মাদারীপুরে ১০ দফা দাবিতে ফিলিং স্টেশনগুলোতে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। আজ রোববার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জেলার বৈধ ১৬টি পেট্টল পাম্পে এই কার্যক্রম পালন করা হয়। বাংলাদেশ পেট্টোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিকদের সংগঠনের এই সিদ্ধান্তে ভোগান্তিতে পড়েন তেল নিতে আসা ক্রেতারা।

জানা যায়, জ্বালানি তেল বিক্রির কমিশন ন্যূনতম শতকরা ৭ টাকা, সওজের জমি ইজারা সহজ করা, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স বাতিল, ট্যাংকলরি চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তিতে হয়রানি বন্ধসহ ১০ দফা দাবি তুলেন মালিক পক্ষ। এ সময় ফিলিং স্টেশনগুলোতে অকটেন, পেট্টোল, ডিজেল, কোরোসিনসহ জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। এতে জেলার ১৬টি বৈধ পাম্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের এ সময় অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। তেল কিনতে এসে বিড়ম্বনা আর ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা।

মোটরসাইকেল চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘মোটরসাইকেলে তেল না থাকায় পাম্পে আসি। এখানে এসে দেখি, পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ। এখন নিরুপায় হয়ে পড়েছি। তেল বিক্রি বন্ধ, এটা আগেভাগে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করা উচিত ছিল। তাহলে ভোগান্তি হত না।’

মাইক্রোবাস চালক কামরুল আকন, ‘আমরা বিভিন্ন জায়গায় ভাড়ায় মাইক্রোবাস নিয়ে যাই। জ্বালানিতেল বিক্রি বন্ধের কারণে বিপাকে পড়ে গেছি। যাত্রীদের নিয়ে দূরে যেতেও পারছি না।’

মাদারীপুর জেলা পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি ইউসুফ হাওলাদার বলেন, ‘১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পেট্টোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদ এ কর্মসূচির ডাক দেয়। এর ফলে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এই দাবি না মানা হলে আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে সংগঠনের পক্ষ থেকে।’

প্রসঙ্গত, জেলার পাঁচটি উপজেলায় বৈধ ১৬টি পাম্পে প্রতিদিন এক লাখ ৬০ হাজার লিটার জ্বালানি তেল বিক্রি হয়। আর অবৈধভাবে খুচরা বাজারে তেল বিক্রির দোকানের সংখ্যা কয়েকশ’।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মননে প্রজ্ঞায় সৃজনে

এমন একটা কথা রটে গেছে যে ‘বই আজকাল আর কে পড়ে’। কথাটি ভুল স্থানে ভুলভাবে ব্যবহৃত হতে বেশি দেখা যায়। দেখুন যারা পড়ুয়া, যারা বুদ্ধির চর্চা করেন, তাদের সংখ্যা বরাবরই কম। যে কারণে সফল মানুষের সংখ্যা কম, গড় মানুষ বেশি এবং উৎকৃষ্ট শাসকের সংখ্যা কম, অপশাসক আর শাসিতের (পড়ুন শোষিতের) সংখ্যা বেশি। বুদ্ধির চর্চা মানুষে মানুষে বৌদ্ধিক পার্থক্য গড়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয় না, বংশানুক্রমে এর সুফল-কুফল দৃষ্টান্তসহ রাখে। 
সিইও-ওয়ার্ল্ড পত্রিকা একটি পরিসংখ্যান তৈরি করেছে এ বছর, যেখানে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ বই পাঠে উন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক কম সময় দিচ্ছে। ৯৭তম অবস্থান আমাদের দেশের! পার্থক্য কীভাবে তৈরি করছি আমরা নিজেরাই, বই পাঠে সময় দানের অনুপাতই বলে দেয়। আবার সব বই কিন্তু বুক বাঁচাবে না। কিছু বই আছে ব্যতিক্রম, উৎকৃষ্ট। এরা এক ধরনের বৌদ্ধিক আভিজাত্য তৈরি করে। সেই বইগুলো চিনতে পারা, চিনিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। সমর্থ কি অসমর্থ, যা-ই হোক না কেন, কাগজে-কলমে কোনো একটি সাহিত্য পুরস্কারের আয়োজকবৃন্দ এই কাজটি করতে চায়। 
৪ জুলাই রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে অনুষ্ঠিত ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩-এর অনুষ্ঠানটি উপস্থিত লেখক-পাঠক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব-রাজনীতিক-ব্যবসায়ীসহ সকল স্তরের মানুষের মন আলো করে রাখবে আরও অনেকদিন। শুরু হয়েছিল শেষ বিকেলে, ৬টায়। পর্দা নেমেছিল রাত ৯টায়। দীর্ঘ সময়জুড়ে একে একে এলো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, পরিচিতি-আলাপন, পুরস্কার বিতরণ। এ বছর চারজন পুরস্কৃত হয়েছেন। শ্রেষ্ঠ তরুণ কথাসাহিত্যিক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন উম্মে ফারহানা। শ্রেষ্ঠ সৃজনশীল সাহিত্যিক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন ধ্রুব এষ এবং শ্রেষ্ঠ মননশীল সাহিত্যিক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন আমিনুল ইসলাম ভুইয়া। আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন হাসনাত আবদুল হাই। 
উম্মে ফারহানা যে গ্রন্থটির জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন, এর নাম ‘টক টু মি’। গল্পগ্রন্থ। ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আটটি গল্প এতে স্থান পেয়েছে। ‘পাবে না সময় আর হয়তো’, ‘গণশা’দা’, ‘আশিকি টু’, ‘এই ফুল ঝামেলা’, ‘ডায়ানা নামের বিলাই’, ‘আমার ভালো আব্বা’, ‘সুজানা’ ও ‘টক টু মি’। উম্মে ফারহানার লেখা সাধারণ ধ্রুপদি সাহিত্য পাঠকদের একটুখানি বিপাকে ফেলে দিতে পারে। কেননা, ভাষা এখানে সত্যের মতো রূঢ়। তাতে সৌন্দর্য আছে অবশ্যই। তবে তা গলায় পরার অলংকারের মতো সৌন্দর্য নয়। সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে উপমা ধার করে বললে, বলতে হয়– বন্যেরা বনে যেমন সুন্দর, উম্মে ফারহানার গল্প, ভাষা সেই সুন্দরে বিভোর। ভাষা উত্তপ্ত, কাঁটালো, এ ভাষা হৃদয়ে রক্তপাত ঘটাতে পারে।   
ধ্রুব এষ যে গ্রন্থটির জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন, সেটি নিয়েও ধ্রুপদি সাহিত্য পাঠকদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এ গ্রন্থ কি তাদের পেয়ালার চা? এখানেও আরেক পৃথিবীর খেয়াল বাজছে। ধ্রুব এষের গ্রন্থটি উপন্যাস। আমাদের পরাবাস্তব টাউনের দিনলিপি। লেখার বিমূর্ততা, মুহুর্মুহু প্লট ও পট-বদল ঘটছে। চরিত্রগুলো নিছক ‘চরিত্র’ নয়। যেন মন। মনের যেমন ক্ষণে ক্ষণে মতি বদল ঘটছে, এ গ্রন্থের চরিত্রগুলোরও তেমন স্থান-কাল পর্ব ও পার্বণ বদল ঘটছে। অপরিসর উপন্যাস। বর্ণনার ধরনের কারণে সুপরিসরের আবহ ফোটে। তবে খেই হারানোর সুযোগ নেই। এই লেখা পাঠককে ‘নতুন কিছু’ পাঠের অভিজ্ঞতা দেয়।
দুটি গ্রন্থই এমন ব্যতিক্রমী আমাদের কাছে ধীরে ধ্রুপদের সংজ্ঞা বদলে যাচ্ছে, চিন্তার জগতে একটা প্যারাডাইম শিফট ঘটছে। অর্থাৎ চিন্তা পদ্ধতিতে আসছে আমূল পরিবর্তন। ফলে পাঠকের ভবিষ্যৎ গন্তব্যও যাবে বদলে। আমরা এখনও প্রকৃত ভালো ও মন্দ বিচারের ক্ষমতা রাখি না। অনেক সিদ্ধান্ত টেনে দেবে ভবিষ্যৎ, টেনে দেবে ইতিহাস। তবু ভিন্নতাকে তার স্বকীয়তাসহই গ্রহণ করতে হবে, যা আমাদের বিচারকরা করেছেন। তারাও ধ্রুপদি মানুষ। কিন্তু ধ্রুপদকে আবদ্ধ সরোবর হতে দেননি, যথাসাধ্য। গ্রন্থগুলো নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে বাজি ধরা যেতে পারে। তাই এই স্বীকৃতি। শেষ বিচার বর্তমান ও অনাগত সময়ের পাঠকের। শ্রেষ্ঠ মননশীল গ্রন্থটি আদর্শ ধ্রুপদ বলয়ের। আমিনুল ইসলাম ভুইয়ার ‘প্লেটো প্রবেশিকা’। আলো নিজস্ব গতিতে পথ অতিক্রম করে। আর প্রজ্ঞার আলোও নিজস্ব গতিতে কাল অতিক্রম করে। তা বিবেক-নির্গত আলো। প্রাচীন প্রাজ্ঞ মানুষেরা যে ধারায় চিন্তা করেছেন, তা আমাদের চিন্তাকাঠামো গড়ে দিয়েছে, আমরা সেই অনুপাতে আমাদের মূল্যবোধকেও আকার দিয়েছি। নতুন চিন্তায়, নতুন সিদ্ধান্তে যেতে হলে অতীতের কাঠামো– তার শুদ্ধ-অশুদ্ধ, কালের কিরিচে কতটা কাটা পড়েছে বা পড়েনি, সেইসমস্ত বিচারে রাখা চাই। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে এবং মানুষের জ্ঞান তার সামগ্রিক ইতিহাসেরই লব্ধি। সেই যে প্রাচীন অমূল্য জ্ঞানের খনি, তাতে প্রবেশের জন্য তো প্রবেশিকা চাই। প্লেটো প্রবেশিকা তা-ই। প্লেটোর ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রকাঠামো বুঝতে, যুঝতে ও নতুন চিন্তাসূত্র উদঘাটনে ওই গ্রন্থ পাঠককে ‘অধিকার’ দান করতে পারবে বলে বিচারকদের বিশ্বাস হয়েছে।


আজীবন সম্মাননা নিয়ে বলতে গিয়ে আমাদের কলম হয়তো খানিকটা আবেগাক্রান্ত হবে। কেবল রেনেসাঁকাল ছাড়া কোনো জাতি একসঙ্গে অনেক সূর্যসন্তান পায় না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বর্তমান রেনেসাঁকাল নিজেকে চিনতে পারে না, এ কালে রেনেসাঁ চলছিল কিনা তা বিচারের ভার পড়ে ভাবীকালের ওপর। আমরা কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তরকালে একসঙ্গে সাহিত্যে অনেকজন শিল্পী-সাহিত্যিক পেয়েছি, যারা সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুরাষ্ট্রকে যৌবনে পৌঁছে দিয়েছেন। এখন যৌবনের দ্বন্দ্ব-দ্বৈরথ সে সহ্য করছে। কঠিন এই সময় পেরিয়ে গেলে জীবন যখন খানিকটা স্থির হবে, মানুষ বুঝতে পারবে বা টের পাবে, কোন কাল পেরিয়ে কোন কাল এলো। আমার ধারণা, একটি নীরব রেনেসাঁকাল চলেছে বাংলাদেশের জন্মের পর। এবং সেটিকে যারা বহন করেছেন, নজরুলের উপমা ধার করি যদি, ‘সেই তূর্যবাদকদের’ একজন হিসেবে হাসনাত আবদুল হাইকেও পেয়েছিলাম আমরা, এ কথা বলতেই হয়। সৃজনশীল সাহিত্য, মননশীল সাহিত্য– দুটি শাখার প্রায় সমস্ত প্রশাখায় তাঁর ফোটানো ফুল আমাদের আরও বহুকাল সৌরভ দিয়ে যাবে। ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পদক স্বয়ং তাঁকে পেয়ে সম্মানিত হয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পর্ষদ প্রত্যেকের কর্মকে উদযাপনের সুযোগ পেয়ে কৃতার্থ হয়েছে– এ কথা বারংবার উচ্চারণ করেছে। 
এ অনুষ্ঠান সব সময় স্বকীয় ধারায়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। শুরুতেই অর্থি ড্যান্স একাডেমি পঞ্চকবির গানের সঙ্গে নাচ পরিদর্শন করে। পাঁচ কবি– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, অতুল প্রসাদ সেন ও কাজী নজরুল ইসলামের গানের ছোট ছোট অংশের সঙ্গে বদলে যাওয়া নাচের এই আয়োজন দারুণ পছন্দ করেন দর্শকরা। প্রথমে বেজে ওঠে রজনীকান্ত সেনের গান, ‘প্রেমে জল হয়ে যাও গলে’। চলে এর আরোহণ, অবরোহণের সঙ্গে মাত্রাসিদ্ধা নাচ চলতে থাকে। হঠাৎ গানে পরিবর্তন। বেজে ওঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! সঙ্গে সঙ্গে নাচের মুদ্রায়ও বদলে যায়। ‘ঢালো ঢালো শশধর, ঢালো ঢালো জোছনা...’। বাক্য তার চক্র পূর্ণ করে ফিরে যায়, সেই বিখ্যাত ‘আয় তবে সহচরী’র সূচনায়। বাঙালির অতিপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীতের একটি। এরপর বেজে ওঠে অতুলপ্রসাদ সেনের ‘যাব না যাব না যাব না ঘরে’, বদলে যায় আলোছায়া, আবারও ঘটে যায় নাচের মুদ্রাবদল। দর্শককুল এরই মাঝে এই নান্দনিক দৃশ্য বদলের জাদুতে আটকা পড়ে গেছেন। এলেন নজরুল। ‘শাড়িতে কাঁটালতা জড়িয়ে জড়িয়ে যায়...’। চমকে চমকে ভীরু ভীরু পায়ে পল্লিবালিকার বনপথে যাওয়ার যে ললিত ছবি, ধ্রুপদি ছবি নজরুল এঁকে দিয়েছেন বাঙালির মনে, সেই ছবিই যেন ভেসে ওঠে নাচে। হঠাৎ বজ্রনির্ঘোষ! মঞ্চে নীল আঁধার, নৃত্যশিল্পীরা কপট ভয়ে চারপাশে তাকাচ্ছেন। বেজে ওঠেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। ‘বেলা বয়ে যায়।’ ছোট্ট পানসি তরীর মাঝি ডাকছে সবাইকে। সেই আহ্বান পৌঁছে দেওয়া হলো। নৃত্য শেষ। তুমুল করতালি ও অভিনন্দন জিতে নিয়ে শিল্পীরা মঞ্চ থেকে সরে গেলেন।
এর পরই শামা রহমান রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন। ‘আবার এসেছে আষাঢ়, আকাশ ছেয়ে/ আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে/ এই পুরাতন হৃদয় আমার...’ মধুক্ষরা কণ্ঠ তাঁর। এরপর গাইলেন রবীন্দ্রনাথের প্রেমপর্বের একটি গান যেখানে বৃষ্টির সুবাস আছে। ‘আজ গোধূলিলগনে এই বাদলগগনে তার চরণধ্বনি আমি হৃদয়ে গণি...’। সেদিন, ৪ জুলাই, ২০ আষাঢ়। স্নাত বিকেল গড়িয়ে তখন গোধূলি লগ্ন সত্যিই নেমে এসেছিল। এরপর তৃতীয় সংগীত, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি’ ললিত বিষণ্নতা ছড়াল। সর্বশেষ পরিবেশন করলেন এমন এক গান, যে গান বিপুল উপস্থিতির বুকে যুগপৎ দুঃখের উচ্ছ্বাস ও ক্ষমা-বন্দনার আনন্দ জাগায়। ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে শোন শোন পিতা’। এরপর এলো সান্ধ্য উপাসনার বিরতি। 
এ অনুষ্ঠানের একটি বিশেষত্ব হলো এখানে প্রত্যেক পুরস্কৃতকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়। নেপথ্যে তাদের জীবন ও কাজের বর্ণনা উচ্চারিত হতে থাকে। অন্তঃস্থ বিরতিতে তাদের সঙ্গে আলাপচিত্রের বিশেষ অংশগুলো প্রদর্শিত হয়। সেখানে তারা জীবনের নানান বাঁক, বিশেষ মুহূর্ত, প্রবণতা, স্মৃতিচারণ প্রভৃতি বর্ণনা করেন। সম্ভবত এই পর্বটিই এ অনুষ্ঠানের দর্শকরা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন। সময় কেটে যেতে থাকে দ্রুত। 
আয়োজন ও উদযাপন উপলক্ষ রেখে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন পুরস্কার বিজয়ী উম্মে ফারহানা, ধ্রুব এষ ও আমিনুল ইসলাম ভুইয়া। স্মৃতিচারণে শ্রোতাদের আবেগস্নাত করে তোলেন হাসনাত আবদুল হাই। বিচারকদের প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলেন ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা-উত্তর প্রতিক্রিয়া ও পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেন ব্যাংকটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবির ও ভাইস চেয়ারপারসন ফারুক মঈনউদ্দীন। আপন প্রতিক্রিয়া ও পরিকল্পনা ব্যক্ত করেন হা-মীম গ্রুপ ও টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ। শুভেচ্ছার পর অনুভূতি ও স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করেন সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী এবং অনুষ্ঠানের সার্বিক শুভ বিবৃত করেন সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। গোটা সময় সুচারু সঞ্চালনায় ছিলেন সমকালের উপসম্পাদক মাহবুব আজীজ।
সমাপনী বক্তব্যের পর ভোজপর্বের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারের ১৩তম আসর। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ