হেঁটে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দুই পাশে হাঁটছেন কাতারের প্রেসিডেন্টসহ উর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিরা। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে সাদা গালিচার দুই পাশে নানা ভঙ্গিমায় মাথার চুল উড়াচ্ছেন একঝাঁক নারী। তাদের পরনেও সাদা রঙের পোশাক। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এমন রীতিতে স্বাগত জানানোর ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর বেশ চর্চায় পরিণত হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় একেকজন একেকরকম মন্তব্য করছেন। অনেকে আবার জানতে চেয়েছেন এতগুলো নারী এমন করছেন কেন? এর সংক্ষিপ্ত জবাব— এটি একটি ঐতিহ্যবাহী নাচ; যার নাম আল-আয়ালা। এটি পরিবেশন করে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানানো হয়। চলুন এই নাচের আদ্যোপান্ত জেনে নিই—

ইউনেস্কো তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, আল-আয়ালা জনপ্রিয়-অভিব্যক্তিপূর্ণ একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। উত্তর-পশ্চিম ওমান, সমগ্র সংযুক্ত আরব আমিরাতে এটি প্রচলিত। এই পরিবেশনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে গান-কবিতা, ড্রাম মিউজিক এবং নৃত্য। যা একটি যুদ্ধের দৃশ্যের অনুকরণ করে থাকে।

আরো পড়ুন:

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পুতিনকে ফোন করবেন ট্রাম্প

গাজা থেকে ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

এ পরিবেশনার জন্য প্রায় বিশজন পুরুষ দুটি সারিতে মুখোমুখি দাঁড়ায়। বর্শা বা তরবারি বোঝাতে তাদের হাতে থাকে পাতলা বাঁশের লাঠি (কঞ্চির মতো)। দুই সারির মাঝে সংগীতশিল্পীরা ছোট-বড় ঢোল, খঞ্জনি এবং পিতলের সিম্বাল (ঝাঁজি) বাজায়, গান গায়। মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে মেয়েরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে সামনে দাঁড়িয়ে তাদের লম্বা চুল এদিক-ওদিক ছুঁড়ে মারে।

এই যে গান গাওয়া হয় তাতে পুনরাবৃত্তিমূলক ধাঁচে সাতটি সুর রয়েছে। উপলক্ষ অনুসারে উচ্চারিত কবিতা পরিবর্তিত হয়। ওমানের সালতানাত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিয়ে এবং অন্যান্য উৎসবে আল-আয়ালা পরিবেশিত হয়। এতে অংশ নেওয়া শিল্পীরা বিভিন্ন গোষ্ঠীর এবং বিভিন্ন বয়সের হয়ে থাকেন। তবে এতে যে প্রধান শিল্পী, তিনি সাধারণত উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। অন্যান্য অভিনয়শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। আল-আয়ালা সব বয়সি নারী-পুরুষ এবং শ্রেণির মানুষের জন্য।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, এই নাচ ও গান বেদুইন সংস্কৃতিতে ছিল পুরুষদের পক্ষ থেকে দেওয়া সুরক্ষার প্রতি মেয়েদের বিশ্বাস ও আস্থা প্রকাশের একটি উপায়। শতাব্দী ধরে কাতার, সৌদি আরব ও বাহরাইনের মতো দেশে এই আল-আয়ালা নাচ নিয়মিত হয়ে আসছে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নারীরা চুল উড়িয়ে নৃত্যটি পরিবেশন করে থাকেন। 

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব শ স ব গত

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি। 

৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে। 

আরো পড়ুন:

দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে

সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা

২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা। 

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী। 

উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” 

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।” 

চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়। 

মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ