কুষ্টিয়ার কুমারখালীর একটি ক্যাফে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের গড়ের বাড়ি কাঞ্চনপুর এলাকায় অবস্থিত তালতলা ক্যাফে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জন্য একই ইউনিয়নের এক তরুণ ও তার সহযোগীকে দায়ী করেছেন ক্যাফেটির চার উদ্যোক্তা। তারা সবাই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। 
স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমারখালী-ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের গড়ের বাড়ি কাঞ্চনপুর এলাকায় সড়কের দুই পাশে প্রায় পাঁচ শতাধিক তালগাছ আছে। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন দূর-দূরান্তের শত শত দর্শনার্থী আসেন। বছরখানেক আগে কাঞ্চনপুর গ্রামের চার তরুণ ১৩ শতাংশ জমিতে তালতলা ক্যাফেটি গড়ে তোলেন। এখানে নির্ধারিত ফি দিয়ে নৌকাভ্রমণ, দোলনা ও নাগরদোলায় চড়া যায়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে আড্ডা ও চা-কফি পানের জন্য ৮-১০টি খড়ের ঘর আছে। 
ক্যাফেটির অংশীদার শাহ রুবায়েত ইসলাম রোহান ঢাকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তিনি জানিয়েছেন, বছরখানেক আগে একই গ্রামের বাসিন্দা কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র স্বাধীন আহমেদ, রিয়াদ ও কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র সজিব আহমেদের সঙ্গে মিলে তিনি ওই ব্যবসা শুরু করেন। সারাবছর তারা চারজনের সঙ্গে আরও তিন তরুণ কর্মী কাজ করেন। উৎসবের সময় লোকসমাগম বাড়লে আরও পাঁচজনকে চুক্তিতে কাজে নেন। পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠানটি আরও বড় করার পরিকল্পনা ছিল। 
রোহানের অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একই ইউনিয়নের জংগলী গ্রামের শফি মণ্ডলের ছেলে সজল ১০-১২ জনকে নিয়ে ক্যাফেতে আসেন। তারা টিকিট ছাড়াই দোলনা ও নৌকায় চড়েন। এ সময় টাকা চাইলে কর্মীদের সঙ্গে কয়েক দফায় তাদের তর্কাতর্কি হয়। রাত ১২টার দিকে ক্যাফেটি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান। রাত আড়াইটার দিকে তারা সেখানে অগ্নিসংযোগের সংবাদ পান। 
বুধবার বিকেলে সেখানে গিয়ে ক্যাফের প্রধান ঘরটির অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। সেখানে পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া গ্যাস সিলিন্ডার, চুলা, ওভেনসহ আসবাবপত্র ও অন্যান্য পণ্য। এখান থেকে ফিরে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। কুষ্টিয়া শহর থেকে পরিবার নিয়ে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দর্শনার্থী বলেন, রাতে কারা যেন ক্যাফেতে আগুন লাগিয়েছে। তাই ফিরে যাচ্ছেন।
ক্যাফের নৌকাচালক নিশান এ সময় বলেন, ‘সন্ধ্যায় কয়েকজনের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। রাতে ঘুমিয়েছিলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি, আগুন জ্বলছে। দু’জনকে মোটরসাইকেলে করে জংগলীর দিকে চলে যেতে দেখি। তাদের চিনতে পারিনি।’
বক্তব্য জানতে সজল ও তাঁর বাবা শফি মণ্ডলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি। চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান তুষার বলেন, তিনি ফেসবুকে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি জানতে পেরেছেন। যারা জড়িত তাদের শাস্তি চান।
সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জানিয়ে কুমারখালী থানার ওসি মো.

সোলাইমান শেখ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তের পর ব্যবস্থা নেবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাননি। এদিকে ক্যাফেটির উদ্যোক্তা চার বন্ধু যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারেন এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দেন ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ 

রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।

কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।

ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।

রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’ 

কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। 

আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ