যেখানে মুখ থুবড়ে পড়ে সব উন্নয়নের গল্প
Published: 2nd, June 2025 GMT
কমলগঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নের অধীন সীমান্তবর্তী পাঁচটি গ্রাম। মাত্র দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কের কারণে ওই এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে মূল সড়ক ব্যবস্থা থেকে। ৫৪ বছরের এই ভোগান্তি থেকে গ্রামবাসীকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি কোনো সরকারের আমলেই আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আলীনগর ইউনিয়নের আওতায় থাকা সীমান্তবর্তী পাঁচটি গ্রাম যোগীবিল, চেরারপার, লাংলিয়া, শিবপুর ও আলীনগর চা বাগান; যেখানে প্রায় সাত হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামবাসীর একমাত্র ভোগান্তি ওই দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। গত ৫৪ বছরেও এই সড়কে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় কাঁচা সড়কটি গ্রামবাসীর জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তারা বলছেন, দেশের সব উন্নয়নের গল্প তাদের কাছে মূল্যহীন। এসব গল্প এসে মুখ থুবড়ে পড়ে ওই কাঁচা সড়কে। স্বাধীনতার পর থেকে কোনো জনপ্রতিনিধি এ ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেননি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যায়ক্রমে সড়ক পাকাকরণের কাজ চলছে। সেখানেও কাজ করা হবে। এতদিন কেন করা হয়নি, তার সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর জানা নেই তাদের কারও।
সরেজমিনে আলীনগর ইউনিয়নের যোগীবিল গ্রাম ঘুরে বেহাল সড়কের কারণে মানুষের দুর্ভোগের কথা শোনা যায়। যোগীবিলের কনুবাবুর বাড়ি থেকে লাংলিয়া স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র পর্যন্ত এবং সদেই রাস্তার মধ্যবর্তী থেকে আদমপুর বাজারের প্রধান সড়ক পর্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে, যার পুরোটাই কাঁচা। ওই দুই কিলোমিটার আঁকাবাঁকা সড়কটির বেহালচিত্র দৃশ্যমান। এই এলাকার মানুষের যাতায়াতের বিকল্প পথ না থাকায় ভোগান্তির মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নেই।
স্থানীয়রা জানান, এ সড়কে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। একটু বৃষ্টিতে সড়কটি কাদাপানিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল চলাচলও কঠিন। হেঁটে চলারও উপায় থাকে না। রোগী বহনে জরুরি পরিবহন সেবা নিশ্চিত করা যায় না এমন পরিস্থিতির কারণে। এ ছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনেও পোহাতে হচ্ছে ব্যাপক দুর্ভোগ, যার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে অর্থনীতির চাকা মন্থর বলেও অভিযোগ অনেকের।
আলীনগর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নিজ উদ্যোগে একাধিকবার আবেদন করেছেন সড়ক উন্নয়নের জন্য। প্রশাসনের কেউ এটি গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। মানুষের এই ভোগান্তি যেন নিয়তি হয়ে গেছে।’
এদিকে সড়কটি পাকাকরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্জনা বেগম হেনা। তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে। রাস্তা পাকাকরণের আশ্বাস দিয়ে তারা জানিয়েছেন, দ্রুতই কাজ হবে। গ্রামের মানুষ সত্যিই খুব কষ্টে আছে। দ্রুত রাস্তাটি পাকা করা প্রয়োজন।’
উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্বে থাকা রাকিবুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি যে কাঁচা বা খারাপ অবস্থায় আছে, সেটি তাদের জানা নেই। তাই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তথ্য যেহেতু পেয়েছেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প থেকে হবিগঞ্জকে ‘বাদ দেওয়ার চেষ্টার’ প্রতিবাদ
হবিগঞ্জ-লাখাই-নাসিরনগর-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প থেকে হবিগঞ্জ অংশ বাদ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে—এমন অভিযোগে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে অংশ নেন হবিগঞ্জ সদর ও লাখাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের শতাধিক বাসিন্দা।
হবিগঞ্জ সদর ও লাখাইবাসীর ব্যানারে বেলা একটার দিকে এই মানববন্ধন শুরু হয়।
এতে বক্তারা বলেন, সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই-হবিগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৬৬১ দশমিক ৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু নাসিরনগর থেকে সরাইল পর্যন্ত সড়কটির প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হলেও হবিগঞ্জ অংশ প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। অথচ সড়কটির উন্নয়ন হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেট বিভাগের দূরত্ব কমবে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এতে যাতায়াত খরচ কমবে। এ ছাড়া সড়কের পাশে শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।
বক্তাদের দাবি, হবিগঞ্জ-লাখাই-নাসিরনগর-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়কটি হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জের কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যাতায়াত সহজ করেছে। প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি যানবাহন ও কয়েক লাখ মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। চার জেলার মধ্যে আর্থসামাজিক, কৃষি ও শিল্পসংশ্লিষ্ট যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়কের উন্নয়ন হলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সঙ্গে বিকল্প ও কার্যকর সংযোগ গড়ে তোলার মাধ্যমে আঞ্চলিক অর্থনীতি বেগবান হবে। পণ্য পরিবহন সহজ হবে। স্থানীয় জনগণের ভ্রমণ ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী হবে। সেই সঙ্গে সড়কে নিরাপত্তাও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সড়কটির নাসিরনগর-সরাইল অংশে কাজ শুরু হলেও হবিগঞ্জ-লাখাই অংশ প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়ার চেষ্টা চলছে। যদি প্রকল্পের হবিগঞ্জ-লাখাই অংশ প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে ঢাকার সঙ্গে সিলেট বিভাগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী, ইসলাম তরফদার ও এনামুল হক, হবিগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা রফিক, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান, হবিগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মফিজুর রহমান, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা লাভলী সুলতানা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহ রাজীব আহমেদ প্রমুখ।