কর্ণফুলীতে সাম্পানবাইচ, দুই তীরে দর্শকের ভিড়
Published: 11th, May 2025 GMT
চট্টগ্রামের প্রাণ কর্ণফুলী নদীতে প্রতিবারের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে সাম্পান খেলা বা সাম্পানবাইচ। আজ রোববার বিকেলে এই সাম্পান খেলা দেখার জন্য নদীর দুই তীর ও নৌযানে নারী-পুরুষের ভিড় জমে যায়। নেচে–গেয়ে তাঁরা সাম্পান প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মাঝিদের উৎসাহ দেন।
কর্ণফুলী ও দেশের নদ–নদী রক্ষায় ১৯তম ‘সাম্পান খেলা ও চাটগাঁইয়া সংস্কৃতি মেলার’ অংশ হিসেবে এই সাম্পানবাইচ অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনব্যাপী আয়োজনের শেষ দিন ছিল আজ। নদীর উত্তর পাড়ের অভয়মিত্র ঘাট থেকে দক্ষিণের চরপাথরঘাটা ঘাটে এই সাম্পানবাইচ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রথম হয় ইছানগরের ইউসুফ মাঝি ও তাঁর দল। দ্বিতীয় হয়েছেন বোয়ালখালীর মো.
১১টি সাম্পান এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিটি সাম্পানে ছিলেন ৯ জন করে মাঝি। তাঁরা বইঠা বেয়ে নদীর উত্তর থেকে দক্ষিণের ঘাটে চলে যান। এই প্রতিযোগিতা দেখার জন্য বিকেল চারটা থেকে নদীর পাড়ে মানুষ ভিড় করেন। এ সময় কয়েকটি নৌযানে কিশোর–তরুণেরা সাউন্ডবক্স বাজিয়ে নাচ–গান ও করে। প্রতিটি নৌকায় নারী ও পুরুষ বাইচ দেখার জন্য উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। দুই পাড়েও ছিল অনেক নারী-পুরুষ।
অভয়মিত্র ঘাটে পরিবার নিয়ে উপস্থিত ছিলেন মো. কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতা হয়। এবার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি দেখানোর জন্য।’
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ইদ্রিস মিয়া। এ সময় বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কৃতি মেলার পৃষ্ঠপোষক মো. আলী আব্বাস উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মোজাম্মেল হক, দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাহমুদুল হাসান, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বেলুন উড়িয়ে সাম্পান খেলা উদ্বোধনের পর প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া নৌকাগুলোর পেছন পেছন ছুটতে থাকে দর্শনার্থীদের বিভিন্ন নৌযান। চরপাথরঘাটা ঘাটে বিজয়ীদের স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ।
পরে চরপাথরঘাটা সিডিএ মার্কেট পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র শাহদাত হোসেন। মেয়র বলেন, কর্ণফুলী বাঁচলে চট্টগ্রাম বাঁচবে। দখল ও দূষণ থেকে কর্ণফুলী নদীকে রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকা জরুরি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প থরঘ ট র জন য অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত