আগামী অর্থবছরের জন্য বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দেবে অন্তর্বর্তী সরকার—এমনটাই বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দেব। আমরা বাজেটে প্রত্যাশার ফুলঝুড়ি দেব না। আগে বড় বড় বাজেট অনুমোদন করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা যে বাজেট দেব, তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করব।’

গতকাল বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪৫তম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে এনবিআর এবং ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) এই সভার আয়োজন করে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু ও সংগঠনটির বর্তমান প্রশাসক মো.

হাফিজুর রহমান প্রমুখ।

করছাড় বা কর রেয়াতের দিন চলে গেছে বলে মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রেয়াতের দিন চলে গেছে। আইএমএফের চাপে আছি। রাজস্ব বাড়াতে হবে। সরকারও চালাতে হবে। কোনো খাতে রেয়াত দেওয়া মানে, সেখান থেকে কর পাব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা দর-কষাকষি করব। তবে পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে তাদের চটাব না। এ নিয়ে আলোচনার জন্য ৯০ দিন সময় আছে। এর মধ্যে বিষয়টির সমাধান না হলে আমরা আরও সময় চাইব।’

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘বিগত সময়ে খরচের মহোৎসবের বাজেট করা হতো। আমরা ব্যয়ভিত্তিক নয়, একটি লক্ষ্যভিত্তিক বাজেট তৈরির পরিকল্পনা করছি।’ তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করা হতো, ব্যয় করাটা যেন ঈদ পালন করা। যেটার কোনো প্রয়োজন নেই, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে তা করা হয়েছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবছর এনবিআরকে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের দায় দেওয়া হচ্ছে। তখন এনবিআরও গণহারে কর আরোপ করে। তাই ব্যবসায়ীদের দায়িত্বের সঙ্গে প্রস্তাব দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তা বাস্তবায়ন করা যায়। তিনি আরও বলেন, কর ন্যায্যতা কায়েম করা না গেলে সমাজে দুর্বৃত্তায়ন হয়। আর দুর্বৃত্তরাই বারবার ক্ষমতায় আসে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘বিনিয়োগের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চাকরির বাজার সৃষ্টি, যা বেসরকারি খাত ছাড়া সম্ভব নয়। আমরা সরকারকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করবেন।’ তিনি বলেন, এফবিসিসিআই বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য এক হাজার সুপারিশ দিয়েছে। সংখ্যা ১৫টি হলে চলতি বছরের মধ্যেই সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো। বাজেট নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সারা বছর সংলাপ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

করকাঠামো যৌক্তিক করার কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান। তিনি বলেন, ‘দেশের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, আমাদের কাস্টমস বা শুল্ককাঠামো। বর্তমানে সর্বোচ্চ শুল্কহার ২৫ শতাংশ, যা অনেক দেশের তুলনায় বেশি। এর বাইরে সম্পূরক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক যুক্ত হয়ে পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপ সৃষ্টি করে। এই করকাঠামো যৌক্তিক করা জরুরি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট ব যবস য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা থাকাকালে তাঁর ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বের উল্টো যাত্রা ঘটল: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ (তিন শূন্য) তত্ত্ব সমর্থন করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে তার উল্টো যাত্রা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি থাকা অবস্থায় তাঁর থ্রি জিরো তত্ত্বের যে উল্টো যাত্রাটা ঘটল, এটা তাঁর খেয়াল করা দরকার। আমরা চাই, থ্রি জিরো তত্ত্বটাই অগ্রসর হোক।’

সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে’ শিরোনামে যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও প্রথম আলো।

বৈঠকে অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের “থ্রি জিরো” (তিন শূন্য) তত্ত্ব সারা পৃথিবীতে পরিচিত। আমি এটা খুবই সমর্থন করি যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য দারিদ্র্য। কিন্তু পুরো যাত্রাটা তো হচ্ছে উল্টো দিকে। অধ্যাপক ইউনূসের একটা সুযোগ ছিল যে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে থ্রি জিরো তত্ত্বের বাস্তবায়নের একটা মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে দাঁড় করানোর কিছু চেষ্টা করা। কিন্তু আমরা দেখছি, কীভাবে কার্বন নিঃসরণ আরও বাড়ে, সেটার একটা চেষ্টা চলছে। গত ১০ মাসে লক্ষাধিক বেকারত্ব বেড়েছে শুধু কারখানা বন্ধ করার কারণে আর দারিদ্র্য বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি থাকা অবস্থায় তাঁর থ্রি জিরো তত্ত্বের যে উল্টো যাত্রাটা ঘটল, এটা তো তাঁর একটু খেয়াল করা দরকার। এতে তো আমরা খুশি না। আমরা তো চাই যে থ্রি জিরো তত্ত্বটাই অগ্রসর হোক।’

‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে’ শীর্ষক গোলটেবিলে আলোচকদের একাংশ। সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে

সম্পর্কিত নিবন্ধ