ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের দুয়োধ্বনির শিকার বামপন্থীরা
Published: 28th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বামপন্থীদের মশাল মিছিলকে উদ্দেশ্য করে দুয়োধ্বনি দিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী।
বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়ায় বিজয় একাত্তর হলের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে আদালতের রায়ে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারকে নির্দোষী ঘোষণা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট' এর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শিবিরকে অভিযুক্ত করে প্রতিবাদী মশাল মিছিল করেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট'।
আরো পড়ুন:
ঢাবিতে প্রকাশ্যে এল ইসলামী ছাত্রীসংস্থা
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বজ্রপাতে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
এ সময় তারা ‘মুক্তিযুদ্ধ হারেনি, হেরে গেছে হাসিনা’, ‘আমরা মাটি মহনা, শিবিরের হবে না’, ‘ছাত্রলীগ গেছে যেই পথে, শিবির যাবে সেই পথে’, ‘জালো রে জালো, আগুন জালো’, ‘শেখ হাসিনা আজহার, এই বাংলার গাদ্দার’, ‘রাজশাহীতে হামলা কেন, ইন্টারিম জবাব চাই’, ‘চট্টগ্রামে হামলা কেন, ইন্টারিম জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে হলপাড়ায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বিজয় একাত্তর হল, জসিমউদ্দিন হল, জিয়া হল ও মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা নেমে এসে বামপন্থীদের উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া ভুয়া’ ও ‘শাহবাগী শাহবাগী’ স্লোগান দিতে থাকেন। তবে এই শিক্ষার্থীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা শিবির সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা- তা জানা যায়নি।
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বাম ছাত্র সংগঠনগুলো উস্কানীমূলক স্লোগান দেওয়ার কারণে এমনটা ঘটেছে।
পরবর্তীতে মশাল মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, “গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের মিছিলে শিবির হামলা চালিয়েছে। আজ চট্টগ্রামে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের উপস্থিততে তারা হামলা চালিয়েছে, পুলিশ ও রাষ্ট্রযন্ত্র জামায়াত শিবিরের পক্ষে কাজ করেছে।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন আদালতের রায়কে প্রভাবিত করা হত। ৫ আগস্টের পরও রায় প্রভাবিত করে জামায়াত-শিবিরের পক্ষে নেওয়া হচ্ছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত গণহত্যা চালিয়েছে, নিজের দেশের মানুষের বিপক্ষে অস্ত্র ধরেছে। তাদের বিচার বাংলাদেশ হয়নি। ২৪ এর জুলাই গণহত্যার বিচার আমরা চাই, সঙ্গে ৭১ এর গণহত্যার বিচারও চাই।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বামপন্থীরা ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু ও সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টা করছে: ঢাবি ছাত্রশিবির
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর বিক্ষোভে হওয়া কিছু স্লোগান নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, বামপন্থীরা ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক ও সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এই অভিযোগ করেছেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ও সেক্রেটারি মহিউদ্দীন খান। ‘ছাত্রশিবিরকে লক্ষ্য করে বামপন্থীদের সন্ত্রাসী স্লোগানের প্রতিবাদ ও ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপতৎপরতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ’ শিরোনামে এই বিবৃতি পাঠানো হয়।
ছাত্রশিবিরের এই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত দুই দিন যাবৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি, তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের প্রথম সভাপতি এ টি এম আজহারুল ইসলামের বেকসুর খালাস পাওয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী সংগঠনগুলো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে সবার যেকোনো বিষয়ে বিক্ষোভ করার কিংবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার অধিকার রয়েছে। ছাত্রশিবির এই গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল।’
বামপন্থীদের বিক্ষোভ থেকে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ‘পুরোনো পতিত ফ্যাসিবাদের স্লোগান’ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বলে শিবির অভিযোগ করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, অতীতে স্বৈরাচারী হাসিনার আমলে যেসব স্লোগান ও রেটরিক ব্যবহার করে ছাত্রশিবিরকে অমানবিকীকরণ করে হত্যার বৈধতা উৎপাদন করা হয়েছিল, তারই পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে৷ বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত বামপন্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে ‘বাঁশের লাঠি মিছিল হবে, শিবির তোমার মৃত্যু হবে’, এমন সন্ত্রাসী স্লোগানও দিতে দেখা গেছে। এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে বামপন্থীদের মধ্যে থাকা ছাত্রশিবিরকে হত্যার সুপ্ত হীন জিঘাংসা প্রতিফলিত হয়েছে।
ছাত্রশিবির আরও বলেছে, নতুন বাংলাদেশে ক্যাম্পাসে এমন হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতির পুনরাবৃত্তির অপচেষ্টাকে শিক্ষার্থীরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছেন। গত মঙ্গলবার রাতে বামপন্থীদের মশালমিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া এলাকায় গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে দুয়োধ্বনি দিয়ে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। বুধবার রাতেও তারা একই এলাকায় গেলে শিক্ষার্থীদের ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে দুয়োধ্বনি দিতে দেখা গেছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ এবং যেকোনো যৌক্তিক প্রতিরোধকে ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের হত্যাযোগ্য করার এই ফ্যাসিবাদী ধারা সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বামপন্থীদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে বিভিন্ন ধরনের উসকানি দেওয়া হচ্ছে। দুঃখজনক হলো, বামপন্থীদের এই মিছিলে দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের অন্যতম সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কয়েকজন নেতা-কর্মীকেও অংশ নিতে দেখা গেছে, যাঁরা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা বলতে চাই, বামপন্থীদের চলমান বিক্ষোভ থেকে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক ও সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সংগঠনগুলোর (বাম সংগঠন) গ্রহণযোগ্যতা ও সমর্থন না থাকায় তারা সব সময় ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনীহা প্রকাশ করে এসেছে বলেও অভিযোগ করেছে ছাত্রশিবির। সংগঠনটি আরও বলেছে, তারা চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি আসন্ন ডাকসু নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করছে। ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চলমান অগ্রগতি থামিয়ে দিতে এ ধরনের অপচেষ্টাকে শিক্ষার্থীরা ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছেন।