হুমকির মুখে গজুকাটা ফাঁড়ি সতর্ক অবস্থায় বিজিবি
Published: 5th, June 2025 GMT
যে কোনো সময় ভাঙনে ধসে যেতে পারে কুশিয়ারা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। ভেসে যেতে পারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৫২ ব্যাটালিয়নের গজুকাটা ফাঁড়ি। এমন পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন ব্যাটালিয়ন সদস্যরা।
জানা গেছে, গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙনে নদী চলে এসেছে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী দুবাগ ইউনিয়নের বিজিবির গজুকাটা ফাঁড়ির ৫০ গজের মধ্যে। এতে তিনটি জায়গায় নদী রক্ষা বাঁধ বিলীন হয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করা শুরু করে। এক পর্যায়ে বিজিবি সদস্যরা বাঁশের আড়া দিয়ে সেখানে বস্তা ফেলে বানের পানি সামাল দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিজিবি সদস্যরা পালা করে পাহারা দিচ্ছেন বাঁধ এলাকা।
২৯ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বিয়ানীবাজারসহ আশাপাশের উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে বুধবার বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিজিবির গজুকাটা ফাঁড়ি থেকে নদীর দূরত্ব ৫০ গজেরও কমে নেমে এসেছে। ভাঙন ঠেকাতে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে গত বছর জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। নদীর তীরে জিও ব্যাগ ফেলা অংশেও নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে নদী রক্ষা বাঁধের তিনটি জায়গা বিলীন হওয়ায় বিজিবি বস্তা দিয়ে সাময়িক বাঁধ নির্মাণ করেছে।
গজুকাট ফাঁড়ির উত্তরের একটি ও পূর্ব পাশের দুটি জায়গায় নদীর স্রোতের বাঁক বদল করে ঘূর্ণির সৃষ্টি হওয়ায় ভাঙনের মাত্রা তীব্র হচ্ছে। এ অংশে নদীর পানির উচ্চতা ফাঁড়ির চেয়ে কমপক্ষে ৫ ফুট উঁচুতে রয়েছে।
বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়ন বিয়ানীবাজারের গজুকাটা বিওপির নায়েব সুবেদার হারুনুর রশিদ বলেন, বাঁধ ভেঙে গেলে ফাঁড়ি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক দশমিক শূন্য ৩ একর আয়তনে ফাঁড়ি রক্ষা করতে বিজিবি সদস্যরা ভেঙে পড়া বাঁধ মেরামত করে নাজুক পরিস্থিতি কোনো রকম রক্ষা করছেন এবং একই সঙ্গে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন।
ওই বিজিবি সদস্য জানান, নদীর পানির উল্টো স্রোতের তীব্রতার কারণে গজুকাটা ফাঁড়ি হুমকির মুখে রয়েছে। ফাঁড়ির অবস্থানের চেয়ে নদীর পানি অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ঝুঁকি যে কোনো সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ভাঙনরোধে গত বছর জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল; কিন্তু কাজ সম্পূর্ণ করা হয়নি।
গজুকাটা গ্রামের গৃহিণী সুফিয়া বেগম বলেন, বিয়ের ৩৬ বছর ধরে এ গ্রামে আছেন। এর আগে কোনোদিন এত ভয়ের মধ্যে রাত কাটেনি। গত তিন দিন থেকে পালাক্রমে সারারাত জেগে আছেন সবাই। যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে পানিতে ভেসে যাবে পুরো গ্রাম।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিজিবি সদস্যরা জানান, গজুকাটা ফাঁড়ি রক্ষা করতে হলে নদীর গভীরে ব্লক ও বস্তা ফেলতে হবে। এমন ঘূর্ণি স্রোত আগে দেখা যায়নি। বিজিবি সদস্যরা বাঁধের যে অংশগুলো সাময়িক মেরামত করেছেন, সেগুলো আবার ভাঙছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, কুশিয়ারা নদী দেখতে মঙ্গলবার তারা বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জ উপজেলা পরিদর্শন করেছেন। নদীতীরবর্তী স্থাপনা ও এলাকা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সাময়িকভাবে বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর অববাহিকায় পানি ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে সমস্যা থাকবে না।
বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়ন বিয়ানীবাজার সিইও মেহেদি হাসান বলেন, গজুকাটা বিওপি এলাকার নদীর ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ পরিদর্শন করেছেন তারা। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কালুরঘাটে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ৩: ট্রেনচালকসহ চারজন বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন
চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল দুমড়েমুচড়ে গিয়ে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় লোকোমাস্টারসহ (চালক) চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সুবক্তগীন এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী চারজনকে বরখাস্ত ও তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি জানান।
বরখাস্ত হওয়া চারজন হলেন—পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের দায়িত্ব পালনকারী গার্ড সোহেল রানা, লোকোমাস্টার গোলাম রসুল, সহকারী লোকোমাস্টার আমিন উল্লাহ এবং অস্থায়ী গেটকিপার (টিএলআর) মাহবুব।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেসের ধাক্কায় কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল দুমড়েমুচড়ে যায়। এ ঘটনায় দুই বছরের শিশু আয়েশাসহ তিনজন নিহত হন। আহত হন আরও তিনজন।
আরও পড়ুন‘আমার মেয়েটা কী দোষ করেছে’, মেয়ের রক্তাক্ত দেহ নিয়ে বাবার আহাজারি১০ ঘণ্টা আগেএ বিষয়ে জানালিহাট স্টেশনমাস্টার নেজাম উদ্দিন ওই রাতেই প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসে সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে। রাত ১০টায় কালুরঘাট সেতু এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় সেতুর ওপর কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল ছিল। সেতুর ওপর একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অন্য গাড়িগুলো আটকে ছিল।
এদিকে রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন—বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) সাজিদ হাসান, বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোসেন ও বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা।
তদন্ত কমিটিকে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী।