নদী রক্ষায় কার্যকর সংস্কারের আহ্বান তরী বাংলাদেশের
Published: 27th, April 2025 GMT
নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নদী সংস্কার এবং খাল, বিল, পুকুর, জলাশয়সহ প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক আন্দোলন ‘তরী বাংলাদেশ’।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার হাজারীবাগে বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী একটি রেস্টুরেন্টে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান। ‘নদী রক্ষায় একসাথে, নদী বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ স্লোগানে এ সভার আয়োজন করে তরী বাংলাদেশ।
সভায় তরী বাংলাদেশের আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, নদীকে আমরা যে যার মতো করে ব্যবহার করছি। কেউ দূষণ করছি, কেউ দখল করছি। কিন্তু নদী সুরক্ষায় আমরা কেউ কাজের কাজ করছি না, কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছি না। ঢাকার চারপাশ ঘিরে রয়েছে অসংখ্য নদী। এসব নদী সংরক্ষণ করে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে পারলে জলপথে যোগাযোগ এবং পণ্য পরিবহনের কাজ অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী হতো। ঢাকার ভেতরের যানবাহনের চাপ অনেকটাই কমে আসত।
তিনি এ বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নদী ও জলাশয় রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান।
লেখক ও সম্পাদক গাজী তানভীর আহমদের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘দুর্বার’ সভাপতি এ সালাম সময়, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন তরী বাংলাদেশের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খালেদা মুন্নি এবং সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক জি এম রুস্তম খান।
এছাড়াও নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষায় সরকার এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা, উদ্যোগ ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন নদী ও পরিবেশ কর্মী আলাউদ্দিন আহমেদ, আনন্দ বিনোদনের সম্পাদক এস এ এম সুমন, ক্রাইম রিপোর্টার্স কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক কিশোর ডি.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা
দেশের নারী ফুটবল দলের একের পর এক সাফল্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের স্বপ্ন জুগিয়ে যাচ্ছে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায়। সেখানকার ছোট্ট গ্রাম রাঙাটুঙ্গীর মেয়েদের অনুপ্রেরণার নাম এখন ফুটবল। গ্রামটিকে পরিচিত করে তুলছে একদল অদম্য নারী ফুটবলার। আর তাদের এগিয়ে নিতে আছেন কোচ তাজুল ইসলাম। রোদ, বৃষ্টি, সামাজিক কটূক্তি—সবকিছু উপেক্ষা করে গ্রামের মাঠে প্রতিদিন বিকেলের নিয়মিত অনুশীলনে যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক।
২০১৪ সালে স্থানীয় টুর্নামেন্টে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর কিছু মেয়ের ফুটবলপ্রেম দেখে তাজুল ইসলাম গড়ে তোলেন ‘রাঙাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমি’। সে সময় তাঁর এই উদ্যোগের জন্য তিরস্কার ও সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন তিনি; কিন্তু তাজুল ইসলাম, কোচ সুগা মুর্মু ও সাবেক স্থানীয় ফুটবলার জয়নুলের অবিরাম প্রচেষ্টায় সেই তিরস্কার ও সমালোচনা আজ গর্বে পরিণত হয়েছে।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এই একাডেমি থেকে উঠে আসেন মুন্নি আক্তার, সোহাগী, স্বপ্না রানী, সাগরিকা, কোহাতির মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়। বর্তমানে এই একাডেমি থেকে ২৩ জনের বেশি তরুণী জাতীয় দলসহ বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল ও লিগে খেলছেন। তাঁদের এই সাফল্য দেখে এখন গ্রামের মানুষ, এমনকি একসময়কার সমালোচকেরাও তাঁদের নিয়ে গর্ব করেন। রাঙাটুঙ্গীর মানুষের কাছে ফুটবল এখন শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি আন্দোলন, যা গ্রামের মেয়েদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।
জাতীয় দলের খেলোয়াড় কোহাতি কিসকু জানান, এ অবস্থানে আসা সহজ ছিল না। মাঠে আসার পথে তাঁদের অনেক কটূক্তি শুনতে হয়েছে; কিন্তু কোচ ও প্রশিক্ষকদের উৎসাহ এবং নিজেদের দৃঢ় মনোবল তাঁদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাঁদের এই সাফল্য প্রমাণ করে, মেধা ও ইচ্ছাশক্তি সব ধরনের সামাজিক বাধা ভেঙে দিতে পারে।
তবে এই সাফল্যের পেছনেও রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। তাঁদের অনুশীলনের মাঠটি এবড়োখেবড়ো, অনুশীলনের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম বা পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। অনেক খেলোয়াড়ের পরিবারের তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই কঠিন। তাজুল ইসলাম নিজের অর্থায়নে একাডেমি চালালেও একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়া এ আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখা কঠিন।
রাঙাটুঙ্গীর ফুটবল আন্দোলন প্রমাণ করে, একটি স্বপ্ন আর কিছু মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কত বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অপরিহার্য। মাঠের সংস্কার, খেলার সরঞ্জাম এবং খেলোয়াড়দের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরি। আমাদের সবার প্রত্যাশা, রাঙাটুঙ্গীর মেয়েরা একদিন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেশের সম্মান বাড়াবে। ক্লাবটির পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে, সেটিই কাম্য।