Samakal:
2025-05-29@01:45:38 GMT

গলার সমস্যা টনসিল

Published: 26th, May 2025 GMT

গলার সমস্যা টনসিল

টনসিল এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি বা লিস্ফয়েড টিস্যু। এতে কোনো ধরনের ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে আমরা এটিকে টনসিলাইটিস বলি।  মানবদেহে গলার ভেতরে দু’পাশে একজোড়া Palatine tonsi থাকে। টনসিলের প্রদাহ বলতে আমরা এর ইনফেকশনকে বুঝে থাকি।  টনসিলের ইনফেকশন একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। শীতে বাড়ে টনসিল। টনসিলাইটিস সাধারণত ৩ থেকে ১৪ বছরের শিশুর মধ্যে বেশি দেখা যায়। বড়দের ক্ষেত্রে যে একেবারে হয় না, তা কিন্তু নয়। টনসিল ইনফেকশনের জন্য ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উভয়ই দায়ী।  ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে প্রধানত বিটা হেমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাস দিয়ে হয়। এ ইনফেকশনের অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে বার বার ঠান্ডা সর্দি লাগা, পুষ্টিহীনতা, পরিবেশ দূষণ, দেহে অপর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অতিরিক্ত Cold Drinks –এ আসক্তি ও আবহাওয়ার পরিবর্তন।
লক্ষণ দেখে কীভাবে টনসিল ইনফেকশন বুঝবেন
lগলাব্যথা এবং সঙ্গে খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে এবং শরীরে ক্লান্তি ভাব থাকে। 
lজ্বর ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। সঙ্গে মাথাব্যথা ও বমির ভাব থাকতে পারে।  
lগলার সঙ্গে কানের সম্পর্ক রয়েছে। এ জন্য টনসিলের ইনফেকশনে কানে ব্যথা থাকবে এবং গায়ে ব্যথা হতে পারে।  
lশিশুর ক্ষেত্রে অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়তে দেখা যায়।  
lঅনেক সময় গুরুতর ইনফেকশনে মুখ খুলতে অসুবিধা হতে পারে। এই ধরনের সমস্যাকে আমরা তীব্র ইনফেকশন বা Acute tonsillitis বলে থাকি। চিকিৎসকের দেওয়া উপদেশ মেনে চললে এবং সঠিক সময়ে নিয়মিতওষুধ সেবন করলে টনসিলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক, মাউথওয়াশ, ব্যথার ওষুধ, এন্টিহিস্টামিন ও প্রচুর পরিমাণে পানি পানের মাধ্যমে এই ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হয়। কেউ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ না করে এবং চিকিৎসকের উপদেশ মেনে না চলে তবে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হয়ে থাকে, যাকে আমরা Chronic tonsillitis বলে থাকি।  চিকিৎসা শাস্ত্রে Chronic tonsillitis কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন যদি বছরে চার-পাঁচবার করে পরপর দুই বছর হয়, তবে অসুস্থ টনসিল অপারেশন করিয়ে নেওয়া ভালো।  
দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের ইনফেকশন থাকলে অপারেশন না করালে নিম্নোক্ত সমস্যা হতে পারে–
lটনসিলের ইনফেকশন চারপাশে ছড়িয়ে টনসিলে পুঁজ জমে ফোড়া হতে পারে (Peritonsilar Abscess) 
lটনসিল বড় হয়ে শ্বাস নেওয়ার পথ বন্ধ করে দিলে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এছাড়া  বড় টনসিলের কারণে খাবার গিলতে গেলে কষ্ট হতে পারে।
lঘন ঘন ঠান্ডা লাগা থেকে কানে ইনফেকশন হতে পারে।  
lবাতজ্বর বা Rheumatic Fever হতে পারে।  
lরক্তের মাধ্যমে টনসিলের জীবাণু কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 
lবয়স্কদের ক্ষেত্রে একদিকের টনসিল বড় থাকলে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থাকলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 
এ ধরনের সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়।  চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধের মাধ্যমে যদি সমাধান না হয়, তবে টনসিল অপারেশন করানো ভালো এবং নিরাপদ। আমাদের দেশে নিয়মিত টনসিল অপারেশন হচ্ছে। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারনে ইএনটি সোসাইটি থেকে টনসিলের রুটিন অপারেশন সর্বোচ্চ সতর্কতা ছাড়া যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে  বলা হয়েছে।
তবে আশার কথা তীব্র ইনফেকশন প্রথমে হলে সেক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভালো ওষুধ সেবন, উপদেশমতো ঠান্ডা এড়িয়ে চললে, কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করলে এবং আদা-লেবুমিশ্রিত লাল চা পান করলে অপারেশনের টেবিলে যাওয়া থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 
কখন টনসিলের অপারেশন করা যাবে না?
lটনসিলে তীব্র ইনফেকশন থাকলে অর্থাৎ জ্বর বা ব্যথা থাকা অবস্থায় অপারেশন করা যাবে না। তিন বছরের কম বাচ্চাদের।
lএছাড়াও কারও রক্তে হিমগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে/রক্তশূন্যতা থাকলে।
lহিমোফিলিয়া নামক রক্তরোগের ইতিহাস থাকলে।
lমহিলাদের মাসিক চলাকালীন অবস্থায়। 
[ নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ]
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র সমস য ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

গলার সমস্যা টনসিল

টনসিল এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি বা লিস্ফয়েড টিস্যু। এতে কোনো ধরনের ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে আমরা এটিকে টনসিলাইটিস বলি।  মানবদেহে গলার ভেতরে দু’পাশে একজোড়া Palatine tonsi থাকে। টনসিলের প্রদাহ বলতে আমরা এর ইনফেকশনকে বুঝে থাকি।  টনসিলের ইনফেকশন একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। শীতে বাড়ে টনসিল। টনসিলাইটিস সাধারণত ৩ থেকে ১৪ বছরের শিশুর মধ্যে বেশি দেখা যায়। বড়দের ক্ষেত্রে যে একেবারে হয় না, তা কিন্তু নয়। টনসিল ইনফেকশনের জন্য ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উভয়ই দায়ী।  ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে প্রধানত বিটা হেমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাস দিয়ে হয়। এ ইনফেকশনের অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে বার বার ঠান্ডা সর্দি লাগা, পুষ্টিহীনতা, পরিবেশ দূষণ, দেহে অপর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অতিরিক্ত Cold Drinks –এ আসক্তি ও আবহাওয়ার পরিবর্তন।
লক্ষণ দেখে কীভাবে টনসিল ইনফেকশন বুঝবেন
lগলাব্যথা এবং সঙ্গে খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে এবং শরীরে ক্লান্তি ভাব থাকে। 
lজ্বর ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। সঙ্গে মাথাব্যথা ও বমির ভাব থাকতে পারে।  
lগলার সঙ্গে কানের সম্পর্ক রয়েছে। এ জন্য টনসিলের ইনফেকশনে কানে ব্যথা থাকবে এবং গায়ে ব্যথা হতে পারে।  
lশিশুর ক্ষেত্রে অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়তে দেখা যায়।  
lঅনেক সময় গুরুতর ইনফেকশনে মুখ খুলতে অসুবিধা হতে পারে। এই ধরনের সমস্যাকে আমরা তীব্র ইনফেকশন বা Acute tonsillitis বলে থাকি। চিকিৎসকের দেওয়া উপদেশ মেনে চললে এবং সঠিক সময়ে নিয়মিতওষুধ সেবন করলে টনসিলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক, মাউথওয়াশ, ব্যথার ওষুধ, এন্টিহিস্টামিন ও প্রচুর পরিমাণে পানি পানের মাধ্যমে এই ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হয়। কেউ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ না করে এবং চিকিৎসকের উপদেশ মেনে না চলে তবে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হয়ে থাকে, যাকে আমরা Chronic tonsillitis বলে থাকি।  চিকিৎসা শাস্ত্রে Chronic tonsillitis কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন যদি বছরে চার-পাঁচবার করে পরপর দুই বছর হয়, তবে অসুস্থ টনসিল অপারেশন করিয়ে নেওয়া ভালো।  
দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের ইনফেকশন থাকলে অপারেশন না করালে নিম্নোক্ত সমস্যা হতে পারে–
lটনসিলের ইনফেকশন চারপাশে ছড়িয়ে টনসিলে পুঁজ জমে ফোড়া হতে পারে (Peritonsilar Abscess) 
lটনসিল বড় হয়ে শ্বাস নেওয়ার পথ বন্ধ করে দিলে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এছাড়া  বড় টনসিলের কারণে খাবার গিলতে গেলে কষ্ট হতে পারে।
lঘন ঘন ঠান্ডা লাগা থেকে কানে ইনফেকশন হতে পারে।  
lবাতজ্বর বা Rheumatic Fever হতে পারে।  
lরক্তের মাধ্যমে টনসিলের জীবাণু কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 
lবয়স্কদের ক্ষেত্রে একদিকের টনসিল বড় থাকলে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থাকলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 
এ ধরনের সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়।  চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধের মাধ্যমে যদি সমাধান না হয়, তবে টনসিল অপারেশন করানো ভালো এবং নিরাপদ। আমাদের দেশে নিয়মিত টনসিল অপারেশন হচ্ছে। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারনে ইএনটি সোসাইটি থেকে টনসিলের রুটিন অপারেশন সর্বোচ্চ সতর্কতা ছাড়া যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে  বলা হয়েছে।
তবে আশার কথা তীব্র ইনফেকশন প্রথমে হলে সেক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভালো ওষুধ সেবন, উপদেশমতো ঠান্ডা এড়িয়ে চললে, কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করলে এবং আদা-লেবুমিশ্রিত লাল চা পান করলে অপারেশনের টেবিলে যাওয়া থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 
কখন টনসিলের অপারেশন করা যাবে না?
lটনসিলে তীব্র ইনফেকশন থাকলে অর্থাৎ জ্বর বা ব্যথা থাকা অবস্থায় অপারেশন করা যাবে না। তিন বছরের কম বাচ্চাদের।
lএছাড়াও কারও রক্তে হিমগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে/রক্তশূন্যতা থাকলে।
lহিমোফিলিয়া নামক রক্তরোগের ইতিহাস থাকলে।
lমহিলাদের মাসিক চলাকালীন অবস্থায়। 
[ নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ]
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ