অব্যক্ত যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শিশুটি, কী হয়েছে জানেন না বাবা-মা
Published: 23rd, May 2025 GMT
হাসপাতালের শয্যায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে শিশুটি। যৌনাঙ্গের রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে অস্ত্রোপচারের পর পরিয়ে দেওয়া হয়েছে স্যানিটারি প্যাড। শরীরে দেওয়া হচ্ছে রক্ত। পাশে বসে বিমর্ষ মুখে তাকিয়ে আছেন শিশুটির বাবা-মাসহ স্বজনেরা। মাঝেমধ্যে এপাশ-ওপাশ করতে চেয়ে অব্যক্ত যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শিশুটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। সদর উপজেলার একটি গ্রামের চার বছর বয়সী কন্যাশিশুটির সঙ্গে আসলে কী ঘটেছে, তা পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না বাবা-মা। তবে ঘটনাটিকে কেউ কেউ ধর্ষণের চেষ্টা হতে পারে বলে ধারণা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সকালে বাড়ি থেকে ভ্যান নিয়ে বের হন শিশুটির ভ্যানচালক বাবা। শিশুটির বড় তিন বোন চলে যায় স্কুলে। সকাল ১০টার পর চার বছর বয়সী শিশুটি মায়ের সঙ্গে বাড়ির পাশের বাদামখেতে বাদাম তুলতে যায়। কিছুক্ষণ পর শিশুটি একা বাড়িতে ফিরে আসে। দুপুর ১২টার দিকে তাঁদের এক স্বজনের মাধ্যমে শিশুটির মা খবর পান, তাঁর মেয়ের যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত ঝরছে। তিনি বাড়িতে গিয়ে স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় শিশুটিকে প্রথমে স্থানীয় একজন পল্লিচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। পরে তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। রক্ত বন্ধ করতে সেখানে বেলা আড়াইটার দিকে শিশুটির অস্ত্রোপচার করা হয়।
শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমার বাচ্চার কী কারণে এমন হয়েছে, এখনো বুঝতে পারছি না। ঘটনার পর থেকে বাচ্চাটা কাঁদতে কাঁদতে অচেতন হয়ে গেছে। কিছু বলতেও পারেনি। যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কিছুক্ষণ আগে চোখ মেলে শুধু একবার “বাড়ি যাব” বলেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি তো বাড়িতে ছিলাম না। ঘটনার পর শুনেছি স্থানীয় লোকজন সন্দেহ করে আমার ছোট ভাইকে (৩০) ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে গিয়েছিল। পরে আমি ফোন করে বলেছি, আগে বাচ্চাটা সুস্থ হোক। ওর কাছে শুনে পরে ব্যবস্থা হবে। পরে তাঁকে আমার জিম্মায় দিয়েছে।’
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুল কাদের বলেন, শিশুটিকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন তার যৌনাঙ্গ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। রক্ত বন্ধ করতে তাকে অস্ত্রোপচারকক্ষে নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে, সেটির জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন হবে। মেডিকেল বোর্ডই এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানাতে পারবে।শিশুটির এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বলেন, শিশুটির শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। মূল ঘটনা সম্পর্কে কেউ কিছুই বলতে পারছে না। কেউ কিছু দেখেনি। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ আর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে শিশুটির এক চাচাকে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে কিছুক্ষণ আটকে রাখা হয়েছিল। পরে তাঁকে শিশুটির বাবাসহ তাঁদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত