কমলগঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নের অধীন সীমান্তবর্তী পাঁচটি গ্রাম। মাত্র দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কের কারণে ওই এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে মূল সড়ক ব্যবস্থা থেকে। ৫৪ বছরের এই ভোগান্তি থেকে গ্রামবাসীকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি কোনো সরকারের আমলেই আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আলীনগর ইউনিয়নের আওতায় থাকা সীমান্তবর্তী পাঁচটি গ্রাম যোগীবিল, চেরারপার, লাংলিয়া, শিবপুর ও আলীনগর চা বাগান; যেখানে প্রায় সাত হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামবাসীর একমাত্র ভোগান্তি ওই দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। গত ৫৪ বছরেও এই সড়কে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় কাঁচা সড়কটি গ্রামবাসীর জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তারা বলছেন, দেশের সব উন্নয়নের গল্প তাদের কাছে মূল্যহীন। এসব গল্প এসে মুখ থুবড়ে পড়ে ওই কাঁচা সড়কে। স্বাধীনতার পর থেকে কোনো জনপ্রতিনিধি এ ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেননি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যায়ক্রমে সড়ক পাকাকরণের কাজ চলছে। সেখানেও কাজ করা হবে। এতদিন কেন করা হয়নি, তার সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর জানা নেই তাদের কারও।
সরেজমিনে আলীনগর ইউনিয়নের যোগীবিল গ্রাম ঘুরে বেহাল সড়কের কারণে মানুষের দুর্ভোগের কথা শোনা যায়। যোগীবিলের কনুবাবুর বাড়ি থেকে লাংলিয়া স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র পর্যন্ত এবং সদেই রাস্তার মধ্যবর্তী থেকে আদমপুর বাজারের প্রধান সড়ক পর্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে, যার পুরোটাই কাঁচা। ওই দুই কিলোমিটার আঁকাবাঁকা সড়কটির বেহালচিত্র দৃশ্যমান। এই এলাকার মানুষের যাতায়াতের বিকল্প পথ না থাকায় ভোগান্তির মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নেই।

স্থানীয়রা জানান, এ সড়কে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। একটু বৃষ্টিতে সড়কটি কাদাপানিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল চলাচলও কঠিন। হেঁটে চলারও উপায় থাকে না। রোগী বহনে জরুরি পরিবহন সেবা নিশ্চিত করা যায় না এমন পরিস্থিতির কারণে। এ ছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনেও পোহাতে হচ্ছে ব্যাপক দুর্ভোগ, যার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে অর্থনীতির চাকা মন্থর বলেও অভিযোগ অনেকের।
আলীনগর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নিজ উদ্যোগে একাধিকবার আবেদন করেছেন সড়ক উন্নয়নের জন্য। প্রশাসনের কেউ এটি গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। মানুষের এই ভোগান্তি যেন নিয়তি হয়ে গেছে।’
এদিকে সড়কটি পাকাকরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্জনা বেগম হেনা। তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে। রাস্তা পাকাকরণের আশ্বাস দিয়ে তারা জানিয়েছেন, দ্রুতই কাজ হবে। গ্রামের মানুষ সত্যিই খুব কষ্টে আছে। দ্রুত রাস্তাটি পাকা করা প্রয়োজন।’
উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্বে থাকা রাকিবুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি যে কাঁচা বা খারাপ অবস্থায় আছে, সেটি তাদের জানা নেই। তাই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তথ্য যেহেতু পেয়েছেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘনার জোয়ারে সেতুর সংযোগ সড়কে ধস, দুই উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

মেঘনা নদীর জোয়ারের পানির তোড়ে সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে যাওয়ায় নোয়াখালীর হাতিয়া ও লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। হাতিয়া ও রামগতি উপজেলার মাঝামাঝি এই সেতুর অবস্থান। আর ধসে পড়া সংযোগ সড়কটি পড়েছে রামগতির তেগাছিয়া বাজারে। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে প্রবল জোয়ারে সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে পড়ে। এতে স্থানীয় স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ দুই উপজেলার বাসিন্দারা যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, সেতুর পশ্চিম পাশের সংযোগ সড়কের একাংশের মাটি সরে ধসে পড়েছে। বিষয়টি রামগতি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) জানানো হয়েছে। তবে বিকেল নাগাদ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ধসের কারণে সড়কটি দিয়ে যানবাহন, এমনকি মানুষজনের চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী তেগাছিয়া বাজারের খালের ওপর নির্মিত সেতু দিয়ে উভয় উপজেলার বাসিন্দারা তেগাছিয়া বাজারে যাতায়াত করেন। তেগাছিয়া বাজারের বড় অংশটি হাতিয়ার মধ্যে। আরেক অংশ রামগতি সীমানার ভেতরে। এ ছাড়া স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই সড়ক ও সেতু।

স্থানীয় টাংকির বাজারের ঘাটে আসা ইলিশ লক্ষ্মীপুর হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায় এই সড়ক দিয়ে। তাই সেতুর সড়ক বিধ্বস্ত হওয়ায় দুটি উপজেলার মাছ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রুত সংযোগ সড়ক মেরামত না করলে মূল সেতুই ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা ওই এলাকার বাসিন্দাদের।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রামগতি উপজেলা প্রকৌশলী স্নেহাল রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, হাতিয়া-রামগতি উপজেলা সড়কের তেগাছিয়া বাজারের খালের ওপর নির্মিত ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির সংযোগ সড়কের কিছু অংশ জোয়ারের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে বলে শুনেছেন। কিন্তু পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাঁকে কেউ জানায়নি। তিনি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলে দ্রুত যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেহাল সড়ক
  • মেঘনার জোয়ারে সেতুর সংযোগ সড়কে ধস, দুই উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন