মন্ত্রিসভার ৩ কমিটির সঙ্গে জরুরি বৈঠকে কী আলোচনা করলেন নরেন্দ্র মোদি
Published: 30th, April 2025 GMT
কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্রগোষ্ঠীর হামলার পর সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেওয়ার পরদিন আজ বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা (সিসিএস), অর্থনৈতিক (সিসিইএ) ও রাজনৈতিক (সিসিপিএ)–বিষয়ক কমিটির সদস্যদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন।
ওই তিন কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, আজ নয়াদিল্লির ৭, লোক কল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ওই বৈঠকগুলোয় পেহেলগামের ঘটনার পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে এ বৈঠক হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ অন্য সদস্যরা।
সরকারি সূত্র অনুযায়ী, রাজনৈতিক–বিষয়ক কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর তাঁর সঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আলোচনার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। গুতেরেস গতকাল মঙ্গলবার জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম অনুযায়ী, গুতেরেস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
সেই ফোনের আলাপ সম্পর্কে জয়শঙ্কর ‘এক্স’ মারফতে জানিয়েছিলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব দ্ব্যর্থহীনভাবে পেহেলগামের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করেছেন।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেছিলেন তিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে। সেই বৈঠকে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ‘চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ’(সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান।
বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন, সন্ত্রাসবাদকে পরাস্ত করা দেশের ‘জাতীয় সংকল্প’। সেই লক্ষ্যে তিন সশস্ত্র বাহিনীকে ‘সময়, নিশানা ও পন্থা’ ঠিক করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন মোদি।
আগের দিনের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজকের বৈঠকে সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শীর্ষ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে সরকারি সূত্রে জানা যায়।
সূত্র অনুযায়ী, রাজনৈতিক–বিষয়ক কমিটির (সিসিপিএ) বৈঠকে বিরোধী নেতাদের তোলা সংসদের যৌথ অধিবেশন ডাকার দাবির বিষয়টি আলোচিত হয়। পেহেলগাম–কাণ্ডের পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ওই অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছেন লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা যথাক্রমে রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গে। এ দুজন ছাড়াও একই দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদীয় মন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন আরজেডি সদস্য মনোজ ঝা ও সিপিআই সদস্য পি সন্তোষ কুমার।
আজ সংসদীয়–বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অর্জুন রাম মেঘাওয়াল গণমাধ্যমকে বলেন, সংসদের বিশেষ যৌথ অধিবেশন ডাকা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংসদবিষয়ক কমিটি। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, সিসিপির বৈঠকে এই প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পেহেলগামে হামলার পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীরি ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের হেনস্তা হতে হচ্ছে। এই প্রবণতা বন্ধে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আরজি জানিয়েছেন। সর্বদলীয় বৈঠকেও বিরোধী নেতারা সরকারকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন রাজ্যে হেনস্তা অব্যাহত।
আজ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, বিজেপিশাসিত উত্তরাখন্ডের শৈল শহর মুসৌরিতে স্থানীয় উগ্রবাদী হিন্দুদের আক্রমণের শিকার হওয়ার পর থেকে ১৬ জন কাশ্মীরি শাল বিক্রেতা ওই রাজ্যে ফিরে গেছেন।
কাশ্মীরি পড়ুয়া, ব্যবসায়ী অথবা মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনকে হেনস্তা বন্ধে প্রধানমন্ত্রী মোদি এখনো স্পষ্ট কোনো বার্তা দেননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অন য য় সশস ত র মন ত র কম ট র সরক র সদস য গণম ধ
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ
বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।
দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।
পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।
বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’
সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসীসম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।
এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।
সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।
রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা