পাকিস্তান আগ বাড়িয়ে ভারতে করবে না: পাক প্রধানমন্ত্রী
Published: 30th, April 2025 GMT
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন পাকিস্তান আগ বাড়িয়ে ভারতে হামলা চালাবে না, তবে প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে। ভারতের সাথে সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং পাহলগাম হামলার আলোকে নয়াদিল্লির অভিযোগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ইসলামাবাদের কূটনৈতিক পদক্ষেপের বিষয়ে সংসদে দেয়া বক্তব্যে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) তিনি এ কথা বলেন।
আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন।
সংসদে ইসহাক দার জানান, হামলা হলে পাকিস্তান একই উপায়ে প্রতিশোধ নেবে, কিন্তু তারা আগ বাড়িয়ে ভারতে হামলা শুরু করবে না।
আরো পড়ুন:
নিয়ন্ত্রণরেখায় ষষ্ঠ দিনের মতো ভারত–পাকিস্তানের গোলাগুলি
কলকাতায় হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, নিহত ১৪
পহেলগাম হামলার ঘটনায় উত্তেজনা বৃদ্ধির পর পাকিস্তানের কূটনৈতিক পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, আজারবাইজান, কুয়েত, বাহরাইন এবং হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পাকিস্তানের উদ্বেগের বিষয়ে কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রতি স্পষ্ট সমর্থন প্রকাশের জন্য তিনি চীন ও তুরস্কের প্রশংসা করেছেন।
উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাদের কী ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করেছি- ভারতের মানসিকতা, এর ইতিহাস এবং সেই ইতিহাসের আলোকে এর উদ্দেশ্য কী হতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ তুলে ধরেছি।”
ইসহাক দার উল্লেখ করেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ভারত কোনো ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধির কথা ভাবছে।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ভারত গত দুই বছর ধরে পরিবর্তিত পরিস্থিতির উল্লেখ করে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিচুক্তি পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে, যা উভয় দেশের মধ্যে পানিবন্টন ব্যবস্থা নির্ধারণ করে।
তিনি পহেলগাম হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, “অন্যান্য সবার মতো আমারও সন্দেহ আছে যে, এই নাটকটি এই চুক্তি স্থগিত করার জন্য সাজানো হয়েছিল। তিনি বলেন, “এটি একটি ফলস ফ্ল্যাগ অভিযান ছিল, ভারত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। আমরা পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে যা বলি তা হলো, এই (হামলার) সাথে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই।”
ইসহাক দারের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ পহেলগাম হামলার একটি স্বাধীন তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সম্পূর্ণরূপে জেনেও যে, এর সাথে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবারো স্পষ্ট করে সংসদে বলেন, পাকিস্তানের জলসীমায় ভারতের কোনো হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না এবং এটি যুদ্ধের পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা হবে।
গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় ভয়াবহ সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এই ঘটনায় পাকিস্তানকে পরোক্ষভাবে দায়ী করে ভারত। নয়াদিল্লির অভিযোগ সীমান্ত সন্ত্রাসবাদে সমর্থন করছে ইসলামাবাদ।
এর জেরে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদের পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি পাকিস্তানের নাগরিকদের ভিসা বাতিল এবং প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা বাতিল, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ এবং ভারতীয় বিমানকে আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গত ৬ দিন গুলিবিনিময়ের মতো ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল মঙ্গলবার ভারতের শীর্ষ সেনা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বৈঠকে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে পাকিস্তান হামলার জন্য সবুজ সংকেত তিনি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসহ ক দ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।