সন্ধ্যার আগে যেন ঢল নামল মানুষের। গমগম করছে পতেঙ্গা সৈকতের পাড়। কেউ হাঁটছেন খালি পায়ে, ঢেউয়ের গা ঘেঁষে; কেউ বসে আছেন পাথরে—চোখে ঢেউ আর আকাশের নীল বিস্তার। ঈদুল আজহার তৃতীয় দিন আজ সোমবার বিকেলে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেল।
টুকটুকে লাল রঙের বেলুন, মুখে ফুচকার ঝাল—শিশুরাই যেন উৎসবকে সঙ্গী করে এসেছিল। দেখা গেল, ছোট ছোট পায়ে শিশুরা দৌড়াচ্ছে বালুর ওপর, কেউ পা ডুবিয়ে ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে, কেউ আবার বাবার কাঁধে চেপে সমুদ্র দেখছে।
নগরের পোশাক কারখানায় কাজ করা দম্পতি মোহাম্মদ ফারুক ও নাসরিন আক্তার এসেছিলেন তাঁদের ছেলে সাফোয়ানকে নিয়ে। নাসরিন বলছিলেন, ‘সারা বছর ছেলের দিকে ভালোভাবে তাকানোরও সময় পাই না। সারা দিন কাজে চলে যায়। ঈদের ছুটি বলে আজ ওকে নিয়ে একটু ঘুরতে এলাম। অবশ্য গতকালও চিড়িয়াখানায় গিয়েছি। ছেলে তো খুশিতে দৌড়াদৌড়ি করছে।’
চার বান্ধবী সেলফি তুলছিলেন গোধূলির আলোয় ভিজে। তাঁরা এসেছেন ফয়’স লেক ঘুরে, সন্ধ্যায় যাবেন কর্ণফুলী নদীতে নৌকাভ্রমণে। জান্নাতুন নাঈম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ঈদের ছুটি শেষে পড়াশোনার ব্যস্ততা শুরু হবে। তাই মনভরে ঘোরাঘুরি করে নিচ্ছেন।
সৈকতের পাথরে বসে কেউ কেউ গিটারে সুর তুলেছেন। সেই দলে থাকা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মোস্তাকিম বললেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে এমন একটা বিকেল না কাটালে ঈদের মানেই থাকে না। গিটার বাজিয়ে, সমুদ্র দেখে, গল্প করে সময় কাটছে।’
সৈকতে বিক্রি হচ্ছিল ঝিনুকের মালা, কাঠের নৌকা, রঙিন পুঁতির গয়না, বিভিন্ন পোশাক। আবদুর রহমান নামের এক দোকানি হাসতে হাসতে বললেন, ‘ঈদের সময়েই তো আসল বিক্রি।’ সৈকতের সঙ্গে লাগোয়া আউটার রিং রোড ধরে এগোলে দূর থেকে দেখা যায়, জেলেদের মাছধরা নৌকা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। পাখি উড়ছে। মোড়ে মোড়ে চা-নাশতার দোকানেও ভিড়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।