মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অভিনব কৌশলে মাছ ধরছেন জেলেরা। কুয়াকাটা-বরিশাল মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস ও যানবাহনে এসব মাছ ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মাছ ধরার এই নিষেধাজ্ঞার সুফল না পাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনার পেছনে তাঁরা অনেক শ্রম দিয়েছেন, আন্দোলন করেছেন। সরকার তাঁদের দাবি মেনে নিষেধাজ্ঞার সময় ৫৮ দিন করেছে। কিন্তু অনেক ট্রলারমালিক ও জেলে নিষেধাজ্ঞা মানছেন না।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরা, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। চলতি বছর বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ৬৫ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করা হয়। সময়সীমা কমিয়ে ৫৮ দিন করার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার সময় পাশের দেশ ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে পটুয়াখালীর মহিপুর, আলীপুর, কুয়াকাটা ও বরগুনার পাথরঘাটা, তালতলীর অসাধু ব্যবসায়ীরা সাগরে ট্রলার পাঠিয়ে জেলেদের দিয়ে মাছ ধরাচ্ছেন।

পাথরঘাটার অন্তত ১০ জন জেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবার তাঁরা ভিন্ন কৌশলে সাগরে যাচ্ছেন। সমুদ্রগামী ট্রলারগুলো দূরে নোঙর করে ইঞ্জিনচালিত ছোট ট্রলারে তাঁরা বরফ ও বাজার–সওদা সংগ্রহ করেন। এতে কেউ সন্দেহ করেন না। কারণ, এসব ছোট ট্রলার নদ-নদীতে মাছ ধরে। এরপর এসব রসদ বড় ট্রলারে পৌঁছানোর পর তাঁরা সাগরে যান। আবার সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরার পর একইভাবে ছোট ট্রলারে করে পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্যকেন্দ্রে নদ–নদীর মাছ হিসেবে বিক্রি করা হয়। আবার অনেক ট্রলার খুলনায় গিয়ে মাছ বিক্রি করে।

তালতলীর জেলেরা জানান, তালতলীর ফকিরহাট বন্দর বঙ্গোপসাগর তীরের একটি প্রসিদ্ধ মৎস্যবন্দর। এখানে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রলার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় গভীর সাগর ও সাগরমোহনায় মাছ ধরেন জেলেরা। এসব মাছ বন্দরে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করে ফকিরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসে তোলা হয়।

ফকিরহাটের জেলে সুলতান মিয়া, রফেজ উদ্দিন ও আবুল বাশার জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাঁদের সাগরে পাঠান বলেই তাঁরা যান। আর সাগরে মাছ ধরতে কেউ তাঁদের বাধাও দেন না। সবাই তো মাছ ধরেন।

তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ফকিরহাটের বরফকল বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আর মাছ পাচার হচ্ছে না।’ তবে স্থানীয় জেলেরা বলছেন, অবস্থা আগেও যেমন ছিল, এখনো তেমনই আছে।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মো.

আনিসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের ব্যাপারে তাঁদের কোনো ঢিলেমি নেই। তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু জনবলসংকট থাকায় সব কাজ তাঁদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সড়কপথে মাছ পাচার রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৫৮ দ ন ত লতল ব যবস মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ