নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেছে গণসংহতি আন্দোলন। বৈঠকে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার ও রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে দুই দলের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ এবং নির্বাচনের আগে সংস্কার কীভাবে করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করেছেন দল দুটির নেতারা।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, আশরাফ উদ্দীন মাহাদী ও অনিক রায়, যুগ্ম সদস্যসচিব ফরিদুল হক ও মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান। অন্যদিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, হাসান মারুফ রুমি ও মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দীপক রায়, ইমরাদ জুলকারনাইন ও তরিকুল সুজন এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অঞ্জন দাস বৈঠকে অংশ নেন।

এনসিপি ও গণসংহতি আন্দোলনের মধ্যে এটি ছিল প্রথম বৈঠক। বৈঠক শেষে এনসিপির কার্যালয়েই দুই দলের নেতারা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি জানান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সাংবিধানিক কমিশনের মাধ্যমে সাংবিধানিক পদে নিয়োগ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, বিচার বিভাগের পৃথক্‌করণ, নারী আসন ও স্থানীয় সরকার প্রসঙ্গ, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, ক্ষমতার ভারসাম্য, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব—এসব বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ন্যূনতম একটা ঐকমত্যে আসতে আমরা আলোচনা চালাব। একই সঙ্গে রাজপথেও আমাদের যার যার জায়গা থেকে সংগ্রাম চলবে।’

সাকি বলেন, নতুন একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হবে, বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক যাত্রায় হাঁটবে—এটা শহীদের স্বপ্ন ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা। সংস্কারের জন্য যে জন–আকাঙ্ক্ষা তা দেশে ক্ষমতার ভারসাম্য ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে এবং সত্যিকার অর্থে জনগণের হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত হবে। সেই জায়গাটা রাষ্ট্র কাঠামোগতভাবে কীভাবে তৈরি করা যাবে, সে বিষয়ে আমরা জোর দিয়েছি। এগুলোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কার নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে সাকি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগের যারা গত ১৫ বছরের গুম-খুন, হামলা-মামলা ও লুটপাটে যুক্ত এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডে যারা দায়ী, তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়টাকে আমরা বিচারের আওতায় আনাটাকে দেখতে চাই। আমরা চাই, সংস্কারে একটা ন্যূনতম ঐকমত্য দ্রুত তৈরি হোক। সেই সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়েও যাতে আমরা একটা ঐকমত্যে আসতে পারি।.

..নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে সংস্কার কাজটাকে যাতে আমরা সিগনিফিক্যান্টলি (উল্লেখযোগ্যভাবে) এগিয়ে নিতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, তাঁদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা আবারও হবে। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সব রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি যে বিচার, মৌলিক সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলছে, তার অনেকগুলো এজেন্ডার সঙ্গেই গণসংহতি আন্দোলন একমত, কিছু জায়গায় দ্বিমতও রয়েছে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আজকে আলোচনা হয়েছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ এবং নির্বাচনের আগে সংস্কার কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

নাহিদ আরও বলেন, ‘আমরা যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, রাষ্ট্র পুনর্গঠন-সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার বা নতুন সংবিধানের কথা বলছি, এই আলোচনাগুলো গণসংহতি আন্দোলন জনপরিসরে দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। এখন যে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রত্যাশা আমরা করি, সেগুলো আসলে গত ১৬ বছরে এসব আলোচনা ও তৎপরতার ধারাবাহিকতায়।’

বৈঠকে অংশ নেওয়া এনসিপি নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, দুই দলের আগ্রহেই এনসিপি ও গণসংহতির মধ্যে আজকের বৈঠকটি হয়েছে।

গত রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে গণসংহতি আন্দোলন। এরপরই অধিকতর সমঝোতা ও ঐক্য তৈরি করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমন বয়ক র র জন ত ক এনস প র ঐকমত য সদস য আওয় ম ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি।

আজ শুক্রবার রাতে এনসিপির এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।

এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।

নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে—এ কথা উল্লেখ করে এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন–আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।

জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা মঙ্গলবার আবার শুরু
  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট, একমত ইউনূস ও তারেক
  • লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার ও জুলাই সনদ