উত্তর কোরিয়ার বিধ্বস্ত যুদ্ধজাহাজের চারপাশে রহস্যময় বেলুনসদৃশ বস্তু
Published: 1st, June 2025 GMT
উত্তর কোরিয়া দেশটির পাঁচ হাজার টন ওজনের একটি বিধ্বস্ত যুদ্ধজাহাজের পাশে বেলুনের মতো দেখতে কিছু বস্তু স্থাপন করেছে। গত সপ্তাহে উদ্বোধনের সময় যুদ্ধজাহাজটি এক পাশে হেলে পড়ে আংশিকভাবে ডুবে যায়।
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা নতুন একটি ছবিতে রহস্যময় বেলুনসদৃশ বস্তুগুলো দেখা গেছে। ম্যাক্সার টেকনোলজিস সিএনএনকে এ ছবি দিয়েছে।
বেলুনসদৃশ বস্তুগুলো কেন স্থাপন করা হয়েছে, জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা সিএনএনকে বলেছেন, জাহাজটিকে আবার সোজা করার কাজে বা ড্রোনের নজরদারি থেকে এটিকে রক্ষা করার জন্য বেলুনসদৃশ বস্তুগুলো ব্যবহৃত হতে পারে।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ বলেছে, বিধ্বস্ত জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ নতুন যুদ্ধজাহাজ। দেশটির নৌবাহিনীকে আধুনিকীকরণের উচ্চাভিলাষী প্রচেষ্টার প্রতীক হয়ে ওঠার কথা ছিল এ জাহাজের। কিন্তু এর পরিবর্তে উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় চংজিন শহরে গত ২১ মে উদ্বোধনের সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জাহাজের পেছনের অংশ আগেই পানিতে পড়ে যায়। ফলে জাহাজের বাইরের কাঠামোর কিছু অংশ চূর্ণবিচূর্ণ হয় এবং সামনের অংশ জাহাজ নির্মাণ প্ল্যাটফর্মেই আটকে থাকে।
কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে দেখা গেছে, ২৩ মে থেকে যুদ্ধজাহাজটির চারপাশে ডজনখানেক সাদা বেলুনসদৃশ বস্তু বসানো হয়েছে। এর আকৃতি ও তলদেশে পাখনার মতো গঠন দেখে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা সিএনএনকে জানিয়েছেন, এগুলো সম্ভবত ‘অ্যারোস্ট্যাট’ নামক উড়ন্ত বেলুনের ছোট সংস্করণ। এগুলো দেখতে কিছুটা আকাশযানের মতো।উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন যুদ্ধজাহাজটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এ দুর্ঘটনাকে ‘অপরাধমূলক কাজ’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং চলতি মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠিতব্য ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির অধিবেশনের আগেই জাহাজটি দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেন। এটির সঙ্গে জাতীয় সম্মান জড়িয়ে আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এর পর থেকেই কর্মকর্তারা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার এবং এ ঘটনায় যাঁরা দায়ী, তাঁদের শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি তাঁরা জাহাজ কারখানার প্রধান প্রকৌশলীসহ চারজনকে আটক করেছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া দ্রুত বিধ্বস্ত জাহাজটি মেরামতের চেষ্টা করছে। আর এ কাজে বেলুনগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
দেখে মনে হচ্ছে, জাহাজটিকে আবার ভাসাতে নয়; বরং আরও ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে বেলুনগুলো বসানো হয়েছে।ইউ ইয়ং–ওন, দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতা ও সামরিক বিশ্লেষকদক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতা ও সামরিক বিশ্লেষক ইউ ইয়ং–ওন বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, জাহাজটিকে আবার ভাসাতে নয়; বরং আরও ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে বেলুনগুলো বসানো হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন কার্ল শুস্টার বলেন, যদি এগুলো সত্যি বেলুন হয়, তবে এর দুটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে—হয় ‘নিম্ন বা মাঝারি উচ্চতার ড্রোনের নজরদারি ঠেকানো’ অথবা জাহাজের যে অংশটি এখনো জেটিতে আটকে আছে, সেই অংশের ওপর চাপ কমানো।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ–এর নৌবাহিনী ও সামুদ্রিক নিরাপত্তাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক নিক চাইল্ডস বলেন, যদি উত্তর কোরিয়া জাহাজটি ভাসিয়ে রাখা বা ডুবে যাওয়া অংশ পানির নিচ থেকে তোলার জন্য বেলুন ব্যবহার করে, তবে তারা আরও ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে। জাহাজটি এরই মধ্যে প্রচুর চাপে আছে। তাই ওপর থেকে এটিকে তোলার চেষ্টা করা হলে সে চাপ আরও বেড়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাধারণভাবে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তা হলো, জাহাজের মধ্যে যতটা সম্ভব ভাসমান অবস্থা সৃষ্টি করে পরে নিচ থেকে উত্তোলন করা।
বিধ্বস্ত জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ নতুন যুদ্ধজাহাজ। দেশটির নৌবাহিনীকে আধুনিকীকরণের উচ্চাভিলাষী প্রচেষ্টার প্রতীক হয়ে ওঠার কথা ছিল এ জাহাজের। কিন্তু এর পরিবর্তে উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় চংজিন শহরে গত ২১ মে উদ্বোধনের সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জাহাজের পেছনের অংশ আগেই পানিতে পড়ে যায়।কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে দেখা গেছে, ২৩ মে থেকে যুদ্ধজাহাজটির চারপাশে ডজনখানেক সাদা বেলুনসদৃশ বস্তু বসানো হয়েছে। এর আকৃতি ও তলদেশে পাখনার মতো গঠন দেখে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা সিএনএনকে জানিয়েছেন, এগুলো সম্ভবত ‘অ্যারোস্ট্যাট’ নামক উড়ন্ত বেলুনের ছোট সংস্করণ। এগুলো দেখতে কিছুটা আকাশযানের মতো।
আরও পড়ুনপারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা বাড়াবে উত্তর কোরিয়া: কিম জং-উন১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪আরও পড়ুনজিমি কার্টার উত্তর কোরিয়া সফরে না গেলে কি পরমাণু যুদ্ধ বেধে যেত১৪ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স এনএনক জ হ জট ন র মত
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।