অনলাইন জুয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে দুধ দিয়ে গোসল, ভিডিও ভাইরাল
Published: 10th, May 2025 GMT
প্রথমে কাপড়চোপড় এবং পরে পুরাতন মোটরসাইকেলের প্রায় ২১ বছরের ব্যবসা কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যুবক সাগর হোসেনের। ব্যবসায়ের টাকা দিয়ে তিলেতিলে গড়েছেন পাকা প্রাচীরে ঘেরা টিনশেডের বিলাসবহুল আধাপাকা বাড়ি। চলতেন দামি মোটরসাইকেলে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৬ লাখ টাকার সম্পত্তির মালিক ছিলেন সাগর।
তবে এসব এখন তার কাছে শুধুই স্মৃতি। একবছরের মাথায় অনলাইন জুয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে পথের ফকির। এমন সর্বনাশা জুয়া আর খেলবেন না বলে সবার সামনে দুধ দিয়ে গোসল করেছেন তিনি।
শুক্রবার (৯ মে) সন্ধ্যায় কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি গোলাবাড়ি বাজারে ঘটে এ গোসলের ঘটনা। সাগর হোসেন ওই এলাকার মো.
ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় কয়েকজন প্লাস্টিকের মগ ও কোমল পানিয়ের কাটা বোতল দিয়ে সাগরের মাথায় দুধ ঢালছেন। উৎসুক জনতা ভিড় করেছেন। কেউ কেউ মোবাইলে তা ভিডিও ধারণ করছেন। আর সাগর বলছেন, ‘‘ প্রিয় ভাই ও বন্ধুরা। আমার ছিল বিলাসিতার জীবন। পান্টি একটা মোটরসাইকেলের শোরুম ছিল। আমি খুব সখ করে একটা বাড়ি করেছিলাম। এই মোবাইলে খেলা করে আমার শোরুম চলে গেছে, বাড়ি চলে গেছে। আমার এ দৃশ্য দেখে আপনারা শিক্ষা নেন। কেউ জুয়ো খেলবেন না। অসৎ পথে কেউ বড়লোক হতি পারে না।”
ভিডিওতে আরো বলতে শোনা যায়, “দেহ শরীর সব নষ্ট করে ফেলেছি। আত্মহত্যার পথ বাঁচে নিছিলাম। তিনডে মেয়ে সন্তান আছে। সেজন্য আর কোনোদিন এই জুয়ো খেলব না, খেলব না, খেলব না। মোবাইলের জুয়ো আমি কোনোদিন খেলব না।”
রাতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পান্টি গোলাবাড়ি বাজারের পাশেই সাগরের বিক্রি হওয়া আধাপাকা বাড়ি। পাকা প্রাচীরে ঘেরা বাড়িটিতে লোহার কেচি গেট। বাড়ির ভিতরে ও প্রাচীরে জ্বলছে বাহারি রঙের আলো। ভিতরের কক্ষগুলো সাজানো ও পরিপাটি। খাট ও আসবাবপত্র নেই। উৎসুক জনতা বাড়িতেও ভিড় করেছেন।
এসময় আলাপকালে সাগর হোসেন বলেন, “মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। প্রথমে কাপড়চোপড়ের ব্যবসা ছিল। পরে পুরাতন মোটরসাইকেলের শোরুম দিছিলাম। আল্লাহর রহমতে ভালই চলছিল। মাসে প্রায় ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হতো। প্রায় ২১ বছর ধরে সৎ পথে আয় করে বাড়ি, গাড়ি সব করেছিলাম। কিন্তু মাত্র এক বছরে অনলাইন জুয়া ‘ওয়ান এক্স বেট’ ও ‘গ্লোরি ক্যাসিনো’ খেলে সর্বশান্ত হয়েছি। ২১ লাখ টাকায় বাড়ি এবং ১৫ লাখ টাকার শোরুম বিক্রি করেও দেনা শোধ করতে পারিনি।”
তিনি আরো বলেন, “ব্যবসা বন্ধ করে ধারদেনা ও সুদে টাকা নিয়ে জুয়া খেলতাম। পরে সবকিছু বিক্রি করে দিয়েও এখনও সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেনা। গত বৃহস্পতিবার আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিলাম। পরে স্থানীয়রা টের পেয়ে দুধ দিয়ে গোসলের আয়োজন করে।”
তিনি বলেন, “পান্টি এলাকার শত শত মানুষ এই জুয়া খেলেন। আর কেউ যেন লোভে পড়ে সর্বশান্ত না হন। মানসম্মান ত্যাগ করে জনসম্মুখে দুধ দিয়ে গোসল করেছি। জুয়ায় একদিনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। আর খোয়া গেছে প্রায় তিন লাখ টাকা।”
যাওয়ার জায়গা নেই। ক্রেতা মানবিক কারণে এখনও বিক্রিত বাড়িতেই থাকতে দিয়েছেন বলে জানালেন সাগরের স্ত্রী কনা খাতুন। তিনি বলেন, “অনলাইন জুয়ায় আমার বাড়ি, গাড়ি, গহনা, আসবাবপত্র, সম্পদ সব চলে গেছে। আর কেউ কারো সাথে যেন এমন না হয়। সেজন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।”
পান্টি বাজারের রাসেল কম্পিউটার দোকানের প্রোফাইটর রাসেল হোসেন বলেন, “সাগরের আগে মোটরসাইকেলের শোরুম ছিল। দামি গাড়ি ও বাড়ি ছিল। তবে জুয়া খেলে এখন পথের ফকির। আর জুয়া খেলবে না বলে আজ দুধ দিয়ে গোসল করেছেন তিনি।”
প্রতিবেশি রাশিদুল ইসলাম বলেন, “সবকিছু হারিয়ে সাগর আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু আমরা ১০ লিটার দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে তওবা পড়িয়েছি। যেন আর জুয়া না খেলে। আর অন্যরাও যেন সতর্ক হন। সেজন্য জনসম্মুখে গোসল করানো হয়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, “দুধ দিয়ে গোসল করানোর খবর পেয়েছি। তবে সঠিক কারণ জানা যায়নি। অনলাইন জুয়ার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কারের আলোচনা থাকলেও বাস্তব প্রতিফলন নেই: জোনায়েদ সাকি
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার বাস্তব অগ্রগতি নেই বলে মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, সংস্কারের আলোচনা ও প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে না। এখনও ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। এখনও বৈষম্য ও শোষণ-বঞ্চনা চলছেই।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মেরিনার্স কমিউনিটি আয়োজিত মানববন্ধনে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। ভিসা সমস্যার সমাধান, বেকার ক্যাডেট এবং রেটিংসদের চাকরি নিশ্চিতকরণ এবং ডিপ্লোমাধারীদের সিডিসি প্রদানের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিলের ৫ দফা দাবিতে মেরিনারদের এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও তার উপদেষ্টাদের কাছে জানতে চাই- এখনও ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের আস্তানা ধ্বংস করতে না পারলে ক্ষমতায় আছেন কেন? এসব অব্যাহত থাকলে তা হবে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের রক্ত ও তাদের আকাঙ্খার প্রতি অবমাননা। মেরিনারদের পাঁচদফা দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে অনতিবিলম্বে এসব দাবি পূরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মানববন্ধনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে দেশের জন্য রেমিটেন্সের পাশাপাশি সম্মানও বয়ে আনেন। দেশের মানুষের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে মেরিনারদের দাবি পূরণ করতে পারে।
বাংলাদেশ মেরিনার্স কমিউনিটির মুখ্য সংগঠক ক্যাপ্টেন রেদওয়ান সিকদারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের সংগঠক দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী প্রীতি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, মেরিন ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম জিলানী, ইঞ্জিনিয়ার রইচ উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ, চিফ অফিসার কায়কোবাদ, ইঞ্জিনিয়ার বজলুল রহমান প্রমুখ।
মেরিনারদের পাঁচদফা দাবি তুলে ধরে বক্তারা বলেন, বেকার মেরিন ক্যাডেট এবং রেটিংসদের চাকরি নিশ্চিত করতে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজে ক্যাডেট ও ফ্রেস রেটিং দ্বিগুণ করা হোক। ডিপ্লোমাধারীদের সিডিসি প্রদানের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। ভিসা সমস্যার সমাধান ও বিদেশি চাকরির বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে হবে। নাবিক প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সবধরনের অবৈধ লেনদেন বন্ধ করতে হবে। ভেনিজুয়েলাতে বন্দি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে অতিদ্রুত মুক্ত করে আনতে হবে।