বিশ্বে ১৩ কোটি ৮০ লাখ শিশু শ্রমে যুক্ত
Published: 12th, June 2025 GMT
চলতি শতকের শুরুর তুলনায় শিশুশ্রম প্রায় ৫০ শতাংশ কমলেও তা নির্মূলের লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ব। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক প্রচেষ্টার ফলে শিশুশ্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও ২০২৪ সালে প্রায় ১৩ কোটি ৮০ লাখ শিশু শ্রমে যুক্ত ছিল। এর মধ্যে ৫ কোটি ৪০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত, যা তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। এ উপলক্ষে বুধবার ‘চাইল্ড লেবার: গ্লোবাল এস্টিমেটস ২০২৪, ট্রেন্ডস অ্যান্ড দ্য রোড ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। শিশুশ্রম নিরসনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জিত হলেও প্রতিবেদনে কঠিন বাস্তবতা উঠে এসেছে। এখনও লাখ লাখ শিশু শিক্ষা, খেলা এবং বেড়ে ওঠার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
প্রতিবেদনে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শিশুশ্রম কমার চিত্র দেখা গেলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সে রকম নয়। ২০১৩ সালে যেখানে দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৭ শতাংশে (প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু)। কিন্তু একই সময়ে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শ্রমে যুক্ত থাকার সামগ্রিক হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশে। ক্ষতিকর কাজে যুক্ত বৃহত্তর শিশুশ্রমের হার তুলনামূলক স্থিতিশীল। ২০১৩ সালে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে ২০২২ সালে।
জানা যায়, গত দুই দশকে বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বাড়ায় কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্যে পৌঁছতে সঠিক গতিতে নেই বাংলাদেশ। শ্রমে যুক্ত অধিকাংশ শিশু কাজ করছে অনানুষ্ঠানিক খাতে। সেখানে তারা দীর্ঘ সময় ধরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এ বাস্তবতা পরিবর্তনে বাংলাদেশে জরুরি প্রয়োজন স্থায়ী, দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই প্রচেষ্টা।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, এ বৈশ্বিক প্রতিবেদন এবং বাংলাদেশে পাওয়া তথ্য আমাদের উৎসাহ জোগায়। সংকটের সমাধান করতে উদ্বুদ্ধ করে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হ্রাসে অগ্রগতি আমরা স্বীকার করি। তবে সামগ্রিক শিশুশ্রমের হার একই রকম থাকায় এটি স্পষ্ট, আমাদের আরও অনেক কিছু করার রয়েছে। একটি শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এর মাধ্যমে পরিবারগুলোকে সহায়তা করতে হবে। সব শিশুর জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার সর্বজনীন সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সমাজসেবা, বিশেষ করে শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। শিশুদের স্থান স্কুল ও খেলার মাঠে; কর্মক্ষেত্রে নয়। তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি জরুরি।
তিনি জানান, শিশুশ্রমের কারণ দারিদ্র্য এবং মানসম্পন্ন শিক্ষার অভাব। ফলে পরিবারগুলো সন্তানদের কাজে পাঠাতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে বঞ্চনার চক্র বংশপরম্পরায় স্থায়ী হয়।
বিশ্বব্যাপী তথ্য অনুযায়ী, কৃষি খাত এখনও শিশুশ্রমের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র। শিশুশ্রমের ৬১ শতাংশ ঘটে এই খাতে। এর পর রয়েছে সেবা খাত (২৭ শতাংশ), যেমন গৃহস্থালি কাজ বা বাজারে পণ্য বিক্রি। শিল্প খাতে রয়েছে (১৩ শতাংশ) শিশুশ্রম।
বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবসে আইএলও বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুঞ্জন ডালাকোটি জানান, আইএলও কনভেনশন নম্বর ১৩৮ ও ১৮২ বাস্তবায়ন করতে হবে। এর পাশাপাশি জাতীয় আইনগত কাঠামোর মাধ্যমে শিশুশ্রম নিরসন করতে হবে।
তিনি বলেন, অর্থপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করতে হলে কমিউনিটি, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক সংগঠন, সুশীল সমাজ, এনজিও ও সংবাদমাধ্যমের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শিশুশ্রম থাকলে সেখানে যথাযথ শ্রমের পরিবেশ থাকে না। তিনি প্রতিটি শিশুর জন্য নিরাপদ, শিক্ষার সুযোগ-সংবলিত শৈশব নিশ্চিত করার সামগ্রিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
ইউনিসেফ ও আইএলও অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে সরকার ও অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে। সুপারিশগুলো হলো– অসহায় পরিবারগুলোর জন্য জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করতে হবে। এর মধ্যে সর্বজনীন শিশু ভাতার মতো সামাজিক সুরক্ষা নেটওয়ার্ক অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের চিহ্নিত করে তাদের জন্য সর্বজনীন মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও সংকটাপন্ন এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক ও তরুণদের জন্য সম্মানজনক কাজ ও উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শোষণ বন্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সরবরাহ শৃঙ্খলার সর্বত্র শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে আইন প্রয়োগ ও ব্যবসায়িক জবাবদিহি জোরদার করতে হবে।
শিশুশ্রম কমার বর্তমান গতি ধীর। ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম সম্পূর্ণভাবে নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত করত ন শ চ ত কর স রক ষ র জন য ন করত ব যবস দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/চন্দন/এস