চট্টগ্রাম নগরের দুটি হাসপাতালকে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত মেমন হাসপাতাল-২। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে আলাদা ওয়ার্ড।

দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অনুষ্ঠিত জরুরি প্রস্তুতি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। সভায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রামে গত এক সপ্তাহে চারজন করোনা রোগী শনাক্ত হন। এর মধ্যে একজনের করোনা শনাক্ত হয় শেষ ২৪ ঘণ্টায়। গতকাল মঙ্গলবার এপিক হেলথ কেয়ার রোগনির্ণয়কেন্দ্রে করোনা পরীক্ষার জন্য তাঁর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলে তাঁর করোনা পজিটিভ আসে।

‘করোনা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। সবাইকে ভয়মুক্ত থাকতে হবে। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন অনেক বেশি অভিজ্ঞ। গতবারের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আগেরবার যেভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হয়েছে, এবারও সেভাবে মোকাবিলা করা হবে’শাহাদাত হোসেন, মেয়র, চট্টগ্রাম, সিটি করপোরেশন

আজকের সভায় সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন জানান, চারটি ল্যাবে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরটি-পিসিআর ল্যাব থাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) করোনা পরীক্ষা হবে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি সার্ভিস সেন্টার চালু করা হবে। এই কেন্দ্র থেকে মানুষ করোনা রোগের বিষয়ে তথ্য জানতে পারবেন।

প্রস্তুতি সভায় মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘করোনা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। সবাইকে ভয়মুক্ত থাকতে হবে। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন অনেক বেশি অভিজ্ঞ। গতবারের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আগেরবার যেভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হয়েছে, এবারও সেভাবে মোকাবিলা করা হবে।’

সভায় মেয়র জানান, করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোয় জনবল ও যন্ত্রপাতির সংকট ও স্বল্পতা রয়েছে কি না, তা যাচাই করছেন। এগুলো পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসক-নার্স এনে ঘাটতি পূরণ করা হবে। আর হাসপাতালগুলোয় প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি দেওয়া হবে।

চট্টগ্রামে গত এক সপ্তাহে চারজন করোনা রোগী শনাক্ত হন। এর মধ্যে একজনের করোনা শনাক্ত হয় শেষ ২৪ ঘণ্টায়। গতকাল মঙ্গলবার এপিক হেলথ কেয়ার রোগনির্ণয়কেন্দ্রে করোনা পরীক্ষার জন্য তাঁর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলে তাঁর করোনা পজিটিভ আসে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বলেন, চমেক হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আগেই আলাদা ওয়ার্ড ছিল। পরে তা ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়। এখন তা আবার করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হবে। ওয়ার্ডটিতে করোনা রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। একসঙ্গে ৫০টি সাধারণ শয্যা ও ১০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। ইতিমধ্যে ওয়ার্ডটি সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তিনি জানান, করোনা রোগীদের পরীক্ষার জন্য পাঁচ হাজার কিটের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। তা কাল-পরশুর মধ্যে চলে আসবে। আর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার জন্য উপজেলা পর্যায় থেকে স্বাস্থ্য সহকারীদের চমেক হাসপাতালে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্স নিয়োজিত করা হয়েছে।

প্রস্তুতি সভায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্তমানে ৮০ হাজার ভ্যাকসিন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আকরাম হোসেন বলেন, জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ১৫টি সাধারণ শয্যা ও ৫টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। করোনা রোগীদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা রয়েছে। আর যন্ত্রপাতির বিষয়টি দ্রুত ঠিক করা হবে। প্রস্তুতি সভায় আরও বক্তব্য দেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অং সুই প্রু মারমা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো.

ইমাম হোসেন প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র জন য র গ দ র জন য প রস ত ত র জন য প র কর ন

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে