্মুক্ত ডাকে ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকায় আড়িয়া বাজারের ইজারা পেয়েছেন যুবদল নেতা শাহাদৎ হোসেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবুল বাশারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আড়িয়া বাজার থেকে মানিকদীপা গ্রামের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। প্রতিদিন বিকেলে সেখানে গ্রামীণ বাজার বসে। গ্রামের কৃষকেরা সারা বছর তাঁদের খেতের কৃষিপণ্য বেচাবিক্রি করেন। খবর পেয়ে শাহাদৎ হোসেন গতকাল সন্ধ্যার পর গাড়ি ও মোটরসাইকেলবহর নিয়ে ওই গ্রামে যান। এ সময় তিনি কৃষকদের থেকে আলুসহ কৃষিপণ্য বেচাবিক্রির জন্য টোল দাবি করলে স্থানীয় লোকজন বাধা দেন।

স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মানিকদীপা গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে কেনা চার ট্রাক আলু ঢাকায় পাঠানোর খবর পেয়ে শাহাদৎ লোকজন নিয়ে সেখানে যান। হাটের সীমানার বাইরে হলেও এক বস্তা আলুর (৬৫ কেজি) জন্য তিনি ১৫ টাকা টোল দাবি করেন। আলুর দাম সস্তা হওয়ায় এমনিতেই কৃষকেরা ক্ষুব্ধ। তার ওপর টোল দাবি করায় উত্তেজিত হয়ে জনতা শাহাদৎ ও তাঁর সহযোগীদের ওপর চড়াও হন।

অভিযোগের বিষয়ে শাহাদৎ হোসেন বলেন, এত দিন মানিকদীপা গ্রামের কৃষকেরা আড়িয়া বাজারে তাঁদের কৃষিপণ্য বিক্রি করতেন। জামায়াতের ইন্ধনে কৃষকেরা আড়িয়ায় পণ্য না এনে আড়াই কিলোমিটার দূরে মানিকদীপা বাজারে পণ্য বেচাকেনা করছিলেন। আলোচনার জন্য গতকাল গাড়ি নিয়ে সেখানে যান। তাঁর সঙ্গে আরও সাত থেকে আটজন ছিলেন। সেখানে গিয়ে আশপাশে যেকোনো হাটে কৃষিপণ্য বিক্রি করলে বস্তাপ্রতি ৮ টাকা টোল দাবি করলে তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, কোনো হাটে তাঁরা পণ্য তুলবেন না এবং কাউকে টোলও দেবেন না। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন, আক্কাস, সাইফুল ও তালেবের নেতৃত্বে লোকজন তাঁদের ওপর হামলা করেন এবং তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, আড়িয়া বাজার থেকে মানিকদীপার দূরত্ব তিন কিলোমিটার। হাটের নির্ধারিত সীমানার বাইরে টোল আদায় অবৈধ। ইজারাদার শাহাদৎ গাড়িবহর নিয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছে টোলের নামে চাঁদা দাবি করেন। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের হুমকি দেন ও ভয়ভীতি দেখান। এ কারণে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র সদস য ল কজন গতক ল য বদল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

টাঙ্গাইলের ৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা 

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইলে ৮টি আসনের মধ্যে ৭টিতে বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। 

সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। তবে, টাঙ্গাইল-৫ আসনের প্রার্থী পরে ঘোষণা করা হবে। 

আরো পড়ুন:

কক্সবাজার-১ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারী সালাহউদ্দিন

বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী

প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে ওবায়দুল হক নাসির, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ারে) আসনে উপজেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আউয়াল লাভলু, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক  আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী এবং টাঙ্গাইল-৮ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।  

বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীর সর্থকদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের মধ্যে সব আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রার্থী ছিল। এর মধ্যে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল ব্যাপক গণসংযোগে করেছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধারণা ছিলো, টুকু ও ফরহাদের মধ্যে একজন টাঙ্গাইল-৫ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন। 

ঢাকা/কাওছার/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ