চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় একটি কারখানার সুপারভাইজারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া এ ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। তাঁদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান উৎপল তঞ্চঙ্গ্যা (২৩)। তিনি সিইপিজেডের মেসার্স এলসিবি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড কারখানায় ফিনিশিং হেলপার পদে কর্মরত ছিলেন।

কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক দৌলত হোসেন এবং উৎপলের সহকর্মী জিসান তঞ্চঙ্গ্যা ও সুজন চাকমার বরাত দিয়ে সিইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানায়, গত রোববার বেলা ১১টার দিকে উৎপল তঞ্চঙ্গ্যা অসুস্থ বোধ করেন এবং তিনি সুপারভাইজারের কাছে অসুস্থতার বিষয়টি জানান। পরে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে উৎপলের মৃত্যুর বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। এসব পোস্টে দাবি করা হয়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি তিনবার ছুটির আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁর আবেদন গ্রহণ করেনি। চাকরি হারানোর ভয়ে তিনি বাধ্য হয়ে অসুস্থ শরীর নিয়েই কাজে যোগ দেন। উৎপলের মৃত্যুর জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের অমানবিক আচরণই সরাসরি দায়ী।

এ বিষয়ে সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো.

আবদুস সোবহান বলেন, এই মর্মান্তিক ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বেপজা কর্তৃপক্ষ একটি চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ