Prothomalo:
2025-11-01@22:39:50 GMT

সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে

Published: 1st, November 2025 GMT

সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।

শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।

পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।

শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণহত য

এছাড়াও পড়ুন:

‘গোলায় আমার এক মেয়ে মারা গেছে, অন্য মেয়ের চোখে আঘাত লেগেছে, ছেলেটিও পক্ষাঘাতগ্রস্ত’

সুদানের এল–ফাশেরে আধা সামরিক বাহিনী ‘র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ)’ হাতে সংঘটিত গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। তাঁরা নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেছেন, শহরটি ‘আরও গভীর অন্ধকার নরকে ডুবেছে’।

সুদানের সেনাবাহিনীকে পশ্চিম দারফুরে তাদের শেষ ঘাঁটি থেকে পিছু হটতে বাধ্য করার পর গত রোববার আরএসএফ উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল–ফাশেরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

জাতিসংঘের আফ্রিকাবিষয়ক সহকারী মহাসচিব মার্থা আমা আকিয়া পোবি গতকাল বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এক কথায় ভয়াবহ’।

মার্থা আমা জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পেয়েছে যে এল–ফাশের শহরে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বাড়ি বাড়ি তল্লাশির ঘটনা ঘটছে। বেসামরিক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন।

দক্ষিণ সুদান আলাদা হওয়ার এক দশকের বেশি সময় পর আরএসএফের হাতে এল-ফাশরের এ পতন সুদানের নতুন বিভক্তির ইঙ্গিত দিতে পারে। চলমান গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। তখন সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে উত্তেজনা রাজধানী খার্তুমে পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে রূপ নেয়। এরপরের সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত ও ১ কোটি ২০ লাখের বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

‘পরিস্থিতি পুরোপুরি বিশৃঙ্খল। এখন পর্যন্ত কত বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, তা নির্ধারণ করা কঠিন’, বলেন মার্থা আমা। ‘বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও বাস্তবতা হলো এল–ফাশেরে কেউ নিরাপদ নন। তাঁদের শহর ছাড়ার জন্য কোনো নিরাপদ পথও নেই।’

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাপ্রধান বলেন, ওই শহরের মানুষ এখন ‘ভয়াবহতার’ শিকার হচ্ছেন।

নিরাপত্তা পরিষদে টম ফ্লেচার বলেন, এল–ফাশের আগে থেকেই মানবিক বিপর্যয়ের শিকার ছিল। এখন এটি আরও গভীর অন্ধকার নরকে নেমে গেছে।
ফ্লেচার বলেন, ‘আরএসএফ যোদ্ধারা শহরে প্রবেশের পর ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আমরা পেয়েছি। আমরা হয়তো তাঁদের আর্তচিৎকার শুনতে পাচ্ছি না, কিন্তু ভয়াবহতা এখনো চলছে। নারী ও কন্যাশিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, মানুষদের অঙ্গহানি করা হচ্ছে, নির্বিচার হত্যা করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুনসুদানের উত্তর দারফুরে আরএসএফের হামলায় নিহত ৬০১২ অক্টোবর ২০২৫

বেঁচে থাকা মানুষের স্মৃতিচারণা

সেনাবাহিনী এল–ফাশের ছাড়ার আগে টানা ১৮ মাস আরএসএফের অবরোধে আটকে ছিলেন লাখো মানুষ। তাঁদের ছিল না পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পেয়েছে যে এল-ফাশের শহরে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বাড়ি বাড়ি তল্লাশির ঘটনা ঘটছে। বেসামরিক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন।মার্থা আমা আকিয়া পোবি, জাতিসংঘের আফ্রিকাবিষয়ক সহকারী মহাসচিব

গত শনিবারের পর থেকে ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ প্রধানত হেঁটে তাবিলায় পালিয়ে গেছেন। এল–ফাশের থেকে এটি প্রায় ৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে (৪৩ মাইল) অবস্থিত এবং আগে থেকেই প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়ে আছেন।

‘শহরে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ হচ্ছিল’, এল–ফাশের থেকে বাস্তুচ্যুত ফাতিমা আবদুররহমান আল-জাজিরাকে বলেন। তিনি এখন তাবিলায় রয়েছেন। ‘আমি নিজেই গোলায় আহত হয়েছি। গোলার আঘাতে আমার এক মেয়ে মারা গেছে, অন্য মেয়ের চোখে আঘাত লেগেছে, ছেলেটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেছে। আমার পুরো শরীরে ক্ষত, ফোলা।’

বোমা হামলা থেকে বাঁচতে অস্থায়ী বাংকার তৈরি করেছেন সাধারণ মানুষ। সুদানের উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী এল-ফাশেরে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানের রাস্তায় শত শত মরদেহ, পালিয়েছে ৬০ হাজার বাসিন্দা
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
  • ‘গোলায় আমার এক মেয়ে মারা গেছে, অন্য মেয়ের চোখে আঘাত লেগেছে, ছেলেটিও পক্ষাঘাতগ্রস্ত’