দিনাজপুরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একজনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
Published: 2nd, June 2025 GMT
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় পুলিন হেমব্রম (৬০) নামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে উপজেলার এলুয়ারী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে নিজ বাড়ির বারান্দার চালের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিন হেমব্রম শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কৃষি শ্রমিক ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে নিজ বসতঘরের বারান্দায় পুলিনকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দেখেন তাঁর খালাতো ভাই রমেশ হেমব্রম। পরে তাঁর চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পরে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।
ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম খন্দকার মুহিব্বুল বলেন, মরদেহটির সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির এক ছেলে আছে। পরিবারের আপত্তি না থাকায় মরদেহটি ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে যেভাবে কাউকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ বানানো হয়
অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আলী খান মাহমুদাবাদ এখন ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের তৈরি করা ঘৃণামূলক কর্মকাণ্ডের সর্বশেষ শিকার হওয়া ব্যক্তি। পুলিশ ও বিচার বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় এ কাজটি তারা করছে।
মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে এমন এক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, যেটা তিনি করেননি। এখন তাঁকে তাঁর নির্দোষিতা প্রমাণ করতে বলা হয়েছে। তবে ব্যাপারটি ‘নির্দোষ প্রমাণের আগে দোষী সাব্যস্ত’ করার এটি একটি ধ্রুপদি দৃষ্টান্ত।
আরও পড়ুনমাওবাদীদের বিরুদ্ধে বিজেপি সরকারের এই ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ কেন২৪ মে ২০২৫তিনি যতই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য আত্মপক্ষ সমর্থন করুন না কেন, তাঁর বিরুদ্ধে সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে। এর কারণ হলো, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দুটি ফেসবুক পোস্ট (দুটি পোস্টের শব্দ সংখ্যা ১৫৩০) পরীক্ষার জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) গঠনের আগেই আদালত তাঁর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
মাহমুদাবাদ তাঁর ফেসবুক পোস্টগুলো নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া সত্ত্বেও, এখন দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে, তা নিয়ে তাঁকে ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং সেই সন্দেহ দূর করতে হবে।
পোস্টগুলোতে মাহমুদাবাদ পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে কঠোর সমালোচনা করেছেন। ভারতের পাকিস্তানবিরোধী সামরিক অভিযানের প্রশংসাও করেছেন। ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের সময় ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র হিসেবে দুজন নারী কর্মকর্তা (যাঁদের একজন মুসলমান) যেভাবে বিশ্বমঞ্চে ভারতের অবস্থান তুলে ধরেছেন, তার প্রশংসা করেছেন তিনি। যা হোক, মাহমুদাবাদ তাঁর পোস্টে এই বলেও সতর্ক করেন যে ভারতের মুসলমানদের ওপর যে নিয়মিত নিপীড়ন চলছে, তা যদি বন্ধ না হয়, তাহলে এই অন্তর্ভুক্তিমূলকতার প্রদর্শনী নিছক ভণ্ডামি হিসেবেই থেকে যাবে।
বিজেপির ছাত্রসংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। অশোকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাহমুদাবাদকে বরখাস্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, মাহমুদাবাদ ‘রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট’ দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মুখপাত্রও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছে।অধ্যাপক মাহমুদাবাদ তাঁর পোস্টে যে মত প্রকাশ করেছেন তার আগে অসংখ্য ব্যক্তি ভিন্ন ভাষায় করেছেন। কিন্তু হঠাৎই হরিয়ানার নারী কমিশনের প্রধান রেনু ভাটিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন।
তিনি অভিযোগ করলেন, মাহমুদাবাদ তাঁর পোস্টে দুই নারী কর্মকর্তাকে অপমান করেছেন। তাঁর এই অভিযোগ অনেককেই বিস্মিত করে। মাহমুদাবাদ তাঁর আইনজীবীদের দিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু ভাটিয়া নিজের অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির না করতে পারলেও, সেই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হননি।
একজন টেলিভিশন উপস্থাপক ভাটিয়াকে বারবার জিজ্ঞেস করেন—মাহমুদাবাদের কোন শব্দটি বা বাক্যটি অপমানজনক ছিল? কিন্তু ভাটিয়া তার উত্তর দিতে পারেননি। এখন পর্যন্ত তিনি জোর দিয়ে বলেই চলেছেন—মাহমুদাবাদের পোস্ট পড়ে তাঁর মনে হয়েছে সেখানে অপমানজনক কিছু আছে। সে কারণেই তাঁর কাছে মনে হয়েছে, পোস্টে মাহমুদাবাদ ‘ভয়ংকর’ কিছু লিখেছেন। তাঁর মতে, কোন শব্দ আপত্তিকর তা খুঁজে বের করা পুলিশের কাজ, তাঁর না।
আরও পড়ুনমোদির ব্যক্তিপূজার পররাষ্ট্রনীতি ভারতকে বন্ধুহীন করেছে ০১ জুন ২০২৫ভাটিয়ার অভিযোগের পর মাহমুদাবাদের পোস্টগুলো অগুনতি মানুষ ও সংবাদমাধ্যম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছে। কোথাও কোনো অরুচিকর কিংবা অপমানজনক আধেয় খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের অনেকে তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং নারী কমিশনের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
ভাটিয়ার এই দাবিটি যে হাস্যকর সেই ধারণাটি জনমনে যখন প্রতিভাত হতে শুরু করল, তখনই ভারতের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একজন সদস্য হরিয়ানা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলেন, মাহমুদাবাদ এমন কথা লিখেছেন, যা তাঁর ও অন্যদের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। পুলিশ সেই অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে কঠিন ধারায় মামলা দেয়। এর মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা উসকে দেওয়া এবং নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। মাহমুদাবাদকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়।
খুব সতর্কতার সঙ্গে পোস্টগুলো পড়লে মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে প্রমানিত হয়ে যায়। মাহমুদাবাদের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে তাঁর মুক্তি দাবি করেন ও পুলিশি তদন্তের ওপর স্থগিতাদেশ চান। কিন্তু শুনানির আগে অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভাগীর প্রধানেরাসহ ২০০ জন শিক্ষক বিবৃতি দিয়ে মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
আরও পড়ুনভারতের মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেওয়া নতুন ‘যুদ্ধ’২৫ মে ২০২৫তাঁরা অভিযোগ করেন, মাহমুদাবাদ ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছেন, প্রাতিষ্ঠানিক নৈতিকতা ও নারীর অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছেন’। মাহমুদাবাদের লেখাকে তাঁরা ‘ছদ্ম-বুদ্ধিবৃত্তির ছদ্মবেশে লুকানো নারীবিদ্বেষ’ বলে বর্ণনা করেন।
এরপর সুপ্রিম কোর্ট তিনজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেন। তাদের কাজ হবে, মাহমুদাবাদের পোস্টের ‘জটিলতাগুলো বোঝা এবং পোস্টে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে সেটা যথাযথভাবে বিচার–বিশ্লেষণ করা’।
সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশ এই ধারণাকে সামনে আনে যে, মাহমুদাবাদ যে কথাগুলো লিখেছেন তার প্রকৃত অর্থ গ্রহণ করা হবে না। আপাতভাবে নিরীহ মনে হলেও, নিশ্চয়ই এ লেখার গভীরে কোনো গোপন উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে!
আদালত নিজেই যখন তার ব্যাখ্যাধর্মী ভূমিকাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়, তখন জনমনে প্রশ্ন জাগতে বাধ্য। লেখাগুলো পড়ে বিশ্লেষণ করা আদালতের জন্য কি এতই কঠিন কাজ ছিল? আদালত কি নিজেই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসতে চাইছে?
এখন বিশেষ তদন্ত দল আদালতের আগাম অনুমানের ছায়াতেই তদন্ত করবে। আদালত এরই মধ্যে মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় মাহমুদাবাদ কীভাবে সুষ্ঠু তদন্তের আশা করতে পারেন?
এর মধ্যেই মাহমুদাবাদকে ঘিরে কুয়াশার জাল বিস্তার করা হচ্ছে। তাঁর পারিবারিক ইতিহাস, ধর্ম পরিচয়, পাকিস্তানের সঙ্গে পারিবারিক যোগসূত্র, বিদেশভ্রমণ—এ সবকিছু এখন তদন্তের বিষয়। তাঁর ফেসবুক পোস্টের ব্যাখ্যাও এই প্রেক্ষাপটেই এখন মূল্যায়ন করা হবে।
সংবাদমাধ্যমও জোরেশোরে মাহমুদাবাদকে ‘শত্রু’ বানাতে ব্যস্ত। মাহমুদাবাদের আসল বক্তব্য হারিয়ে যাচ্ছে অপপ্রচার আর গুজবের কুয়াশায়।
বিজেপির ছাত্রসংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। অশোকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাহমুদাবাদকে বরখাস্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, মাহমুদাবাদ ‘রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট’ দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মুখপাত্রও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছে।
এই একই কৌশল আমরা আগেও দেখেছি। উমর খালিদ বা শারজিল ইমামের মতো প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের ‘দানব’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সেই পরিকল্পিত ছক। এখানে সংবাদমাধ্যম, পুলিশ ও বিচারব্যবস্থা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে।
অপূর্বানন্দ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দি পড়ান। তিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সমালোচনা লেখেন।
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত