ছেলের পর নাতীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় রাবেয়া বেগম
Published: 27th, April 2025 GMT
ছেলে জসিম উদ্দীনকে হারিয়েছেন ৯ মাস আগে। গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গুলিতে আহত হয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মারা যান জসিম উদ্দিন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) নাতী লামিয়া আক্তারকে (১৭) হারিয়েছেন রাবেয়া বেগম (৬০)। ছেলে ও নাতীর শোকে এখন পাগলপ্রায় তিনি।
শনিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকার ৬ নম্বর রোডের একটি ভাড়া বাসা থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় লামিয়াকে উদ্ধার করা হয়। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গত ১৮ মার্চ সংঘদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে মানসিক যন্ত্রনায় ভুগছিলেন লামিয়া বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর পাংগাশিয়া ইউনিয়নে নিজ বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে লামিয়া সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। সাহসিকতার সঙ্গে নিজে থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন লামিয়া। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন।
আরো পড়ুন:
নড়াইলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পটুয়াখালীতে ছাত্রদল নেতার রহস্যজনক মৃত্যু
পরিবার জানায়, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাকিব ও সিফাত নামে দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করেছে দুমকি থানা পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে লামিয়া মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিল। লজ্জা, অবহেলা এবং ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা তার মধ্যে চরম হতাশা তৈরি করে। সেই হতাশা থেকেই সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে বলে পরিবারের ধারণা।
ছেলে ও নাতীর শোকে কাতর রাবেয়া বেগম বলেন, “আমার নাতী তার বাবার শোক ও ধর্ষণের ঘটনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। আমি ধর্ষকদের ফাঁসি চাই।”
শহীদ জসিম উদ্দিনের চাচাতো ভাই মো.
দুমকি থানার ওসি মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, “সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লামিয়ার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।
আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।