মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আগামীকাল সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়ে ফোনে কথা বলবেন। ট্রাম্পের মতে, এই ফোনালাপটি হবে, ‘রক্তপাত বন্ধ করার বিষয়ে।’ 

নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা জানান।  খবর বিবিসির। 

পোস্টে ট্রাম্প বলেন, এই ফোনালাপটি অনুষ্ঠিত হবে সোমবার (স্থানীয় সময়) সকাল ১০টায়। পুতিনের সঙ্গে কথা বলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ন্যাটোর কয়েকটি দেশের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি।

আরো পড়ুন:

ইউক্রেনে বেসামরিক বাসে রাশিয়ার ড্রোন হামলা, নিহত ৯

তুরস্কে শান্তি আলোচনায় থাকছেন না পুতিন-ট্রাম্প

যুদ্ধের তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গত শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সরাসরি বৈঠকে বসে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল। তবে ওই বৈঠকে কোনো অগ্রগতি অর্জন হয়নি।  শুধুমাত্র দুই পক্ষ বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

বৈঠকের আগে ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পুতিন উপস্থিত থাকলে তিনি ওই বৈঠকে অংশ নেবেন। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সেখানে যেতে চাননি।

এ ঘটনার পর ট্রাম্প সংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধের অবসানের অগ্রগতি কেবল তখনই সম্ভব হবে যদি তিনি এবং পুতিন মুখোমুখি আলোচনা করেন। এর দুদিনের মধ্যে পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার বিষয়টি নিজেই ঘোষণা দিলেন তিনি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার সংবাদ সংস্থাগুলোর কাছে নিশ্চিত করেছেন যে, সোমবার পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে একটি ফোনালাপের প্রস্তুতি চলছে। ইউক্রেন ইস্যুতে দুই নেতা এর আগে গত মার্চ মাসে ফোনালাপ করেছেন।

পেসকভ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, ‘আলোচনার প্রস্তুতি চলছে।’

ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘আশা করছি এটি একটি ফলপ্রসূ দিন হবে, একটি যুদ্ধবিরতি হবে। এই ভয়াবহ সহিংস যুদ্ধ, যা কখনোই শেষ হওয়ার ছিল না, তা শেষ হবে।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ান নেতারা যুদ্ধবিরতি, পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে সম্ভাব্য শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

 

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ য ক তর ষ ট র ইউক র ন ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানোর আশা কমিশনের

জাতীয় সনদ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা দু-এক দিনের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনর সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এরপর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা। সেখানে মতপার্থক্যের বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আশা করছে কমিশন। 

রবিবার (১৮ মে) জাতীয় সংসদের এলইডি হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনায় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি এ কথা জানান।  

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্রুত একটি জাতীয় সনদের দিকে অগ্রসর হতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।” 

তিনি বলেন, “জাতীয় সনদ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা দু-এক দিনের মধ্যেই শেষ হবে। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে, যেখানে যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে, সেগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য জীবন দানকারী শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, “অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের এই আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমরা তাদের কাছে দায়বদ্ধ। এই দায় শুধু ঐকমত্য কমিশনের নয়, বরং দেশের সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সামাজিক শক্তির সম্মিলিত দায়।”

বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিশিষ্ট নাগরিক সফর রাজ হোসেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, প্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন দলের নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন, দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, এহসান মাহবুব যোবায়ের, সাইফুল আলম খান মিলন, মতিউর রহমান আকন্দ, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, শিশির মোহাম্মদ মনির ও সরকার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে গত ২৬ এপ্রিল জামায়াতের সঙ্গে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়। তবে ওই দিন সব সুপারিশ নিয়ে দলটির সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়নি।

গত ২৬ এপ্রিল মূলত সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়েছিল। দলটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছিল। তবে তারা সংসদের উচ্চ ও নিম্ন—উভয় কক্ষেই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবেও নীতিগতভাবে একমত হয়েছিল দলটি। এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন—এ প্রস্তাবের সঙ্গেও একমত জামায়াতে ইসলামী।

এর আগে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় বিএনপি সংস্কার প্রশ্নে দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছিল। নির্বাচন পদ্ধতি, এনসিসি গঠন ও এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন—এই তিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একসময়ের জোটসঙ্গী বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থানে ভিন্নতা দেখা গেছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামত নেওয়ার পর ২০ মার্চ থেকে দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করছে।

সংস্কার প্রশ্নে ৩৯টি দলের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে তাদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করা হচ্ছে। বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশির ভাগ দলের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়েছে।

ঢাকা/এএএম/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ