প্রায় দেড় যুগ আগের কথা। গাজীপুরের টঙ্গীতে ১০ হাজার বর্গফুটের ছোট্ট একটি কারখানায় জুতা তৈরি শুরু করেছিল দেশীয় প্রতিষ্ঠান এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্টস। যেটি লোটো বাংলাদেশ নামেই বেশি পরিচিত। সে সময় পুঁজি ছিল ১৫ লাখ টাকা ও কর্মী মাত্র ৩৫ জন। সেই প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে বড় হয়েছে। এখন ৯০ হাজার বর্গফুট জায়গায় পণ্য তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি; আর সেখানে কাজ করছেন দুই হাজার মানুষ।

সম্প্রতি নিজেদের কার্যক্রম আরও বড় করার উদ্যোগ নিয়েছে লোটো। সে জন্য গাজীপুরের কাপাসিয়ায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে নিজস্ব কারখানা নির্মাণ শুরু করেছে তারা। গতকাল রোববার কাপাসিয়ার আমরাইদ বাজার এলাকায় নতুন এই কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। একই অনুষ্ঠানে লোটোর তৈরি সুপার লাইট নামের নতুন একটি মডেলের জুতার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বর্তমানে পণ্য বিক্রি করে বছরে সব মিলিয়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি আয় করছে লোটো। নতুন কারখানা চালু হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের আয় ৮০০ কোটি টাকা ছাড়াবে। নতুন এই কারখানায় এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানির পথও সুগম হবে।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী জামিল ইসলাম, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের প্রধান নির্বাহী নাজিত মিওয়ানাগ, ব্র্যাক ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) তারেক রেফাত উল্লাহ খান, প্রাইম ব্যাংকের এএমডি ফয়সাল রহমান, গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার চৌধুরী মোহাম্মদ জাবের সাদিক, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান প্রমুখ।

যেভাবে শুরু

২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় লোটোর। শুরুতে সাবকন্ট্রাকটিং (ঠিকায় কাজ) ভিত্তিতে অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য জুতা বানাত তারা। ২০১১ সাল থেকে লাইসেন্স চুক্তির মাধ্যমে দেশেই ইতালির লোটো ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরি ও বিপণন করছে তারা। শুধু চামড়াজাত পণ্য নয়, তৈরি পোশাক খাতেও প্রবেশ করেছে এক্সপ্রেস লেদার। ২০১৯ সাল থেকে তারা ব্রিটিশ কোম্পানি লি-কুপারের হয়ে পোশাক তৈরি করছে। পাশাপাশি রয়েছে নিজস্ব পোশাক ব্র্যান্ড ‘দ্য এক্সপ্রেস’। বর্তমানে ইতালি, স্পেনসহ কয়েকটি দেশে সীমিত আকারে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে তাদের।

নিজেদের পণ্য উৎপাদন ও বিপণনকে আরও বিস্তৃত করতে এবার নতুন বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে এক্সপ্রেস লেদার। সে জন্য কাপাসিয়ায় প্রায় ২৫ বিঘা জায়গায় একটি শিল্প পার্ক গড়ে তুলছে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে প্রায় আড়াই লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। কারখানাটিতে জুতা, তৈরি পোশাক ও বিভিন্ন ধরনের উপকরণ (অ্যাকসেসরিজ) তৈরির তিনটি পৃথক উৎপাদন লাইন থাকবে। এই প্রকল্পে মোট বিনিয়োগ করা হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। আগামী দুই বছরের মধ্যে নতুন কারখানাটি উৎপাদনে আসবে বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান।

২৪ হাজার কোটি টাকার বাজার

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে ১৮ কোটি মানুষের জন্যই জুতা প্রয়োজন হয়। এটি অনেক বড় বাজার। যদিও দেশে জুতার বাজার নিয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বিভিন্ন জরিপ থেকে অনুমান করা হয়, স্থানীয় জুতার বার্ষিক বাজার ২২ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ আসে ব্র্যান্ডের জুতা থেকে। শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এপেক্স, বাটা ও লোটো। এ ছাড়া বছরে প্রায় ১১১ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি হয়।

বিশাল এ বাজারে নিজেদের হিস্যা বাড়াতে চায় এক্সপ্রেস লেদার। বর্তমানে টঙ্গীর কারখানায় প্রতি মাসে আট লাখ জোড়া চামড়ার জুতা, স্যান্ডেল ও স্লিপার তৈরি হয়। এ ছাড়া চামড়ার ব্যাগ, ওয়ালেট ও বেল্ট, স্কুল ব্যাগ ও ব্যাকপ্যাক এবং ইনসোল ও মোজার মতো বিভিন্ন উপকরণ তৈরি হচ্ছে। নতুন কারখানায় এ উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বাড়তে পারে বলে আশা প্রতিষ্ঠানটির।

২০১২ সালে রাজধানীর উত্তরায় প্রথম আউটলেট বা বিক্রয়কেন্দ্র দিয়েছিল এক্সপ্রেস লেদার। বর্তমানে সারা দেশে প্রতিষ্ঠানটির ২২০টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কোম্পানিটি আরও দুই শতাধিক নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র, ২০০ ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং ৫ হাজারের বেশি সরবরাহকারী বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে চীনা একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে এক্সপ্রেস লেদার। ওই চীনা প্রতিষ্ঠান জুতা তৈরিতে তাদের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সেবা দেবে। এ ছাড়া একই অনুষ্ঠানে ‘সুপার লাইট’ নামের নতুন মডেলের জুতার উদ্বোধন করা হয়, শিগগিরই এটি বাজারে আসবে।

এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্টসের এমডি কাজী জামিল ইসলাম বলেন, টাকার অবমূল্যায়ন ও ডলার–সংকটের কারণে গত দু-তিন বছরে উৎপাদন ব্যয় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে এই সময়ে বেশ কিছু নতুন যন্ত্র আমদানি করে দেশে উৎপাদন দক্ষতা বাড়িয়েছে এক্সপ্রেস লেদার। এ কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও পণ্যের দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।

কাজী জামিল ইসলাম আরও বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীল সরকার প্রয়োজন। আমরা প্রধানত স্থানীয় বাজারের জন্য পণ্য তৈরি করি। ফলে রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো প্রণোদনা পাই না। এ ক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে নীতি সহায়তা পেলে আমরা আরও সামনে গিয়ে যেতে পারব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদে লা রিভের ‘ডিভোশন’

প্রকৃতির রঙ, রূপ ও সরল সৌন্দর্যের কাছে নিজেকে নিবেদন করতে পারার মাঝে নির্মল এক আনন্দ লুকিয়ে আছে। দিনশেষে প্রকৃতিই আমাদের নতুন করে বাঁচতে শেখায়, ইতিবাচক হতে শেখায়। এমনই এক সরল ভাবনা থেকে দেশের সেরা শীর্ষস্থানীয় ব্র‌্যান্ড লা রিভ নিয়ে এসেছে ডিভোশন বা আত্মনিবেদন শিরোনামে ঈদ-উল-আজহার দারুণ একটি কালেকশন। 

লা রিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘চলতি বছরের কালেকশনটি ডিজাইন করা হয়েছে আত্মসমর্পণের ইতিবাচক অনুভূতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। আমরা অনেকেই ঈদ মানেই শুধু উৎসব ভাবি, কিন্তু ঈদ-উল-আজহার মূল শিক্ষা হলো ত্যাগ, দায়িত্ব আর ভালবাসার মাধ্যমে আত্মাকে আরো সমৃদ্ধ করা। এই নিবেদন হতে পারে প্রকৃতির সরল সৌন্দর্যের কাছেও। যার ফলে আমাদের মাঝে সাম্য ও সামঞ্জস্যতার ভারসাম্য ঠিক থাকে।   আত্মনিবেদনের এই গভীর অনুভূতিই আমরা প্রকাশ করেছি পোশাকের রঙ, ডিজাইন আর ফেব্রিকে। গরমের সময় এবং ঈদের ব্যস্ততায় যেন আরাম আর স্টাইল দুইই মেলে, সেই ভাবনা থেকেই তৈরি হয়েছে এবারের কালেকশন’।

তিনি জানান, চলতি গ্রীষ্ম ও বর্ষার কথা মাথায় রেখে আরামদায়ক ফেব্রিক বেছে নেওয়া হয়েছে যেমন সুতি, লিনেন, মসলিন ও শিফন। থাকছে সাবলীল কাট, ফ্লোয়ি সিলুয়েট, এবং চলাফেরায় সহজতা এনে দেওয়া ডিজাইন। রঙের প্যালেটেও থাকছে আর্দি, বেজ ও নেভী প্যালেটের প্রাধান্য। সেন্টিমেন্ট কালার হিসেবে স্কাফড লেমন ও ওয়াশড ব্ল্যাকের অর্গানিক শেড, যেন সামার ও উৎসবের রঙে হালকা-গাড় শেডের ভারসাম্য বজায় থাকে। প্রাইমারি কালার প্যালেটে আর্মি গ্রিন, ব্ল্যাক, লাইট গ্রে, অফ হোয়াইট, কোকো ব্রাউন, টেরাকোটা, রেড, বার্ন অরেঞ্জ, ভায়োলেট-গ্রে, লাইট ল্যাভেন্ডার, অলিভ স্যান্ড, প্যাস্টেল ইয়েলো, ক্রিম, মাস্টার্ড ইয়েলো, চকোলেট ব্রাউন, স্লেট ব্লু’র মতো শান্ত, মিষ্টি ও উজ্জ্বল রঙের সমাহার।

প্রিন্টস্টোরিতে প্রাধান্য পেয়েছে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন মৌসুমের সবচেয়ে ট্রেন্ডি মোটিফগুলো। হেয়ারলুম ব্লুমের প্রিন্টস্টোরিতে আমরা ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়েছি, যেখানে ট্যাপেস্ট্রিতে ফোটানো উজ্জল রঙের ফুল-লতা-পাতার প্রিন্ট দেখা যাবে। অর্নামেন্টাল মিডাও স্টোরিতে থাকবে ভিন্টেজ ফ্লোরালের প্রিন্ট। ভেইল্ড ভারডিওর নামের প্রিন্টস্টোরিতে দেখা যাবে শুকনো পাতার সৌন্দর্য, যা সামারের যেকোন উৎসবে মানিয়ে যাবে। জিওমেট্রিক রেলিক শিরোনামের প্রিন্টে দেখা যাবে ব্লক স্টাইলে জ্যামিতির কাজ। আরো থাকবে এথনিক নকশার ভারি প্রিন্ট, তার পাশেই দেখা যাবে মনোক্রোমাটিক বেইজ রঙের কালেকশন।

তিনি যোগ করেন, ঈদের পার্টিপোশাক ও পাঞ্জাবিতে কারচুপির লক্ষনীয় কাজ করা হয়েছে এবার। বিশেষ করে পাঞ্জাবি ও নারীদের এথনিক ডিজাইনে কারচুপির মাধ্যমেই প্রিন্টস্টোরির মোটিফগুলো ফুটিয়ে তুলেছি আমরা। প্রিন্টস্টোরিকে হাতের কাজে ফোটানোর এই প্রয়াস সবাই পছন্দ করবেন বলেই আশা করছি আমরা। পাশাপাশি, জ্যাকার্ড স্ট্রেচ, সিল্ক-ভিসকোস, জুম আর জ্যাকার্ড ভিসকোসের মত সামার-ফেস্টিভিটি উপযোগি কাপড়ের এক্সক্লুসিভ কিউরেশনও করা হয়েছে এবার।

নারীদের ঈদ-উল-আজহার কালেকশনে থাকছে এথনিক, ক্যাজুয়াল ও ওয়েস্টার্ন ফিউশন পোশাকের ডিজাইন। থাকবে লং কামিজ, সালোয়ার কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, গাউন, আবায়া, স্কার্ট সেট, শ্রাগ ও কেপ স্টাইল টপ এবং কটন ও হাফ সিল্ক শাড়ি। এছাড়াও এক্সক্লুসিভ পার্টি লাইন ‘নার্গিসাস’-এ দেখা যাবে মসলিনের গাউন, ভারি কারচুপি করা সালোয়ার কামিজ ও কাফতান। ঈদের সকালের আরামদায়ক আউটফিট হিসেবে থাকছে শর্ট ও মিড-লেংথ টিউনিক, শার্ট-টপস, টপ-বটম সেট ও আরামদায়ক বটমসের সমাহার।

পুরুষদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে মিনিমাল ও ভারি কাজের পাঞ্জাবি,  শার্ট, পোলো, টি-শার্ট, এবং আরামদায়ক প্যান্ট-পাজামা। স্টাইল-পছন্দে এগিয়ে থাকা টিনদের জন্য থাকছে উৎসবের জন্য মানানসই ট্রেন্ডি পোশাকের একটি বিশাল কালেকশন। শিশুদের জন্য থাকছে সালোয়ার কামিজ, ফ্রক, টিউনিক, ঘাগরা-চোলি, পাঞ্জাবি, পোলো, টি-শার্ট আর বাচ্চাদের জন্য আরামদায়ক বটমস। মা-মেয়ে আর বাবা-ছেলের জন্য থাকছে মিনি-মি কালেকশন, যাতে পুরো পরিবারের সবার মিলেমিশে ঈদ করার আনন্দ পূর্ণতা পায়।

লা রিভ ঈদ-উল-আজহা ২০২৫ কালেকশন পাওয়া যাচ্ছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও বরিশালের লা রিভ স্টোরে। আর ঘরে বসেই ঈদের শপিং করতে চাইলে ভিজিট করুন লা রিভের ওয়েবসাইট অথবা ডাউনলোড করুন লা রিভ অ্যাপ। মেসেঞ্জারেও অর্ডার দেওয়া যাবে।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ