প্রিজন ভ্যানে করে ‘তথ্য আপা’দের ‘সরিয়ে নিল’ পুলিশ
Published: 1st, June 2025 GMT
দুই দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নেওয়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, রোববার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নেওয়া ‘তথ্য আপা’দের প্রিজন ভ্যানে করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এর আগে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীদের রোববার বিকাল ৪টার দিকে টেনে হিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তুলতে দেখা যায়।
পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাদেরকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি, সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
পুলিশ জানায়, এর আগে আন্দোলনকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করা হলেও তারা তা শোনেননি। এ পরিস্থিতিতে ‘ভয় দেখানোর জন্য’ তাদের প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মিছিল বের করেন ‘তথ্য আপা’রা। প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে বের হওয়ার সময় তারা একবার পুলিশি বাধা অতিক্রম করলেও কাকরাইল মসজিদ মোড়ে আবার বাধা পেয়ে সেখানেই অবস্থান নেন।
সে সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি ঘটে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জও করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীরা দুই দফা দাবিতে গত বুধবার থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
তাদের দুই দফা দাবি হলো- ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পে কর্মরত সব জনবলকে সমগ্রেডে পদ সৃজন করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা এবং কর্তন করা বেতন ও ভাতা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় দুই হাজার নারী মাঠ পর্যায়ে কাজ করে আসছেন। চলতি মাসের পর প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, তাই তারা চাকরির স্থায়ী সমাধান চেয়ে কর্মসূচি পালন করছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র জন ভ য ন প রকল প র অবস থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে হামলা হয়েছে: সংবাদ সম্মেলনে ‘তথ্য আপা’
পুলিশের নির্মম হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তথ্য আপার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এই হামলার আগে তাঁদের ‘টেররিস্ট ট্যাগ’ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে নিরস্ত্র নারীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
দুই দফা দাবিতে গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়। কাকরাইল মসজিদের মোড়ে পৌঁছালে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা করে।
দুই দফা দাবি হলো ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মরত সব জনবলকে সমান গ্রেডে পদ সৃজন করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা এবং কর্তন করা বেতন-ভাতা দ্রুত পরিশোধ করা। এই দুই দাবিতে তাঁরা গত ২৮ মে থেকে অনশন করছিলেন।
‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের অনশন আন্দোলন কমিটির সভাপতি সংগীতা সরকার বলেন, গত ২৮ মে থেকে তাঁরা অনশন আন্দোলন করলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এরপর তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যমুনা অভিমুখে রওনা দিলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
‘টেররিস্ট’ আখ্যা দিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশেই তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে এমন অভিযোগ করে সংগীতা সরকার বলেন, ‘দেশের প্রশাসনিক আইনি ব্যবস্থা ও সরকার কতটা দুর্বল হলে এ রকম ঘটনা ঘটানো সম্ভব।’ সংগীতার অভিযোগ, মিছিল চলাকালে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের লাথি মারেন এবং মারধর করেন।
ঝালকাঠির সদর উপজেলার তথ্যসেবা কর্মকর্তা সুমাইয়া আক্তার বলেন, তাঁদের ওপর হয়ে যাওয়া এই হামলার ভিডিও, ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে তাঁদের ফোন করে সে কথা বলছেন। এটা তাঁদের জন্য লজ্জাকর। তাঁরা দাবি আদায় না হলে বাড়ি ফিরতে চান না। এই লজ্জার মুখ কাউকে দেখাতে চান না।
নারীর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, অধিকার বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি, আইন, কৃষি ও ব্যবসায় সুবিধা দিতে ১৪ বছর আগে শুরু হয়েছিল ৬০৩ কোটি টাকা ব্যয়ের ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি পরিচালনা করে।
তথ্য আপাদের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ প্রকল্পের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন পাননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে গত মাসে জুলাইয়ের বেতন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো বকেয়া রয়েছে পাঁচ মাসের। ইতিমধ্যে তাঁদের জানানো হয়, প্রকল্পের অফিস গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পরে প্রকল্প চালু রাখার দাবিতে ১৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা ও ১৯ আগস্ট সচিবালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন তাঁরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের।
তবে অর্থ ছাড় না হওয়ায় পাঁচ মাস ধরে প্রকল্পের বেতন-ভাতা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। মাসের পর মাস বেতন না পাওয়ায় এ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাই তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীরা গত বুধবার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন।