চট্টগ্রামের প্রাণ কর্ণফুলী নদীতে প্রতিবারের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে সাম্পান খেলা বা সাম্পানবাইচ। আজ রোববার বিকেলে এই সাম্পান খেলা দেখার জন্য নদীর দুই তীর ও নৌযানে নারী-পুরুষের ভিড় জমে যায়। নেচে–গেয়ে তাঁরা সাম্পান প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মাঝিদের উৎসাহ দেন।

কর্ণফুলী ও দেশের নদ–নদী রক্ষায় ১৯তম ‘সাম্পান খেলা ও চাটগাঁইয়া সংস্কৃতি মেলার’ অংশ হিসেবে এই সাম্পানবাইচ অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনব্যাপী আয়োজনের শেষ দিন ছিল আজ। নদীর উত্তর পাড়ের অভয়মিত্র ঘাট থেকে দক্ষিণের চরপাথরঘাটা ঘাটে এই সাম্পানবাইচ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রথম হয় ইছানগরের ইউসুফ মাঝি ও তাঁর দল। দ্বিতীয় হয়েছেন বোয়ালখালীর মো.

রনি ও তাঁর দল। তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন চর পাথরঘাটার মো. তারেক ও তাঁর দল।

১১টি সাম্পান এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিটি সাম্পানে ছিলেন ৯ জন করে মাঝি। তাঁরা বইঠা বেয়ে নদীর উত্তর থেকে দক্ষিণের ঘাটে চলে যান। এই প্রতিযোগিতা দেখার জন্য বিকেল চারটা থেকে নদীর পাড়ে মানুষ ভিড় করেন। এ সময় কয়েকটি নৌযানে কিশোর–তরুণেরা সাউন্ডবক্স বাজিয়ে নাচ–গান ও করে। প্রতিটি নৌকায় নারী ও পুরুষ বাইচ দেখার জন্য উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। দুই পাড়েও ছিল অনেক নারী-পুরুষ।

অভয়মিত্র ঘাটে পরিবার নিয়ে উপস্থিত ছিলেন মো. কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতা হয়। এবার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি দেখানোর জন্য।’

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ইদ্রিস মিয়া। এ সময় বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কৃতি মেলার পৃষ্ঠপোষক মো. আলী আব্বাস উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মোজাম্মেল হক, দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাহমুদুল হাসান, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বেলুন উড়িয়ে সাম্পান খেলা উদ্বোধনের পর প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া নৌকাগুলোর পেছন পেছন ছুটতে থাকে দর্শনার্থীদের বিভিন্ন নৌযান। চরপাথরঘাটা ঘাটে বিজয়ীদের স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ।

পরে চরপাথরঘাটা সিডিএ মার্কেট পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র শাহদাত হোসেন। মেয়র বলেন, কর্ণফুলী বাঁচলে চট্টগ্রাম বাঁচবে। দখল ও দূষণ থেকে কর্ণফুলী নদীকে রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকা জরুরি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প থরঘ ট র জন য অন ষ ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ