ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু সোমবার
Published: 31st, May 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২ জুন অর্থাৎ, আগামী সোমবার থেকে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সংলাপের উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ধাপের প্রথম দিনে কেবল প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য দিতে পারেন। এরপর, মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে কমিশন। সোমবারের অনুষ্ঠানে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের একজন করে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনে সংলাপ করে। গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য এবং আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ হবে বিষয়ভিত্তিক। যেসব মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেনি সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিপির নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখায় কী আছে
নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রস্তাব করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা আইনসভার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করার কথা বলেছে।
এনসিপির এই প্রস্তাব ২৫ মে ই-মেইলের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হলে প্রস্তাবটি সরাসরি হস্তান্তর করা হবে বলে এনসিপি সূত্র জানিয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’–এর বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। এই সরকারের একটি রূপরেখাও তারা প্রস্তাব করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় প্রায় সব দলই নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছে। তবে এই সরকারের রূপরেখা কেমন হবে, তা নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৯০ দিন। প্রধান উপদেষ্টাসহ সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্য নিয়ে কাজ করবে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবে নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা—এই তিন অঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত হবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি)।
এই কাউন্সিলের ৯ সদস্যের মধ্যে ন্যূনতম ৭ জনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে। এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া না গেলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পর্যায়ক্রমে আরও ছয়টি পদ্ধতির কথা বলা আছে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে। উপদেষ্টা পরিষদের অন্য উপদেষ্টাদের মনোনয়ন দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
এনসিপির মতে, নির্বাচনকালীন এই সরকারের নাম হতে পারে ‘নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার’ বা ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাব হলো, আইনসভার নিম্নকক্ষ তথা সংসদ ভেঙে দেওয়ার অন্তত তিন সপ্তাহ আগে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হবে। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সর্বদলীয় কমিটিতে সংসদীয় দলগুলোর সদস্যসংখ্যা নির্ধারিত হবে। সংসদীয় কমিটিতে সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে যেকোনো দলকে ন্যূনতম ৫ শতাংশ ভোটের অধিকারী হতে হবে।
আইনসভার যেকোনো কক্ষের (উচ্চকক্ষ, নিম্নকক্ষ) সদস্য এই কমিটির সদস্য হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল এবং অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী/তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনজন করে মোট ৯ জন নির্দলীয় প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে পারবে। কোন দল কোন কোন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছে, জনগণের কাছে তা খোলাসা করতে হবে।
প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে একটি নাম চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে। কমিটি ৮-৩ ভোটে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে একজন ব্যক্তির নাম চূড়ান্ত করবে।
এই প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করা না গেলে উচ্চকক্ষ ‘র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং’পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে।
এনসিপি তাদের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু অযোগ্যতার কথাও বলেছে। সেগুলো হলো, কোনো ব্যক্তি দুর্নীতি বা কোনো ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হলে, নৈতিক স্খলনের বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ থাকলে; কোনো রাজনৈতিক দল বা অঙ্গসংগঠন, এর সমর্থক সংগঠন বা ছায়া সংগঠনের সদস্যপদ থাকলে এবং দলীয় বক্তব্যের নজির থাকলে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার অযোগ্য হবেন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার প্রথম আলোকে বলেন, এবারের সংস্কারের এজেন্ডায় নিরবচ্ছিন্ন ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের রূপরেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অতীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসে অনির্বাচিত কায়দায় ক্ষমতায় থাকার অভিলাষ দেখা গেছে। এই দুরভিসন্ধি বন্ধ করতে হলে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে পেতে হবে। সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে নির্বাচনকালীন প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের সুপারিশ করেছে এনসিপি। এর ফলে সরকারি দলের প্রতি অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পথ বন্ধ হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম হবে।