‘শহীদ জিয়ার প্রথম চট্টগ্রাম, শেষ চট্টগ্রাম’ শীর্ষক আলোচনা সভা
Published: 2nd, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার উদ্যোগে ‘শহীদ জিয়ার প্রথম চট্টগ্রাম, শেষ চট্টগ্রাম’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী দোয়া, খতমে কুরআন, দুঃস্থদের মাঝে খিচুরি বিতরণ কর্মসূচি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর তোপখানা রোডে চট্টগ্রাম সমিতি ভবনের নিজস্ব মিলনায়তনে রোববার প্রথম দিন এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিন সোমবার সকালে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সমিতির আজীবন সদস্য আসলাম চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার আজীবন সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা মীর দোস্ত মোহাম্মদ খান। সভা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম সমিতির আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রনেতা এম এ হাশেম রাজু ও যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন মিজান।
‘শহীদ জিয়ার প্রথম চট্টগ্রাম, শেষ চট্টগ্রাম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আসলাম চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলামী মূল্যবোধ, জাতীয়তাবাদী চেতনার ক্ষণজন্মা গুটি কয়েকজনের মধ্যে জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) অন্যতম। শহীদ জিয়ার জন্ম না হলে বাংলাদেশের মাটি-মানুষ-মানচিত্র ভারতীয় আধিপত্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদ থেকে রেহাই পেত না।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মুসলিম বিশ্বের দরবারে যেখানে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানেই শান্তির বার্তা নিয়ে ছুটে গিয়েছেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইরাক-ইরানের ৮ বছর ব্যাপী যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে তিনি সার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জোরদার করতে তৎকালীন সময় ওআইসিকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছিলেন।
প্রধান বক্তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের অ্যাম্বাসেডর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড.
চট্টগ্রাম সমিতির আজীবন সদস্য আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ আব্দুল মোমেন চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের পটভূমিতে আইনের সুশাসন, বহুদলীয় গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার, সাম্য প্রতিষ্ঠায় ছিলেন আন্তরিক। তার প্রমাণ বিলুপ্ত আওয়ামী বাকশালকে পুনরায় রাজনীতির সুযোগ দেওয়া।
চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রনেতা এম এ হাশেম রাজু বলেন, চট্টগ্রাম সমিতির ১১৫ বছরের ইতিহাসের এই প্রথম সমিতির উদ্যোগে স্বাধীনতার ঘোষক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী উদযাপন করা হলো।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক কামরুজ্জামান বাবলু, কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, ডা. সেলিনা আক্তার, হেফাজতে ইসলামী নেতা মাওলানা জসিম উদ্দিন, ড. নুরুল আলম, ড. শামছুল হক, সমিতির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুসা খান, যুগ্ম আহ্বায়ক গুলতাজ বেগম, অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন, মো. নাছির উদ্দিন, মো. ইকবাল হোসেন, সমন্বয়ক মোহাম্মদ মুবিনুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব মনজুর মোর্শেদ মামুন, কে এম আক্কাস, সদস্য শাহজাহান মন্টু, ইঞ্জি. কে এম ইমতিয়াজ, মো. ইসমাঈল, এস এম ফরিদ, আব্দুল আউয়াল জাহেদ, হাজী আব্দুল গণি, মোস্তফা আল ইহযায প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র রহম ন র প রথম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
দুনিয়ায় প্রত্যেক মুসলিমকে যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে
জীবন একটি পরীক্ষার ময়দান, যেখানে আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও কষ্টের মুখোমুখি হই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)
এই পরীক্ষাগুলো প্রায়ই আমাদের হতাশ বা বিমর্ষ করে তুলতে পারে, কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায় যে এই কষ্টগুলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম এবং পরকালে চিরস্থায়ী সুখের পথ প্রশস্ত করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এই দুনিয়ার জীবন তো কেবল ক্ষণস্থায়ী ভোগ, আর পরকালই হলো চিরস্থায়ী আবাস।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৩৯)
পরীক্ষার উদ্দেশ্যইসলামে পরীক্ষা বা কষ্টকে আল্লাহর রহমতের অংশ হিসেবে দেখা হয়। এগুলো আমাদের পাপ থেকে মুক্তি, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি, নিজেকে নম্র করা এবং তাঁর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।
আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখনই তুমি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করবে, আল্লাহ তা তোমার জন্য আরও উত্তম কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩,০৭৪)
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যদুনিয়ার জীবন সাময়িক এবং এর কষ্টগুলো ক্ষণস্থায়ী। আমরা প্রায়ই দুনিয়ার সমস্যায়, যেমন অর্থনৈতিক সংকট, সম্পর্কের জটিলতা বা সামাজিক চাপ, এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ি যে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ভুলে যাই। পবিত্র কোরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘কিন্তু যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দাঁড়ানোর ভয় করেছে এবং নিজের নফসকে অবৈধ কামনা থেকে বিরত রেখেছে, তার জন্য জান্নাতই হবে আশ্রয়।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৪০–৪১)
ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য পর্দা তুলে দিতেন এবং তাকে দেখাতেন, কীভাবে তিনি তার জন্য সবকিছু পরিচালনা করেন, তবে তার হৃদয় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় গলে যেত এবং কৃতজ্ঞতায় টুকরা টুকরা হয়ে যেত। তাই যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে দুঃখ করো না। হয়তো আল্লাহ তোমার দোয়ার কণ্ঠ শুনতে চান।’ (ইবন কাইয়্যিম, আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১২৮, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)
পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি।পরীক্ষা আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়। এটি আমাদের নম্র করে, আমাদের পাপমুক্তি ঘটায় এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বাড়ায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ায় যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে, তাকে জান্নাতে একবার ডুবিয়ে দেওয়া হবে এবং জিজ্ঞাসা করা হবে, ‘হে আদম সন্তান, তুমি কি কখনো কোনো কষ্ট দেখেছিলে? তুমি কি কখনো দুঃখ অনুভব করেছিলে?’ সে বলবে, ‘না, হে আমার রব! আমি কখনো কোনো কষ্ট দেখিনি, কখনো কোনো দুঃখ অনুভব করিনি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর–২৮০৭)
আরও পড়ুনবালকের ঈমানের পরীক্ষা ও বাদশাহের নির্মম পরিণতি০৪ মে ২০২৪আল্লাহর পরিকল্পনায় ভরসাপরীক্ষার সময় মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের পরিকল্পনার চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)
এই আয়াত আমাদের শেখায় যে কষ্টের পেছনে আল্লাহর একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য রয়েছে।
হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পরকালের জন্য চিন্তিত থাকে, আল্লাহ তার বিষয়গুলো সহজ করে দেবেন, তার হৃদয়ে তৃপ্তি দেবেন এবং দুনিয়া তার কাছে আসবে, যদিও সে তা অপছন্দ করে।’ (ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪১০৫)
পরীক্ষায় ধৈর্য ও দোয়াপরীক্ষার সময় ধৈর্য ধরা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩) দোয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করি এবং তাঁর রহমতের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করি।
ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে সিজদায় তোমার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করো এবং জেনে রাখো, আল্লাহ কখনো ভোলেন না।’ (আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১৩০, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)
আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না।জীবনের পরীক্ষাগুলো আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়, আমাদের হৃদয়কে বিশুদ্ধ করে এবং পরকালে জান্নাত লাভের পথ প্রশস্ত করে। দুনিয়ার কষ্ট ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা ও রহমত চিরস্থায়ী।
আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না; বরং নবীজি (সা.)–এর শিক্ষা ও ধৈর্য, দোয়া এবং আল্লাহর ওপর ভরসার মাধ্যমে আমরা জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় বিজয়ী হতে পারব।
আরও পড়ুনত্যাগের পরীক্ষা, সফলতার উদ্যাপন০১ আগস্ট ২০২০