দুই মাস ধরে নিখোঁজ গৃহবধূ, হত্যা-গুমের শঙ্কা পরিবারের
Published: 29th, May 2025 GMT
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে রিনা পারভীন নামে এক গৃহবধূ দুই মাস ধরে নিখোঁজ থাকার অভিযোগ উঠেছে। রিনা অপহরণ, গুম বা হত্যার শিকার হতে পারেন– এ আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে তাঁর পরিবার। এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ জানিয়েছেন গৃহবধূর স্বজনরা।
নিখোঁজ রিনা পারভীন (৩৭) কালীগঞ্জ পৌর এলাকার চাপালীখানা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী। এই দম্পত্তির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
রিনা পারভীনের স্বামী সাজ্জাদ হোসেনের ভাষ্য, গত ১১ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রী কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হন। এর পর সারাদিন পেরিয়ে গেলেও বাড়িতে ফিরে না আসায় সন্ধ্যার পর তিনি স্ত্রীর মোবাইল ফোনে কল দিলে বন্ধ পান। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও তাঁর সন্ধান না মেলায় ওই রাতেই তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ট্র্যাকিং করে ১৩ এপ্রিল পাবনা ও ২৩ এপ্রিল পিরোজপুরে কিছু সময়ের জন্য ফোন খোলা পেয়েছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক রানা প্রতাপের অসহযোগিতার কারণে তাঁর স্ত্রীর সন্ধান পাওয়া বা তাঁকে উদ্ধার করা যায়নি।
সাজ্জাদ হোসেন আরও জানান, তাঁর স্ত্রী ১১ এপ্রিল বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। গত ১২ মে ডাকে তাঁর কাছে একটি তালাকনামা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার ১ নম্বর চিলশিয়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার নুরুল আমিন খান স্বাক্ষরিত ওই তালাকনামায় তারিখ উল্লেখ আছে ১ এপ্রিলের। তালাকনামার সত্যতা জানতে তিনি ওই রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ ছাড়া তালাকনামায় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের দু’জন সাক্ষীর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তাদের কোনো হদিস পাননি। তালাকের ঘটনাটি প্রতারক চক্রের সাজানো নাটক হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, রিনা কোনো সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র বা অপহরণকারীদের খপ্পরে পড়তে পারেন। কারণ তাঁর স্ত্রীর কাছে সাত ভরির মতো স্বর্ণালংকার ও লক্ষাধিক টাকা ছিল। এসব হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই কোনো চক্র তাঁকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে গুম করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
এ ঘটনায় তাদের পরিবার তছনছ হয়ে গেছে বলে জানায় সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে ছোয়াদ ইসলাম। সে বলে, নিখোঁজের প্রায় ৫০ দিন অতিবাহিত হলেও তার মাকে উদ্ধারে পুলিশ কোনো জোরালো ভূমিকা রাখেনি। মায়ের বেঁচে থাকা নিয়ে শঙ্কায় তাদের দিন কাটছে।
রিনা পারভীনের মা জাহানারা বেগম জানান, তাঁর মেয়ে নিখোঁজের ঘটনায় পরিবারের মধ্যে ভয় ও শঙ্কা বিরাজ করছে। নাতি-নাতনির মুখের দিকে তাকাতে পারছেন না। মেয়ের সন্ধান ও উদ্ধারে পুলিশের শক্ত ভূমিকা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
তালাকনামা পাঠানোর সত্যতা জানতে নিকাহ রেজিস্ট্রার নুরুল আমিন খানের মোবাইল ফোনে গতকাল বুধবার ও মঙ্গলবার একাধিকবার কল দেওয়া হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক রানা প্রতাপ জানান, তিনি প্রথম দিকে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে রিনা পারভীনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছেন। দু’সপ্তাহ আগে ওই নারী স্বামীর কাছে একটি তালাকনামা পাঠিয়েছেন বলে শুনেছেন। তবে তিনি তালাকনামাটি যাচাই-বাছাই করেননি।
ও বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, গৃহবধূর নিখোঁজের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার অসহযোগিতার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ ত কর মকর ত পর ব র গ হবধ
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় অপহরণের পর নগ্ন ভিডিও পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি, কলেজছাত্রী উদ্ধার
ঢাকার এক কলেজছাত্রীকে তাঁর পূর্বপরিচিত মাসুম পারভেজ নামের এক যুবক গত সোমবার উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্ল্যাটে ডেকে নেন। এরপর সহযোগীদের নিয়ে মেয়েটিকে সেখানে আটকে রেখে নগ্ন ভিডিও করেন ও ছবি তোলেন। পরে অপহরণকারীরা ওই ভিডিও তাঁর মায়ের কাছে পাঠিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চান। কলেজছাত্রীর মা ঘটনাটি উত্তরা পশ্চিম থানায় জানালে পুলিশ গত বুধবার বিকেলে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত মাসুম পারভেজসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।
গত বুধবার কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করা হলেও আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অভিযানে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে শুধু ওই ছাত্রীই নন, এখানে বায়িং হাউসের আড়ালে মেয়েদের অপহরণের পর নগ্ন করে ভিডিও এবং ছবি তুলে তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল চক্রটি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় মুক্তিপণ বাবদ আদায় করা এক কোটি ৪১ লাখ টাকা, ৬০টি ইয়াবা বড়ি, দুটি সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা এবং তিনটি মুঠোফোন ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. মাসুম পারভেজ (৩৮), মো. সোলাইমান হোসেন (৩৮), শফিকুল ইসলাম সৌরভ (২৭), মোছা. মায়া (২৫) ও মোছা. রুলি খানম (১৯)।
কলেজছাত্রীকে উদ্ধার অভিযান তত্ত্বাবধান করেন ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. মুহিদুল ইসলাম। তিনি আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, অপহৃত মেয়েটি রাজধানীর একটি কলেজে পড়েন। গত সোমবার বিকেলে তাঁকে উত্তরার ১১ নম্বরে সেক্টরের ১০/বি সড়কের একটি ভবনের দোতলার একটি ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যান তার পূর্বপরিচিত মাসুম পারভেজ। এরপর সেখানে আটকে রেখে মেয়েটির নগ্ন ভিডিও ও ছবি তোলা হয়। পরদিন মঙ্গলবার গভীর রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ওই ভিডিও কলেজছাত্রীর মায়ের মুঠোফোনে পাঠিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান এবং মেয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চান।
এরপর কলেজছাত্রীর মা ঘটনাটি পুলিশকে জানান উল্লেখ করে তিনি বলেন, উত্তরা পশ্চিম থানার একদল পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারী চক্রটির অবস্থান শনাক্ত করে। বুধবার বিকেলে পুলিশ উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করে।
পুলিশ কর্মকর্তা মুহিদুল ইসলাম বলেন, এখানে অপহৃতদের মাদক সেবনে বাধ্য করা হতো। এ ছাড়া বায়িং হাউসে নিয়োগ দেওয়া মেয়েদের দিয়েও আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও করতেন চক্রের সদস্যরা। এসব ভিডিও দিয়ে তাদের ‘ব্ল্যাকমেল’ করা হতো।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ব৵ক্তিদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, মাদকদ্রব্য ও পর্নোগ্রাফি আইনে পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার সবাইকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা বায়িং হাউসের কর্মী। অপহরণ চক্রে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।