নারীর বিকাশে সবার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি
Published: 13th, May 2025 GMT
নারীর বিকাশ ঘটাতে হলে সবার আগে সমাজে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি স্কুলে, বাসে, রাস্তায় বা অনলাইনে নারী নিরাপদ না থাকেন, তাহলে সমাজে সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।
সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে আয়োজিত সংকট ও সম্ভাবনায় ‘নারীর চোখে আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। নারী অধিকারের প্ল্যাটফর্ম ‘কথা বলো নারী’ এই সভার আয়োজন করে।
সভার শুরুতেই জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া কয়েকজন নারী অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তাঁদের কথায় উঠে আসে অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে এই নারীদের প্রতিনিয়ত সামাজিক মাধ্যমে নিপীড়ন করা হচ্ছে। তাঁদের হেয় করার মাধ্যমে সমাজে অনিরাপদ করে তোলা হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে তাঁরা পরিত্রাণ চান।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশীদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল কাজ হলো মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করে, সংগ্রাম করে হয়তো সমাজ পরিবর্তন করা যায়, কিন্তু যখন নারী–পুরুষ সমতার কথা ভাবি, তখনই সবকিছু গোলমেলে হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, তাঁর মন্ত্রণালয়ের মূল কাজের জায়গাটা হলো নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই কাজটি করতে মন্ত্রণালয় কয়েকটি কৌশল হাতে নিয়েছে। নারীদের নিরাপত্তায় একটা সোশ্যাল ফোর্স তৈরি করা হচ্ছে। নারীদের বিরুদ্ধে চলমান সাইবার বুলিংসহ সব বিষয়ে এরা কাজ করবে। কয়েক শ নারী নিয়ে এই ফোর্স তৈরি করা হবে। যাদের কাজ হবে সারা দিন নিপীড়নের বিষয়টি নজরদারি করে বিকল্প ন্যারেটিভ (বয়ান) তৈরি করা।
নারীর প্রতি নির্যাতনমূলক কথা সবকিছুর মধ্যে ঢুকে আছে বলে উল্লেখ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন। তিনি বলেন, কথাবার্তা, আচরণ সবকিছুতেই নারীর প্রতি সহিংস আচরণ প্রকাশ পায়। নারীর বিষয়গুলোতে ক্রমাগত আপস করা হয়েছে বিভিন্ন সরকারের সময়ে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এটুকু বুঝতে পারছি, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে নারীর প্রতি সহিংসতা মেয়েরা আর সহ্য করবে না। যাদের কাজকর্মে প্রতিফলিত হবে যে তারা নারীর প্রতি সহিংস, নারীরা তাদের এই বাংলাদেশে আর থাকতে দেবেন না। জুলাই অভ্যুত্থান যদি আমাদের কিছু দিয়ে থাকে, সেটি হলো আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। নারীদের এই পরিবর্তন আমরা দেখেছি।’
লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নারী-পুরুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছেন। সে সময় কেউ কোনো পার্থক্য করেননি। তবে ৫ আগস্টের পরে ধীরে ধীরে আমরা একটি উগ্রবাদী শক্তির উত্থান দেখলাম। যারা নানাভাবে নারীকে নিপীড়ন করা শুরু করল।’ তিনি বলেন, নারীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা জারি রাখতে হবে। কারণ, নারী সামাজিকমাধ্যম, রাস্তা ও পরিবার কোথাও নিরাপদ বোধ করছেন না।
নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নারীবান্ধব করতে হবে। ভাষার ক্ষেত্রে নারীবান্ধব হতে হবে। সর্বোপরি রাষ্ট্রকে নারীর নিরাপত্তা দিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, নারীকে সব সময় তাঁর বিরুদ্ধে চলা নিপীড়ন নিয়ে পড়ে থাকতে হয়। নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলতে হয়। কিন্তু নারীরা সমাজ, রাষ্ট্র, সংবিধান সংস্কার নিয়ে কথা বলতে চান। তিনি বলেন, ‘আমাকে কেন সারাক্ষণ নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। আমাদের মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলা হয়। যাতে নারীরা এগিয়ে যেতে না পারেন। সমাজের সব ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত জরুরি।’
মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ বলেন, নারীর বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং নিয়ে সরকার প্রতিনিয়ত ভাবছে। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করবে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, নারীদের নিরাপত্তায় সরকারের নানা উদ্যোগ রয়েছে। সেগুলো যেন মানুষ জানতে পারে, সে জন্য বিষয়গুলো আরও প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।
মতবিনিময় সভায় ‘কথা বলো নারী’ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক নুসরাত হকসহ আরও কয়েজন বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলের ৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইলে ৮টি আসনের মধ্যে ৭টিতে বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। তবে, টাঙ্গাইল-৫ আসনের প্রার্থী পরে ঘোষণা করা হবে।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজার-১ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারী সালাহউদ্দিন
বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী
প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে ওবায়দুল হক নাসির, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ারে) আসনে উপজেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আউয়াল লাভলু, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী এবং টাঙ্গাইল-৮ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীর সর্থকদের উল্লাস করতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের মধ্যে সব আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রার্থী ছিল। এর মধ্যে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল ব্যাপক গণসংযোগে করেছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধারণা ছিলো, টুকু ও ফরহাদের মধ্যে একজন টাঙ্গাইল-৫ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন।
ঢাকা/কাওছার/রফিক