নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শহীদ মীর মুগ্ধ মেডিকেল সেন্টারে ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রায় কোটি টাকার মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল।

তবে ২ বছর ধরে ব্যবহার না হওয়ায় অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে যন্ত্রপাতিগুলো। সেবা পাচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের জুন মাসে ৯৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয়ে মেডিকেল সেন্টারের জন্য বায়োকেমিস্ট্রি এনালাইজার, ইএসআর এনালাইজার, হরমোন এনালাইজার, আধুনিক মাইক্রোস্কোপ, ইসিজি মেশিন, ক্যালোরিমিটার, ব্লাড ব্যাংক রেফ্রিজারেটর, হিমোগ্লোবিনোমিটারসহ ৩০ প্রকার বিভিন্ন পরীক্ষার যন্ত্রপাতি কেনা হয়। একই বছরের আগস্টে এসব সরঞ্জাম মেডিকেল সেন্টারে হস্তান্তর করা হলেও তা এখনো চালু হয়নি।

আরো পড়ুন:

হলের নাম নয়, মানে পরিবর্তন চান সিকৃবি শিক্ষার্থীরা

বিশ্বের সেরা সায়েন্স টিমের স্বীকৃতি ইউআইইউ মার্স রোভারের

বিগত প্রশাসনের কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার ড.

নেওয়াজ বাহাদুরের দায়িত্বকালে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছিল। দীর্ঘদিন জনবল সংকটে অচল থাকলেও বর্তমানে টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

যন্ত্রপাতিগুলোর সাহায্যে শিক্ষার্থীদের রক্ত পরীক্ষা, ব্লাড সুগার, লিভার ও কিডনি ফাংশন, ইউরিন টেস্ট, ইসিজি, ম্যালেরিয়া ও প্রাথমিক হৃদরোগ নির্ণয় সম্ভব। তবে প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল না থাকায় যন্ত্রপাতিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সেবা প্রদানে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে সেবা বঞ্ছিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। 

এমআইএস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সায়েম বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যার মধ্যে পাঁচটি আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্যাম্পাসে বসবাস করছেন। অথচ দীর্ঘ প্রায় ২ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রায় কোটি টাকার বেশি মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।”

তিনি বলেন, “এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলছে। আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে মেডিকেল সেন্টারকে কার্যকর করে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিশ্চিত করবে।”

সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ বলেন, “নোবিপ্রবির মেডিকেল সেন্টার যেন এক অভিভাবকহীন প্রতিষ্ঠান। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের এমন ধৈন্য দশা মনে হয় না আর কোনো প্রতিষ্ঠানে আছে। এখানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা। এর জন্য প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সামান্য সমস্যা নিয়ে গেলেও সেখানে সেবা পাচ্ছেন না তারা। এর ফলে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

তিনি বলেন, “আর মেডিকেল সেন্টারে যতটুকু ফ্যাসিলিটি আছে সেটারও সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। দক্ষ ব্যক্তি না থাকায় কোটি টাকার জিনিস ব্যবহারহীন হয়ে পড়ে আছে। যতটুকু জানি, ২০২৩ সালের দিকে প্রায় ১ কোটি টাকার চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর কোনো ব্যবহার আজ পর্যন্ত আমরা দেখিনি। তাহলে এত টাকা খরচ করে এসব সামগ্রী কিনার কি দরকার ছিল?”

তিনি আরো বলেন, “যদি ব্যবহারের জন্য দক্ষ জনবল না থাকে, এতে করে শিক্ষার্থী যেমন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি টাকার অপচয় রোধ করা যাচ্ছে না। প্রশাসন যদি এসব ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।”

এ বিষয়ে মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার ড. মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, “প্রায় ২ বছর আগে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হলেও দীর্ঘ সময় সেটআপ না হওয়ায় তা অকার্যকর অবস্থায় পড়ে ছিল। চলতি বছরের শুরুতে তিনজন ল্যাব টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং যন্ত্রপাতিগুলো স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে।”

তিনি বলেন, “প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল না থাকায় ল্যাবের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম এখনো শুরু করা যায়নি। আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতার কথা প্রশাসনকে জানিয়েছি, আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ ল্যাব চালু করতে পারব।”

নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল হক বলেন, “আমরা মেডিকেল সেন্টারের বিষয়ে অবগত আছি। মেডিকেল সেন্টারের ল্যাব পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করার জন্য কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু হবে।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ব প রব ব যবহ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি। 

৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে। 

আরো পড়ুন:

দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে

সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা

২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা। 

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী। 

উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” 

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।” 

চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়। 

মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ