যে কোনো সময় ভাঙনে ধসে যেতে পারে কুশিয়ারা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। ভেসে যেতে পারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৫২ ব্যাটালিয়নের গজুকাটা ফাঁড়ি। এমন পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন ব্যাটালিয়ন সদস্যরা।

জানা গেছে, গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙনে নদী চলে এসেছে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী দুবাগ ইউনিয়নের বিজিবির গজুকাটা ফাঁড়ির ৫০ গজের মধ্যে। এতে তিনটি জায়গায় নদী রক্ষা বাঁধ বিলীন হয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করা শুরু করে। এক পর্যায়ে বিজিবি সদস্যরা বাঁশের আড়া দিয়ে সেখানে বস্তা ফেলে বানের পানি সামাল দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিজিবি সদস্যরা পালা করে পাহারা দিচ্ছেন বাঁধ এলাকা।

২৯ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বিয়ানীবাজারসহ আশাপাশের উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে বুধবার বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। 

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিজিবির গজুকাটা ফাঁড়ি থেকে নদীর দূরত্ব ৫০ গজেরও কমে নেমে এসেছে। ভাঙন ঠেকাতে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে গত বছর জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। নদীর তীরে জিও ব্যাগ ফেলা অংশেও নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে নদী রক্ষা বাঁধের তিনটি জায়গা বিলীন হওয়ায় বিজিবি বস্তা দিয়ে সাময়িক বাঁধ নির্মাণ করেছে।

গজুকাট ফাঁড়ির উত্তরের একটি ও পূর্ব পাশের দুটি জায়গায় নদীর স্রোতের বাঁক বদল করে ঘূর্ণির সৃষ্টি হওয়ায় ভাঙনের মাত্রা তীব্র হচ্ছে। এ অংশে নদীর পানির উচ্চতা ফাঁড়ির চেয়ে কমপক্ষে ৫ ফুট উঁচুতে রয়েছে।

বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়ন বিয়ানীবাজারের গজুকাটা বিওপির নায়েব সুবেদার হারুনুর রশিদ বলেন, বাঁধ ভেঙে গেলে ফাঁড়ি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক দশমিক শূন্য ৩ একর আয়তনে ফাঁড়ি রক্ষা করতে বিজিবি সদস্যরা ভেঙে পড়া বাঁধ মেরামত করে নাজুক পরিস্থিতি কোনো রকম রক্ষা করছেন এবং একই সঙ্গে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন।

ওই বিজিবি সদস্য জানান, নদীর পানির উল্টো স্রোতের তীব্রতার কারণে গজুকাটা ফাঁড়ি হুমকির মুখে রয়েছে। ফাঁড়ির অবস্থানের চেয়ে নদীর পানি অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ঝুঁকি যে কোনো সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ভাঙনরোধে গত বছর জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল; কিন্তু কাজ সম্পূর্ণ করা হয়নি।

গজুকাটা গ্রামের গৃহিণী সুফিয়া বেগম বলেন, বিয়ের ৩৬ বছর ধরে এ গ্রামে আছেন। এর আগে কোনোদিন এত ভয়ের মধ্যে রাত কাটেনি। গত তিন দিন থেকে পালাক্রমে সারারাত জেগে আছেন সবাই। যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে পানিতে ভেসে যাবে পুরো গ্রাম।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিজিবি সদস্যরা জানান, গজুকাটা ফাঁড়ি রক্ষা করতে হলে নদীর গভীরে ব্লক ও বস্তা ফেলতে হবে। এমন ঘূর্ণি স্রোত আগে দেখা যায়নি। বিজিবি সদস্যরা বাঁধের যে অংশগুলো সাময়িক মেরামত করেছেন, সেগুলো আবার ভাঙছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, কুশিয়ারা নদী দেখতে মঙ্গলবার তারা বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জ উপজেলা পরিদর্শন করেছেন। নদীতীরবর্তী স্থাপনা ও এলাকা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সাময়িকভাবে বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর অববাহিকায় পানি ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে সমস্যা থাকবে না।

বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়ন বিয়ানীবাজার সিইও মেহেদি হাসান বলেন, গজুকাটা বিওপি এলাকার নদীর ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ পরিদর্শন করেছেন তারা। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ র প সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ