ঈদের ছুটি শেষে খুলেছে কুয়েট, ক্লাস শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি
Published: 15th, June 2025 GMT
ঈদের ছুটি শেষে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) আবার খুললেও অচলাবস্থা কাটেনি। উপাচার্য না থাকা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ নানা কারণে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর নিশ্চয়তা না থাকায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে সেশনজটের নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৪ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ছুটি থাকায় বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। আজ রোববার ক্যাম্পাস খুললেও শিক্ষকেরা ক্লাসে না ফেরায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধই আছে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে ৭৫ দিন পর গত ৪ মে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও ক্লাস-পরীক্ষা সেই ফেব্রুয়ারি থেকেই বন্ধ আছে।
সংঘর্ষের ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। পরে গত ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক মো.
৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (মাউশি) ওয়েবসাইটে কুয়েটে উপাচার্য পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আগামী ২৬ জুন বিকেল পাঁচটার মধ্যে সচিবালয়ে মাউশির সিনিয়র সচিব বরাবর শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য সব কাগজপত্রসহ আবেদন করতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
শিক্ষক সমিতি জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য শিক্ষক সমিতি বা শিক্ষকদের যে দাবি ছিল, এখনো তাঁরা সেই অবস্থানেই আছেন।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. সাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো আগের অবস্থানেই আছি। আজ আমাদের একটা সভা ছিল। চারটি অনুষদের চারজন ডিন, কুয়েটের তিনটি ইনস্টিটিউটের তিনজন পরিচালক ও রেজিস্ট্রার—এই আটজনের শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে কথা বলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পর আমরা একটা সাধারণ সভা করব। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
রোববার দুপুরে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাস অনেকটাই নীরব। বিভাগগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাপ্তরিক কাজ করছেন। আষাঢ়ের প্রথম দিনে কয়েকজন শিক্ষার্থী শহীদ মিনারের বেদির ওপর বসে বৃষ্টিতে আনন্দ করছেন।
কুয়েটের ১৯ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ভর্তি হয়ে প্রায় দেড় বছরের সেশনজট পোহাতে হয়েছে। এখন আবার একই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রায় চার মাস হয়ে যাচ্ছে। এখনো ক্লাসে ফিরতে পারেননি তাঁরা। দ্রুত তাঁরা ক্লাসে ফিরতে চান।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের মো. ওবায়দুল্লাহ ফেসবুকে লিখেছেন, প্রায় চার মাস ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ। ক্লাস শুরু করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধা তো নেই। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। এখনো তা স্থবির হয়ে আছে। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কাছে বিনীত অনুরোধ, যেন দ্রুত ক্লাসে ফেরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।...সবকিছু বিবেচনায় আপাতত একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করুন। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারির বিচার, শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচারসহ সবকিছু সুষ্ঠুভাবে হোক।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের আর্থিক ক্ষমতা উপাচার্যের হাতে। উপাচার্যের স্বাক্ষর ছাড়া বেতন-বিল পাস হয় না। এ কারণে বন্ধ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ হাজার ১০০ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর মে মাসের বেতন-ভাতা এবং ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা। উপাচার্যের স্বাক্ষরের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্য না থাকায় সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি না থাকায় বেতন–ভাতা, বিল সবই আটকে আছে। হল সব খোলা আছে। তবে ঈদের আগে শিক্ষার্থী যারা গেছে, তারা বুঝতে পারছে যে খোলার পরপরই ক্যাম্পাসে ক্লাস হচ্ছে না। তাই এখন শিক্ষার্থীরাও তেমন ক্যাম্পাসে নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা প্রতিনিধিদল অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেলে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে যাবেন। বিশেষ করে জুন মাস হওয়ায় বরাদ্দ হওয়া অর্থ এই মাসের মধ্যে খরচ করতে না পারলে আর্থিক জটিলতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য অন্তর্বর্তীকালীন হলেও একজন উপাচার্য দরকার।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের
ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।