নোবিপ্রবির মেডিকেল সেন্টারে যন্ত্র আছে, সেবা নেই
Published: 3rd, June 2025 GMT
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শহীদ মীর মুগ্ধ মেডিকেল সেন্টারে ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রায় কোটি টাকার মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল।
তবে ২ বছর ধরে ব্যবহার না হওয়ায় অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে যন্ত্রপাতিগুলো। সেবা পাচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের জুন মাসে ৯৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয়ে মেডিকেল সেন্টারের জন্য বায়োকেমিস্ট্রি এনালাইজার, ইএসআর এনালাইজার, হরমোন এনালাইজার, আধুনিক মাইক্রোস্কোপ, ইসিজি মেশিন, ক্যালোরিমিটার, ব্লাড ব্যাংক রেফ্রিজারেটর, হিমোগ্লোবিনোমিটারসহ ৩০ প্রকার বিভিন্ন পরীক্ষার যন্ত্রপাতি কেনা হয়। একই বছরের আগস্টে এসব সরঞ্জাম মেডিকেল সেন্টারে হস্তান্তর করা হলেও তা এখনো চালু হয়নি।
আরো পড়ুন:
হলের নাম নয়, মানে পরিবর্তন চান সিকৃবি শিক্ষার্থীরা
বিশ্বের সেরা সায়েন্স টিমের স্বীকৃতি ইউআইইউ মার্স রোভারের
বিগত প্রশাসনের কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার ড.
যন্ত্রপাতিগুলোর সাহায্যে শিক্ষার্থীদের রক্ত পরীক্ষা, ব্লাড সুগার, লিভার ও কিডনি ফাংশন, ইউরিন টেস্ট, ইসিজি, ম্যালেরিয়া ও প্রাথমিক হৃদরোগ নির্ণয় সম্ভব। তবে প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল না থাকায় যন্ত্রপাতিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সেবা প্রদানে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে সেবা বঞ্ছিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এমআইএস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সায়েম বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যার মধ্যে পাঁচটি আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্যাম্পাসে বসবাস করছেন। অথচ দীর্ঘ প্রায় ২ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রায় কোটি টাকার বেশি মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।”
তিনি বলেন, “এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলছে। আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে মেডিকেল সেন্টারকে কার্যকর করে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিশ্চিত করবে।”
সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ বলেন, “নোবিপ্রবির মেডিকেল সেন্টার যেন এক অভিভাবকহীন প্রতিষ্ঠান। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের এমন ধৈন্য দশা মনে হয় না আর কোনো প্রতিষ্ঠানে আছে। এখানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা। এর জন্য প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সামান্য সমস্যা নিয়ে গেলেও সেখানে সেবা পাচ্ছেন না তারা। এর ফলে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “আর মেডিকেল সেন্টারে যতটুকু ফ্যাসিলিটি আছে সেটারও সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। দক্ষ ব্যক্তি না থাকায় কোটি টাকার জিনিস ব্যবহারহীন হয়ে পড়ে আছে। যতটুকু জানি, ২০২৩ সালের দিকে প্রায় ১ কোটি টাকার চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর কোনো ব্যবহার আজ পর্যন্ত আমরা দেখিনি। তাহলে এত টাকা খরচ করে এসব সামগ্রী কিনার কি দরকার ছিল?”
তিনি আরো বলেন, “যদি ব্যবহারের জন্য দক্ষ জনবল না থাকে, এতে করে শিক্ষার্থী যেমন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি টাকার অপচয় রোধ করা যাচ্ছে না। প্রশাসন যদি এসব ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।”
এ বিষয়ে মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার ড. মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, “প্রায় ২ বছর আগে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হলেও দীর্ঘ সময় সেটআপ না হওয়ায় তা অকার্যকর অবস্থায় পড়ে ছিল। চলতি বছরের শুরুতে তিনজন ল্যাব টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং যন্ত্রপাতিগুলো স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে।”
তিনি বলেন, “প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল না থাকায় ল্যাবের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম এখনো শুরু করা যায়নি। আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতার কথা প্রশাসনকে জানিয়েছি, আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ ল্যাব চালু করতে পারব।”
নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল হক বলেন, “আমরা মেডিকেল সেন্টারের বিষয়ে অবগত আছি। মেডিকেল সেন্টারের ল্যাব পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করার জন্য কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু হবে।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ব প রব ব যবহ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।