ডায়াবেটিক রোগীদের গ্রীষ্মের মিষ্টি ফল খাওয়ার নিয়ম
Published: 31st, May 2025 GMT
বাজারে আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ নানা ফলের সমারোহ। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের এসব ফল খেতে হলে কিছু বিধিনিষেধ মানতে হবে। মেনে চলতে হবে কিছু নিয়মও।
অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন বাড়িতে ডায়াবেটিকের রোগীকে ফল খেতে দেবেন কি না। আসুন জেনে নিই একজন ডায়াবেটিক রোগী প্রতিদিন কোন ফল কতটুকু খেতে পারবেন।
আমকার্বোহাইড্রেট হিসেবে ডায়াবেটিক রোগীদের প্রতিদিন ১৩০ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়। এ জন্য রক্তে সুগার পরীক্ষা করে ফল পরিমাণমতো খেতে হবে।
প্রতিটি খাবারের গ্লাইসেমিক সূচক ও গ্লাইসেমিক লোড থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এ জন্য যেসব খাবারে গ্লাইসেমিক সূচক ৫৫ আর গ্লাইসেমিক লোড ১০–এর নিচে, সেসব খাবার খাওয়া ডায়াবেটিক রোগীর জন্য নিরাপদ। আমের গ্লাইসেমিক সূচক ৫৬, যেটাকে বলা হয় মাঝারি গ্লাইসেমিক সূচক। গ্লাইমেসিক লোডও কম। তাই সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিক রোগীরা পরিমিত পরিমাণে আম খেতে পারবেন।
আম ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (বি–১২ বাদে), ভিটামিন সি ও পলিফেনলসমৃদ্ধ। এ ছাড়া আমে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত আম খেলে ওজন বাড়তে পারে। যাঁদের সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে, তাঁরা ছোট আম পুরোটা বা বড় আমের অর্ধেক কেটে ছোট টুকরা করে খেতে পারবেন। তবে যাঁদের সুগার নিয়ন্ত্রণে নেই, তাঁদের জন্য আম এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
তরমুজগরমে পানির ঘাটতি ও ইলেকট্রোলাইটসের চাহিদা পূরণে তরমুজ খুব ভালো একটি উৎস। তরমুজে পানির পরিমাণ ৯২ শতাংশ এবং পটাশিয়াম ১১২ মিলিগ্রাম। তবে তরমুজে গ্লাইসেমিক সূচক ৭৬, মানে উচ্চমাত্রার। কিন্তু তরমুজের গ্লাইসেমিক লোড ২। যেসব ডায়াবেটিক রোগীর সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে, তাঁরা প্রতিদিন ১৫০-২০০ গ্রাম করে তরমুজ খেতে পারবেন। তবে যাঁদের সুগার নিয়ন্ত্রণে নেই, তাঁদের চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। তরমুজ খেতে পারবেন মধ্য-সকাল বা ব্যায়ামের পর। তবে মূল খাবারের সঙ্গে কখনোই তরমুজ খাওয়া উচিত নয়।
লিচুলিচুতে দুটি অ্যান্টি–অক্সিজেন্ট যৌগ রয়েছে, যা এই গরমে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। লিচুর গ্লাইসেমিক সূচক ৫০, আর গ্লাইসেমিক লোড ৭ দশমিক ৬, যা ডায়াবেটিক রোগীর জন্য নিরাপদ। ডায়াবেটিক রোগীদের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে প্রতিদিন ৪০ গ্রাম লিচু অর্থাৎ বড় ছয়টি করে লিচু খেতে পারবেন। এ ছাড়া রক্তে সুগারের মাত্রা ও শর্করার মাত্রার ওপর ভিত্তি করে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে লিচু খেতে পারেন। তবে খালি পেটে লিচু খেলে সুগার কমে যেতে পারে। আর ঘুমানোর আগে ফল খাওয়া উচিত নয়।
লিনা আকতার, পুষ্টিবিদ, ঠাকুরগাঁও ডায়াবেটিক ও স্বাস্থ্যসেবা হাসপাতাল
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ